কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়
প্র: সকাল সাতটায় শ্যুটিং থেকে বাড়ি ফিরছেন। আবার দুপুরেই সেটে হাজির। চাপ লাগছে না?
উ: একদম নয়। আমি ব্যস্ত। এটাই সবচেয়ে ভাল জিনিস আমার কাছে। মাথাটাও ব্যস্ত আছে। ফাঁকা মাথা মানে শয়তানের বাসা! তাই না!
প্র: শয়তানি করার দুর্নাম তো আপনার নেই!
উ: ও ভাবে বলিনি। কোনও কাজ না থাকলে ল্যাদ খেয়েই জীবন কাটিয়ে দিই। মাঝেমধ্যে অবাক লাগে, কতটা সময় আমি স্রেফ আ়ড্ডা দিয়ে অলস ভাবে কাটিয়েছি! প্রায় ১০ বছর তো বটেই। মাঝে কিছু ছবি করেছি। টেলিভিশনে ‘কাদের কুলের বউ’, ‘বিগ বস’...তবে চূড়ান্ত ব্যস্ততা বলতে যা বোঝায়, সেটা আমার জীবনে ছিল না।
প্র: বিয়ে করার পরেই হঠাৎ ‘ব্যস্ত’ হওয়ার সিদ্ধান্ত কেন?
উ: নিজেকে এক জায়গা থেকে উপড়ে নিয়ে যাওয়া সহজ নয়। অন্য দিকে মন দেওয়াটা জরুরি হয়ে পড়েছিল। আমার স্বামীও ব্যস্ত। দু’জনের একসঙ্গে কাটানোর সময় নেই, তা নয়। সেটাও ভাগ করে নিতে হয় যেহেতু এক সন্তান আছে। বিবাহিত জীবন নিয়ে ব্যস্ত থাকতে গিয়ে নিজের কাজের জায়গাটা স্যাক্রিফাইস করার কোনও মানে নেই। বিয়ে মানেই রিটায়ারমেন্ট পলিসি নয়। তার ওপর প্রযোজককে বিয়ে করেছি মানেই, প্রভিডেন্ট ফান্ড-সহ সারা জীবনের শান্তি, এমনটাও নয়। আমরা যারা খেটে খেতে অভ্যস্ত, তারা বসে বসে খাওয়াটা মেনে নিতে পারি না। অভিনেতাদের জীবনে আত্মবিশ্বাসই সব। কোথাও মনে হচ্ছিল, নিজেকে যাচিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন পড়েছে।
প্র: ‘অন্দরমহল’-এর পরমেশ্বরীর সঙ্গে নিজেকে কোথাও মেলাতে পারছেন?
উ: পারছি। তবে আমি পরমেশ্বরীর মতো মহান নই। কিছু মিল তো আছেই। আমার স্বামীরও আগের পক্ষের ছেলে আছে। আমাকে অবশ্য এটা কেউ বলেনি যে, বাচ্চার দেখভাল করার জন্য এই বিয়ে। পরমেশ্বরী ঠিক যে রাস্তাতে হাঁটছে, সেটা দিয়ে আমি না হাঁটলেও ওর ক্রাইসিসগুলো যে সত্যি, সেটা জানি। একটা বয়সের পর বিয়ে হলে অনেক আপস করতে হয়। এই জায়গায় হয়তো আমার সঙ্গে মিল আছে। দেখেছি, একটা মেয়ে ভাল থাকলে বাকি চারটে মেয়ের সেটা ভাল নাও লাগতে পারে। নিজেদের অজান্তেই তারা মানসিক ভাবে সমস্যা তৈরি করে। আমি তাতে খারাপ দেখি না। এটা হয়তো তাদের বেঁচে থাকার একটা উপায়।
আরও পড়ুন: রাজনৈতিক অস্থিরতা, নগ্ন দৃশ্যে বিতর্কে কমরেড
প্র: এটাও কি প্রত্যক্ষ করেছেন?
উ: করেছি তো। পেশাগত জীবনে করেছি। ব্যক্তিগত জীবনে এখনও করছি। কেউ অপমান করলে এখন আর গায়ে লাগে না। যদি না করে, তা হলেই মনে হয়, আরে অপমান করল না তো! লোকে গালমন্দ করবে না, প্যাঁচ কষবে না, হয় নাকি! এখন অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। জানি স্রোতের বিরুদ্ধে গিয়ে কী ভাবে সাঁতার কেটে পৌঁছতে হয়। তবে মেয়েরাই শুধু কূটকচালি করে না। অনেক পুরুষও এগুলো করে আনন্দ পায়।
প্র: পরমেশ্বরীকে আদব-কায়দা, ইংরেজি না জানা নিয়ে খোঁটা শুনতে হচ্ছে, এমনটা কি এখনও ঘটে বলে আপনার মনে হয়?
উ: আমি তো স্কুলে ৪০ শতাংশ নম্বর পাওয়া মেয়েদের দেখেছি। সেই রকম মেয়ে এখনও আছে। আমাদের প্রজন্মে এমন অনেক মেয়ে রয়েছে যাদের একমাত্র লক্ষ্য, সংসার করা। বাংলা মাধ্যমের কতজন দারুণ ইংরেজি বলতে পারে? আমি নিজে বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করেছি। মাধ্যমিকের পর সব বিষয় ইংরেজিতে পড়া শুরু করেছি। কোনও পার্টিতে গেলে প্রথম দিকে জড়োসড়ো লাগত। পরে নিজেকে গ্রুম করেছি। ইংরেজি বলতে না পারা লজ্জার নয়। কিন্তু আমাদের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে, ইংরেজি না জানলে স্টেটাস নেই। ইংরেজি জানা, চাকরি করা মেয়েদের কি সমস্যা হয় না? আসলে, নরম মাটি পেলেই মানুষ আঁচড়াবে। সেটা শ্বশুরবাড়ি হোক বা বাপের বা়ড়ি!
প্র: ‘এক আকাশে নীচে’ যখন করেছেন, তখনকার চেয়ে এখন ছোট পরদার ইন্ডাস্ট্রিতে কতটা তফাত বুঝছেন?
উ: অনেকটা...টেলিভিশনের ব্যাপ্তি এখন কত দূর পৌঁছে গিয়েছে, ভাবা যায় না! ‘অন্দরমহল’-এর প্রোমো চলার সময়ে দার্জিলিং গিয়ে রাস্তায় স্বাভাবিক ভাবে হাঁটতে পারছি না। আমি নিজে সিরিয়াল করে বড় হয়েছি। পরিচিতি পেয়েছি। এই জনপ্রিয়তা তখন ছিল না। ইন্ডাস্ট্রির ভিতরেও অনেক বদল হয়েছে। আমরা আগে এই সিস্টেমে কাজ করিনি। মেকিংয়ের প্রসেসটা বদলে গিয়েছে। আগে আলাদা চ্যানেলের জন্য দু’-তিনটে করে ধারাবাহিক করেছি। ‘রাত ভোর বৃষ্টি’, ‘কখনও মেঘ কখনও বৃষ্টি’। দুটোই লিড চরিত্র। দুটোই হিট। তখন এই সব কনট্র্যাক্ট ছিল না।
প্র: কোনও সিনেমা করছেন না?
উ: নীতীশ রায়ের ‘বুদ্ধু-ভুতুম’ করলাম। কৌশিক করের ‘পর্ণমোচী’ আছে। ‘বিলু রাক্ষস’-এর রিলিজ সামনে। ছবিটা খুব ভাল। জানি না চলবে কি না, বা চলতে দেবে কি না।
প্র: এটা তো বিতর্কিত মন্তব্য!
উ: জানি। আমি বরাবরই সোজাসাপটা। মনোপলি যে চলছে সেটা অস্বীকার করার তো কোনও জায়গা নেই। আর টুইটারে একে অপরের পিঠ চাপড়ানোটা অসহ্য! এখানেও আসলে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। (একটু থেমে) লোকে বলবে মেগা করছি বলেই খুব পাকাপাকা কথা বলছি (হাসি)!
প্র: বিয়ের পর কী কী বদল এল?
উ: যাযাবর হয়ে গিয়েছি। ব্যাগ কাঁধে ঘুরে বেড়াই। কোনটা আসল আস্তানা, সেটাই বুঝতে পারি না! বিয়ে বড়সড় বদল নিয়ে আসে। একটা জিনিস বুঝতে পারি না, মেয়েদেরই কেন শুধু বদলাতে হয়! যেন অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই শুরু হয়ে যায়। ভূমিকম্পের মতো মনে হয়। এমন একটা প্রাথমিক পর্যায়, যা প্রবল নাড়িয়ে দেয়!
প্র: আপনার কি এখন নড়াচড়ার পর্যায়টা চলছে?
উ: একদম। কে জানে হয়তো ধীরে ধীরে ঠিক হবে।