চিররহস্যময়ীর কুয়াশা ভেদ করে

‘সাংবাদিক জীবনের গৃহস্থগিরি করতে গিয়ে বার বার মনে হয়েছে অবিচুয়ারি লেখার সুযোগ সাপ্তাহিক শ্মশান যাত্রার মতো।...ব্যক্তিগত শোকগাথা লেখা মানে মর্গে বডিটাকে উল্টে-পাল্টে ময়না তদন্তের মতো দেখা।’ তাঁর সাম্প্রতিকতম বই ‘তারাদের শেষ চিঠি’র ভূমিকায় লিখছেন সাংবাদিক গৌতম ভট্টাচার্য। সঙ্গে সুচিত্রা সেনের শোকগাথার সংক্ষেপিত অংশ।‘সাংবাদিক জীবনের গৃহস্থগিরি করতে গিয়ে বার বার মনে হয়েছে অবিচুয়ারি লেখার সুযোগ সাপ্তাহিক শ্মশান যাত্রার মতো।...ব্যক্তিগত শোকগাথা লেখা মানে মর্গে বডিটাকে উল্টে-পাল্টে ময়না তদন্তের মতো দেখা।’ তাঁর সাম্প্রতিকতম বই ‘তারাদের শেষ চিঠি’র ভূমিকায় লিখছেন সাংবাদিক গৌতম ভট্টাচার্য। সঙ্গে সুচিত্রা সেনের শোকগাথার সংক্ষেপিত অংশ।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০১:১০
Share:

সুচিত্রার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে রাইমা, মুনমুন এবং রিয়া (বাঁ দিক থেকে)।—ফাইল চিত্র।

‘‘এটা তার মানে সুচিত্রা সেনের ফ্ল্যাট? এটাই দেখাতে এনেছেন মুনমুন?’’

Advertisement

তাঁর মায়ের মৃত্যুর পর দেওয়া প্রথম ইন্টারভিউ শেষ করে উঠে মুনমুন সেন বললেন, ‘‘একটা জিনিস দেখবেন? এখন লিখতে পারবেন না কিন্তু। অ্যান্ড পিকচার ইজ আউট অব দ্য কোয়েশ্চেন।’’

বুঝলাম তাঁর মা-র কোনও দুষ্প্রাপ্য ছবি বা বিশেষ স্মৃতিচিহ্ন জড়িত শাড়িটাড়ি হবে।

Advertisement

বললেন, ‘‘চলুন’’। ওঁর ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে ঠিক পাশের ফ্ল্যাটে ঢুকলাম আমরা। বোঝা গেল জিনিসটা যাই হোক, এখানে রয়েছে।

ছোট ড্রইংরুম। তেমন কিছু আসবাব নেই দামি টেবলটা ছাড়া। চোদ্দ বাই চোদ্দ হবে ঘরটা। সুচিত্রার ছবি ঝুলছে দেওয়ালে। এই ছবি দুটোই কি তাহলে বিশাল ইঙ্গিতবাহী? একটা ‘সপ্তপদী’-র। অন্যটা বোধহয় বাড়িতে তোলা।

মুনমুন ছবির দিকে তাকিয়ে মাথায় হাত ঠেকালেন। ‘‘ওঁর জীবিত অবস্থাতে টাঙাতে দেননি। বলেছিলেন, আমি চলে যাওয়ার পরে তোমার যা ইচ্ছে তাই কোরো।’’

বোঝা গেল ছবিগুলোর লোকেশন সম্প্রতি বদলেছে। তার মানে এর সঙ্গে কোনও নস্ট্যালজিয়া জড়িত নেই। তাহলে কী দেখাতে মুনমুন আনলেন আমাকে?

সামনে ছিমছাম গোছানো সোফা। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মুনমুন বললেন, ‘‘পাশের ঘরটা খুব ছোট। একটা ছোট ডাইনিং টেবল ধরে। কোনায় দরজা বন্ধ ঘরটা ঠাকুরঘর। এই ড্রইংরুমটাতেই সারাদিন কেটে যেত ওঁর।’’

এখানে সারাদিন কেটে যেত মানে- মাথায় কেউ তীব্র হাতুড়ির ঘা মারল। অন্ধকারের মধ্যে হঠাৎ যেন জ্বলে উঠল আলোর ফুলকি।

এটা তার মানে সুচিত্রা সেনের ফ্ল্যাট? এটাই দেখাতে এনেছেন মুনমুন?

কিন্তু ওঁর ফ্ল্যাটটা তো এই ফ্লোরের কোনার দিকের সবচেয়ে শেষ ঘরটা ছিল বলে জানি। যে ফ্ল্যাট চিক দিয়ে দিন-রাত সব সময় ঢাকা। চিরকাল জেনে এসেছি ওই চিক দেওয়া ঘরটাই দীর্ঘ এত বছর দুই বাংলার রহস্যময়তাকে লালন করেছে। কোনার দিকে সবচেয়ে শেষ ঘর ইচ্ছাকৃত বেছে নেওয়া যাতে অবগুণ্ঠন অবিচলিত থাকায় আরও সাহায্য আসে। কোনার ফ্ল্যাটটার লোকেশন এমন যে বাকি পৃথিবীর সঙ্গে একটা সম্মানজনক দূরত্ব জাস্ট বিনা বাক্যব্যয়ে তৈরি হয়ে রয়েছে। যখনই মুনমুন বা রাইমার সঙ্গে এ বাড়িতে দেখা করতে এসেছি, গেটওয়েতে দাঁড়িয়ে চিক দেওয়া ঘরটাকে লক্ষ্য করেছি। মনে হয়েছে হায় এর পর্দা কি কখনও উঠবে না?

মুনমুন তো সেই অ্যাদ্দিনকার ধারণাকে খারিজ করে দিচ্ছেন। এত বছরের বিশ্বাসের জামানত বাজেয়াপ্ত হচ্ছে ওঁর দেওয়া তথ্যে। ‘‘মা এই ফ্ল্যাটটাতেই থাকতেন। যবে থেকে এ বাড়িতে আমরা এসেছি।’’

কিন্তু কী করে সেটা সম্ভব? গায়ে লাগানো দুটো ফ্ল্যাট। মুনমুনেরটা থ্রি সি। আর এটা নিশ্চয়ই থ্রি ডি। মুনমুনের ফ্ল্যাটের বাইরে কোনও নেমপ্লেটও নেই। অথচ বাড়িতে এত ভিজিটর আসে। হতেই তো পারে সে ভুল করে এই ফ্ল্যাটটায় বেল বাজাল। তখন তো আপনার মা-কে বার হতে হত।

‘‘হত না। মা খুলতেন না দরজা,’’ হেঁয়ালি-সহ বললেন মুনমুন। একটা পর্যায়ের পর আর জিজ্ঞেস করা যায় না। বলা যায় না বেল শুনে যদি দরজা না খোলেন তাহলে আপনারা এমন অবিরত যাতায়াত করতেন কী করে? এই বাড়িতে আনন্দপ্লাস-এর ফটোশুট হওয়ার সময়ে মনে আছে রাইমা কিছুক্ষণের জন্য অদৃশ্য হয়ে গেছিলেন। তারপর এসে বলেছিলেন, ‘‘আম্মাকে দেখিয়ে এলাম।’’

আজ এই হতভম্ব অবস্থাতেই মনে হচ্ছে ডুপ্লিকেট চাবির অবধারিত গল্প ছিল। কিন্তু তার চেয়েও বড় প্রহেলিকা অজ্ঞাতবাসে থাকতে যে প্রবাদপ্রতিম মহানায়িকা এমন আগ্রহী, তিনি জমজমাট লোকালয়ের এত কাছে থাকবেন কেন? মুনমুন রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার আগে পর্যন্ত ভরপুর সোশ্যাল লাইফ উপভোগ করেছেন। পার্টি-উৎসব-নেমন্তন্ন লেগেই থেকেছে ওপাশের ফ্ল্যাটে। কত মানুষজন এসেছে। তারা একটু তৎপর হলেই তো দেখে ফেলত। তাছাড়া সবার আগে আরও একটা ধাঁধা, তাহলে কি অজ্ঞাতবাসকে একটা মজার চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতেন সুচিত্রা? খুব এনজয় করতেন এই ঔৎসুক্য? এই লোকেশন কিন্তু তেমনই বলছে। টাচ মি টাচ মি নট।

সে দিন সুচিত্রার একেবারে বিলাসবর্জিত ফ্ল্যাটে দাঁড়িয়ে মনে আসছিল পরস্পরবিরোধী নানান ভাবনা। অনেক কুয়াশা। আর তার জাল কেটে সমাধান বিশেষ নেই। হয়তো এমন কুয়াশাই রেখে যেতে চেয়েছিলেন তিনি। ৫২/৪/১ বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের বাড়ির ছাদেই হয় সুচিত্রার শ্রাদ্ধ। কোথাও কোনও বাড়িটাড়ি ভাড়া করে নয়। সুচিত্রা সেনের শ্রাদ্ধ অনুপাতে জনসংখ্যা খুব কম। টেনেটুনে একশো। ডেকরেটর খুব যত্ন করে প্যান্ডেলটা করেছিল। কোনায় একটা রেকর্ডার রাখা। যেখান থেকে গান বাজছে ‘আঁধি’, ‘হসপিট্যাল’ আর ‘সপ্তপদী’র। ছাদের উপর সাজানো সুন্দর একটা ঘর। ভরত দেববর্মা এবং পরিবারের সান্ধ্য রিল্যাক্সেশন মনে হল এ ঘরেই। কিন্তু তার চেয়েও দর্শনীয়, ছাদের উপর ছোট একটা মন্দির।

নিশ্চয়ই মহানায়িকার কথা ভেবেই করা। শেষ দিকের অনেকগুলো বছর যে ধর্মকর্মে তিনি তীব্র আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন তা সিনেমামোদী মাত্রেই জানেন। তিনি কি এখানে পুজো আচ্চায় বসতেন?

উত্তরটা শুনে অবাক লাগল। মন্দিরে নাকি কখনও যাননি। ছাদেই আসলে যাওয়া হয়নি তাঁর। চারদিক খোলা। প্রতিবেশীদের বাড়ি থেকে ওপেন ভিউ। হয়তো সে জন্য যাননি। কিন্তু এটা তো হওয়ারই কথা। তাহলে মন্দির এত যত্নের সঙ্গে করা হল কেন?

সেই কুয়াশা।

সুচিত্রা সেন মারা যাওয়ার আগে অন্তত চার থেকে পাঁচ বার গুজবে তিনি মারা গিয়েছিলেন। কলকাতাবাসী মাত্রে জানেন, কিছু দিন পর পর একটা অদ্ভুত গুজব গোটা শহরে ছড়িয়ে পড়ত যে একটু আগে তিনি প্রয়াত হয়েছেন। সেন পরিবার এর সঙ্গে খুব পরিচিত। কারণ কনফার্মেশনের জন্য কেউ না কেউ ফোন করত আর ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করত, কী বাড়ির সবাই ভাল তো? এরকমই এক পশলা গুজব এমন ভয়ঙ্কর আকার নেয় যে রাইমাকে ফোন করতে বাধ্য হই।

রাইমা খুব সুইট। ফোন ধরে বললেন, ‘‘সি ইজ ফাইন।’’ আমি গভীর লজ্জিত হয়ে পড়েছি যে পেশার দায়ে কত কিছু না আমাদের করতে হয়। রাইমার কোনও সমস্যা নেই। ‘‘আরে এটা বোধ হয় কুড়ি নম্বর কল হল।’’

বললেন, ‘‘মা-কে করতে সবাই চট করে সাহস পায় না। আমাদের করে।’’ বুঝলাম ডিনায়াল দিতে দিতে নাতনিদেরও অভ্যেস হয়ে গিয়েছে এই ক’বছরে।

সুচিত্রার এরকম এক হাসপাতাল যাত্রার পর তীব্র গুজব রটে গেল যে অবস্থা ভাল নয়। আমার মনে একটা ভ্রমাত্মক সন্দেহ ছিল যে সুচিত্রাকে খুব দ্রুত পোড়ানোর ব্যবস্থা করবে পরিবার। স্টাইলটা শম্ভু মিত্রের সৎকারের মতো হবে। কেউ জানার আগে দাহ। মৃতদেহ কোথাও রাখা তো হবেই না। উল্টে শহরের প্রধান শ্মশানগুলো এড়িয়ে শহরতলির কোথাও পোড়ানো হবে।

সন্দেহের কারণও ছিল। সুচিত্রার শেষ জন্মদিন পালনের আগে আমরা আনন্দ প্লাস-এ ওঁকে নিয়ে একটা বিশেষ সংখ্যা করি। যথেষ্ট জমকালো সংখ্যা। শুনেছি সেটা সামান্য উল্টে পাল্টে দেখে মহানায়িকা নিজেও নাকি প্রসন্ন হয়েছিলেন। সেই সংখ্যার জন্য দেওয়া সাক্ষাৎকারে মুনমুন বলেন, ‘‘আমার মা-র সঙ্গে দু’ একটা ব্যাপারে গোপন কথাবার্তা হয়েছে। মা-র এমন কিছু নির্দেশ আছে যা সাধারণ মা-মেয়ের সম্পর্ক কল্পনাও করতে পারবে না।’’

পরে শুনেছি নির্দেশ ছিল দুটো। এক, আমায় অন্য কোথাও নিয়ে যেও না। যত তাড়াতাড়ি পারো আমার দাহ প্রক্রিয়ার ব্যবস্থা কোরো। যাতে নতুন গন্তব্যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রওনা হয়ে যেতে পারি। দুই, আমার চেহারাটা যেন জনসমক্ষে প্রকাশ না পায়। সেটা দেখো। কেউ যেন আমার ছবি তুলতে না পারে।

দুটো নির্দেশই মুনমুন অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। দ্বিতীয়টা পালন করা কার্যত অসম্ভব ছিল। রাজ্য সরকারের এমন সর্বাত্মক সাহায্য এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে দাঁড়িয়ে থেকে শেষকৃত্য পরিচালনা না করলে কিছুতেই সম্ভব ছিন না। কাঠের আগুনে শোয়াবার আগে আধার থেকে যখন বার করা হচ্ছে সুচিত্রার বিদায়ী শরীর, পিছনের টিলাতে দাঁড়িয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে টিভি ক্যামেরাম্যান আর প্রিন্ট ফটোগ্রাফার্স। তাক করে রয়েছে। মুখটা সামান্য পাবে কী শাটার টিপবে।

পুলিশ ফোর্স এমন ভাবে পিছনের দিকটা গার্ড করে দাঁড়াল যে লোকে লোকারণ্য হয়ে গেল। টেলিস্কোপিক ক্যামেরাতেও সুচিত্রার দেহ ক্যাপচার করার উপায় নেই। এমনকী শবদেহের সঙ্গে আমরা যে চল্লিশ-পঞ্চাশজন শ্মশানে গিয়েছিলাম তাদেরও খুব কম অংশ মুখটা দেখতে পেয়েছে। বডি বার হওয়ার পর যা ঘটল তা নিশ্চয়ই পূর্বপরিকল্পিত হবে। নইলে এত দ্রুত ওখানে গিয়ে কীভাবে করা সম্ভব?

শবদেহ ঘিরে ফাস্ট সার্কেলে পরিবারের ঘনিষ্ঠতম বৃত্ত। মুখ্যমন্ত্রী। আর নগরপাল। এঁরা মিলে শবদেহের চারপাশে। তার ধার দিয়ে দ্বিতীয় বৃত্ত করতে গেলেই নিউ এম্পায়ার-লাইট হাউসের প্রাক্তন মালিক ম্যান্টোস তীব্র চিৎকার করছেন। মুনমুনদের পুনে নিবাসী ব্যবসায়ী বন্ধু সামলে রাখছেন প্রথম বৃত্তের বাইরেটা। দ্বিতীয় বৃত্ত থেকে এই সময় গলাখাঁকারি দিয়ে এক বন্ধু আমায় ডাকলেন, ‘‘দেখে নাও ফাঁক দিয়ে। এ জিনিস আর জীবনে পাবে না।’’

দ্রুত উঁকি মারলাম। প্রথমেই নজরে এল টিকোলো নাক আর অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত চেহারার মুখমণ্ডল। অবশ্যই ইনি বৃদ্ধা। কিন্তু চেহারায় এমন আভিজাত্য রয়েছে। আর লাবণ্যও। যে আলাদা করে চোখে পড়বে। পরমুহূর্তে আর কিছু দেখা গেল না। মানুষ দিয়ে ফের শবদেহের দিকে তাকাবার দৃষ্টিপথটা ঢেকে দেওয়া হল। শেষ হয়ে গেল একটা অবিস্মরণীয় বৃত্তের। মুনমুন কেবল হা-হুতাশ করে যাচ্ছেন, ‘‘একটা সাধারণ কাশি সারাতে মা-কে নার্সিং হোমে পাঠিয়েছিলাম, আর তাঁকে কিনা ফেরাতে পারলাম না।’’

শ্মশানে দাঁড়িয়ে মনে পড়ছিল, মাস আটেক আগে কেমন ভুল খবর রটেছিল যে সুচিত্রা মারা গিয়েছেন আর বডি রাত্তিরের জন্য বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের বাড়িতে নিয়ে আসা হচ্ছে। যদি সত্যি হয়, রাতের কাগজে অবশ্যই ধরাতে হবে। কিন্তু কে দেবে তার কনফার্মেশন?

আমি আর আনন্দবাজারের বার্তা সম্পাদক হীরক বন্দ্যোপাধ্যায় গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম মাঝ রাত্তিরে বাড়ির বাইরে। অভাবনীয় অপেক্ষা। রাত্তির বারোটার পর তখন বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের মতো বড় রাস্তাতেও গাড়ির সংখ্যা কম। আলো কমে এসেছে ল্যাম্প পোস্টের। এক ঘণ্টারও বেশি দাঁড়িয়ে রয়েছি নীরব অপেক্ষায়। একবার ফুটপাথে। একবার তাঁর বাড়িতে যেতে হলে যে সরু গলিটা ধরতে হয় তার মাঝামাঝি। এর বেশি গেলে সিকিউরিটি আটকাবে। রাত গহন থেকে গহনতর হচ্ছে। শুনতে পাচ্ছি পাতা ঝরার টুপটুপ শব্দ। কিন্তু একেবারেই বুঝে উঠতে পারছি না যাঁর জন্য এমন অন্তহীন অপেক্ষা, আদৌ তিনি এ বাড়িতে? সত্যি বডি এনে রাখা হয়েছে? নাকি হাসপাতালে? ডাক্তার সুব্রত মৈত্র অত রাত্তিরে ফোন ধরছেন না বলে জানাও যাচ্ছে না বেলভিউতে থাকলে কী অবস্থায় রয়েছেন? আর কোনও কাগজ টাগজের গাড়ি নেই। বাড়ির সামনে এতক্ষণ ধরে কোনও মুভমেন্ট নেই মানে নির্ঘাত টিপ অফ-টা ভুল ছিল। আমি আর হীরক গাড়িতে উঠে পড়লাম।

সে দিন বাড়ি ফেরার পথে বারবার মনে হয়েছে ভবিষ্যৎ সময় সুচিত্রা সেন রহস্য ভেদ না করতে পারার জন্য সমকালীন কলকাতা মিডিয়াকে খাটো চোখে দেখতে পারে। ভাবতে পারে এক জন এত বিখ্যাত মহিলা লোকচক্ষুর অন্তরালে শহরের অভিজাত লোকেশনে পঁয়ত্রিশ বছর কাটিয়ে গেলেন। বেলুড় মঠ গেলেন। এ সি মার্কেট গেলেন মাঝেমধ্যে। কেউ একটা ইন্টারভিউ দূরে থাক, ছবি অবধি পেল না।

তাহলে কীসের ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং, কোথায় তার বড়াই করার মতো পাপারাজিৎ?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন