কৌশিক। ছবি: অর্পিতা প্রামাণিক
বাঙালির ড্রয়িংরুমে তাঁর আসন মোটামুটি পাকা। তবে প্রচারের আলো থেকে সচেতন ভাবেই দূরত্ব বজায় রাখেন অভিনেতা কৌশিক রায়। এ দিকে ‘পুণ্যিপুকুর’, ‘কুসুমদোলা’, ‘ফাগুন বউ’-এর মতো পর পর হিট ধারাবাহিকে মুখ্য চরিত্রে রয়েছেন তিনি। প্রচার থেকে দূরে কেন? ‘‘আসলে অভিনেতা হিসেবে নিজেকে সীমিত বলে মনে করি। তাই ব্যক্তি কৌশিককে বেশি লোকে চিনুক, সেটা চাই না,’’ জড়োসড়ো কণ্ঠে বললেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে পিআর না করে কাজ পেতে অসুবিধে হয় না? ‘‘এক সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছিলাম। তবে ভাল পারি না বলেই থাকিনি। ভবিষ্যতে আসতেও পারি।’’
বহরমপুরের কৌশিক পড়াশোনার জন্য কলকাতায় এসেছিলেন ২০০৪ সালে। মার্কেটিংয়ের চাকরির জন্য দিল্লিতেও ছিলেন বেশ কিছু দিন। ‘‘যখন চাকরিতে আর মন বসাতে পারছি না, তখন ঠিক করলাম পুরোদমে থিয়েটার করব। সোহাগদির (সেন) সঙ্গে যোগাযোগ করি। ইতিমধ্যে আমার এমবিএ কলেজের শিক্ষিকা সোমাদি, যিনি রনিদার (রজতাভ দত্ত) স্ত্রী, রাজদার (চক্রবর্তী) কাছে আমার কথা বলেন। তখন আমার উপর বিশ্বাস রেখে ‘জোশ’ নামে একটি ধারাবাহিকে মুখ্য চরিত্রে কাস্ট করেন রাজদা। তখন নিজেরই ভরসা ছিল না নিজের উপর। আর পিছনে তাকাতে হয়নি,’’ নস্ট্যালজিয়ার ছোঁয়া তাঁর কণ্ঠে।
চাপদাড়ি, কোঁকড়ানো চুলের টিপিক্যাল লুকের জন্য একই ধরনের চরিত্রে কাস্ট করা হতো তাঁকে। ‘‘নিজেকে চরিত্রাভিনেতা হিসেবে দেখি। এর সুবিধে আছে, অসুবিধেও। এক সময়ে নকশাল, বুদ্ধিজীবী, এমন চরিত্রেই আমাকে বেশি নেওয়া হতো। সেই ভাবমূর্তি ছেড়ে বেরোনোর চেষ্টাও করেছি।’’ লীনা গঙ্গোপাধ্যায় ও শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘মাটি’ ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা যাবে তাঁকে।
এই শহর এখন তাঁর পরিচয়ের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে। স্ত্রী পোর্শিয়া, দেড় বছরের কন্যা ও চার বছরের পোষ্য লিমকাকে নিয়ে তাঁর সংসার। ‘‘অবসরের পরিকল্পনা কলকাতায় নেই। এক দিন ঠিক ফিরে যাব,’’ মন্তব্য তাঁর।
‘ফাগুন বউ’ ধারাবাহিকে তাঁর বিপরীতে বিক্রম-ঐন্দ্রিলার হিট জুটি। চাপ কি একটু বেশি? ‘‘আমি কিন্তু ওদের বিপরীতে নয়, ওদের সঙ্গেই আছি,’’ বলেই জোরে হেসে উঠলেন। কাজের ফাঁকে গান শুনতে ও পাহাড়ে ঘুরতে ভালবাসেন।
সাক্ষাৎকারের মাঝে আক্ষেপের সুরে কৌশিক বলছিলেন, ‘‘কিছু না করতে পেরেই অভিনয়ে আসা।’’ এখনও কি সেই আক্ষেপ আছে? ‘‘এই কাজটা করে এখন সবচেয়ে বেশি আনন্দ পাই,’’ পরিপূর্ণতার ছোঁয়া তাঁর কণ্ঠে।