রণবীর
প্র: অ্যান্টি-হিরোর চরিত্রে অভিনয় করার সিদ্ধান্তটা কি ভেবেচিন্তেই নিয়েছিলেন?
উ: প্রাথমিক ভাবে আমাকে যে মেটেরিয়াল দেওয়া হয়েছিল, তাতে বুঝতে পেরেছিলাম যে, চরিত্রটার জন্য ভিতরের অনেক কালো দিক ফুটিয়ে তুলতে হবে। এটাও দেখলাম যে, অ্যান্টি-হিরো এবং খলচরিত্র... দুইয়েই অভিনয় করার স্বাধীনতা অনেক। নিজের মতো অনেক কিছু করার থাকে।
প্র: আপনার চরিত্রগুলোর মধ্যে যে অদ্ভুত খামখেয়ালিপনা, পাগলামো... আসে কী ভাবে?
উ: সত্যি কথা বলতে, এটা ঠিক তিনটে পর্যায়ে হয়। প্রথমত, লেখক লেখার পাশাপাশি সেই স্বাধীনতাটা অভিনেতাকে দিয়ে রাখেন। দ্বিতীয় ভাগে, একজন পরিচালক একই ভাবে এই সুযোগটা আমায় দেন। আর সবশেষে আমি যখন নিজে অভিনয় করছি, তখন চরিত্রটায় সমস্ত কিছু উজাড় করে দিই। চেষ্টা করি, চরিত্রটা যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে। ছোট ছোট খুঁটিনাটি, আদবকায়দা যোগ করি। তাতে চরিত্রটা আরও বেশি রঙিন, অন্য ধরনের হয়ে ওঠে। সেই চরিত্র দেখে দর্শক বিনোদন পান। এটাই তো সবচেয়ে বড় কথা।
প্র: আপনার কি মনে হয়, ভাল অভিনেতা হওয়ার জন্য অ্যাক্টিং স্কুল জরুরি? না কি প্রতিভা যথেষ্ট?
উ: দেখুন, অভিনয় শেখানো যায় না। অ্যাক্টিং স্কুলগুলো অভিনয় করতে সাহায্য করতে পারে। আরও ভাল ভাবে বুঝিয়ে বললে, স্কুলগুলো থেকে কিছু অভ্যেস শেখা যায়। সমস্ত জড়তা কাটিয়ে সকলের সামনে নিজের নানা রকম সূক্ষ্ম অনুভূতি প্রকাশ করতে পারার যে অভ্যেস, সেই সুযোগটা অ্যাক্টিং স্কুলগুলো করে দেয়। কিন্তু অভিনয় করতে করতে একজন অভিনেতা নিজের পদ্ধতি তৈরি করতে থাকেন। সেই পদ্ধতির মাধ্যমেই তো এক জন অভিনেতা আর এক জনের চেয়ে স্বতন্ত্র হয়ে ওঠেন। আর সেটা পুরোপুরি আসে প্রতিভা থেকেই।
প্র: সাফল্য আসার সঙ্গে সঙ্গে কি প্রিয়জনদের সঙ্গে সম্পর্কেও বদল আসে?
উ: আমি ভাগ্যবান যে, আমার প্রিয় বন্ধুকে পেয়েছি একদম ছোটবেলা থেকে। আমার হাতেগোনা কয়েক জন বন্ধু আছে। তারা প্রত্যেকে খুব কাছ থেকে দেখেছে, আমি কী ভাবে নিজের স্বপ্নের পিছনে ছুটেছি, কী ভাবে অভিনেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছি। প্রথমে তো স্ট্রাগল, তার পর এসেছে সাফল্য, খ্যাতি। আমার কেরিয়ার আর ব্যক্তিগত জীবনের সমস্ত চড়াই-উতরাইয়ের সাক্ষী তারা। সেখানে কেউ আমাকে বিচার করে না। আর মারাত্মক ভাবে আগলে রাখে। একটা সময়ে কাজ করতে করতে প্রচণ্ড অবসেসড হয়ে পড়েছিলাম। আবার গত দু’-তিন বছরে আমি ভীষণ রকমের পরিবারকেন্দ্রিক। আমি আসলে ‘হোম-বাডি’। খেয়াল রাখি, পরিবারের সময়ে যেন কোনও ফাঁক না পড়ে। মা–বাবা-বোন... আমার খামখেয়ালিপনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানিয়ে তো নিয়েছে! আমাকে প্রশ্রয় দিয়েছে। আমার পেশার সৃজনশীল দিকের কথা ভেবে অফুরান ছাড় দিয়েছে। সেই সম্পর্কগুলোয় বদল আসে নাকি!
আরও পড়ুন: ‘প্রেমিক নয় তথাগত আমার বেস্টফ্রেন্ড’
প্র: কোন চরিত্রটা করে নিজেকে প্রায় নিঃশেষ বলে মনে হয়েছে?
উ: আলাউদ্দিন খিলজি। এ রকম একটা অন্ধকারময়, লোভী চরিত্র! ছবির বেশ বড় অংশ পরপর শুট করতে হয়েছিল। সেটা মানসিক, শারীরিক আর আবেগগত দিক থেকে ভীষণ রকম নিংড়ে নেওয়ার মতো। আর শুটিংয়ে দেরি হয়েছিল। নানা বাহ্যিক চাপও ছিল। ফলে সব কিছু মিলিয়ে কাজটা সহজ ছিল না।
প্র: অনুপ্রেরণা পান কীসে?
উ: আশি ও নব্বই দশকের হিন্দি ছবিগুলো থেকে।
প্র: জীবনের সবচেয়ে বড় ভয় কী?
উ: আমি কোনও কিছু ভয় পাই না।
প্র: আপনার করা সবচেয়ে বড় পাগলামোটা কী?
উ: এক এক জনের কাছে তো এর মাত্রাটা এক এক রকম! আমার কাছে যা পাগলামো, তা কি আদৌ অন্যের কাছে পাগলামো? কে জানে!
প্র: কোন চরিত্রটা চাইলে আরও ভাল করতে পারতেন?
উ: ‘লেডিজ ভার্সাস রিকি বহেল’-এর রিকি।
প্র: আপনার দেখা সেরা ফ্যাশনিস্তা?
উ: লেডি গাগা।
প্র: মনখারাপ হলে কোন ছবি দেখেন?
উ: ‘ব্যান্ড বাজা বরাত’।
প্র: কার কার সঙ্গে কাজ করতে ভীষণ ইচ্ছে করে?
উ: রাজকুমার হিরানি, এস এস রাজামৌলি।
প্র: রাগ হয়?
উ: ভীষণ। যখনই দেখি, ভুলভাল অ্যাটিটিউড, কেউ কাউকে অহেতুক ছোট করছে কিংবা ঠিকঠাক মূল্যায়ন হচ্ছে না! তখনই ভীষণ রেগে যাই।
প্র: রণবীর সিংহকে যদি এক কথায় বোঝাতে চান?
উ: (খানিক ভেবে এবং গুনগুনিয়ে) ব্লেসড।