‘সিনেমা করব কী, কলকাতায় লোকের ইগো হ্যান্ডেল করতেই সময় চলে যায়’

পরিচালক কিউ এখন গোয়ার বাসিন্দা। সেখান থেকেই কথা বললেন তাঁর সিনেমা নিয়েদশটা ছবি করার পরে এখনও কলকাতায় নিজের প্রতিভার প্রমাণ দিতে হয়। আর জেনারেলি বলতে পারি, কলকাতায় থাকার বিরাট প্রেশারটা আর নিতে চাই না

Advertisement

অন্তরা মজুমদার

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share:

প্র: কলকাতা ছেড়ে চলে যাওয়ার কোনও বিশেষ কারণ আছে?

Advertisement

উ: বিভিন্ন কারণ আছে। আমি কলকাতায় প্রায় বছর দশেক ছিলাম। অনেক কাজ করেছি সেই সময়টায়। তবে সব কিছুর মতো আমার ওখানে থাকার মেয়াদেরও প্রাকৃতিক সমাপ্তি এসে গিয়েছিল।

প্র: গোয়ায় থাকছেন এখন। ওখানে কেমন কাটছে?

Advertisement

উ: এখানে অনেক শিল্পী, লেখক, ফিল্মমেকাররা থাকেন। তাঁদের কোনও হ্যাং-আপস নেই। ভাল কাজ করেন, তাই কোনও নিরাপত্তাহীনতাও নেই। ভালই সময় কাটছে। অনুপ্রেরণা খুঁজে পাওয়ার জায়গা আছে। মানুষগুলোর সঙ্গে সেই আদান-প্রদানটাও অনেক মসৃণ।

প্র: মনে হচ্ছে, কলকাতার ব্যাপারে খুবই বীতশ্রদ্ধ আপনি...

উ: বরাবরই বীতশ্রদ্ধ ছিলাম। দশটা ছবি করার পরে এখনও কলকাতায় নিজের প্রতিভার প্রমাণ দিতে হয়। আর জেনারেলি বলতে পারি, কলকাতায় থাকার বিরাট প্রেশারটা আর নিতে চাই না। সেটা যে খুব ইম্পর্ট্যান্ট প্রেশার, তা-ও নয়। আর এখানে শিল্পীসত্তায় কী সমস্যা হয় জানি না, কারণ লোকের ইগো হ্যান্ডল করাতেই অনেকটা সময় চলে যায়। সে সব দিক থেকে গোয়া অবশ্যই অনেক বেটার।

প্র: আপনার নতুন ছবির নাম ‘গারবেজ’ রাখলেন কেন?

উ: কারণ এটা আঁস্তাকুড়ের গল্প। গল্পটার মাধ্যমে আমার কিছু জরুরি কথা বলার ছিল, সেগুলো বলেছি। বিশেষ করে সেই ঘটনাগুলো নিয়ে যেগুলো মানুষ দেখেও দেখছে না। যেমন আঁস্তাকুড়ের ক্ষেত্রে হয়। জঞ্জাল জমা হয়, গন্ধ বেরোয়, তবুও লোকে নাকে চাপা দিয়ে হেঁটে চলে যায়। সেই ব্যাপারটাকেই মেটাফরিক্যালি বলেছি ছবিতে।

প্র: ছবিটা বানানো প্রয়োজন মনে হল কেন?

উ: নিজের তাগিদেই মনে হয়েছিল। নিজেকে বরাবরই সামাজিক ভাবে সচেতন ফিল্মমেকার মনে করি। গত ৪-৫ বছর ধরে আমাদের দেশে জেন্ডার, কাস্ট, পলিটিক্স যে বীভৎস জায়গায় পৌঁছেছে, তার প্রতিফলন আমি কোনও ছবিতে দেখি না। যে ধরনের রিয়্যালিটি চারপাশে দেখতে পাচ্ছি, পপুলার কালচারে সেটা ফুটছে না। আমি রাখঢাক না করেই এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছি।

প্র: এক জায়গায় বলেছিলেন, এত দিন ‘ক্রুড ফ্যান্টাসি’ নিয়ে কাজ করেছেন। ‘গারবেজ’ হল ‘ক্রুড রিয়্যালিটি’। ব্যাখ্যা করবেন?

উ: বাঙালি বরাবরই আমাকে ক্রুড মানু‌ষ হিসেবে চিহ্নিত করে। সাধারণত আমি ফ্যান্টাসিতেই খেলি। এই গল্পে সেটা নেই। যা আছে, সেটা বাস্তবের ধার ঘেঁষেই।

প্র: অনেক দিন ধরেই হিপোক্রেসির বিরোধিতা করে আসছেন। কিছু বদলাতে পেরেছেন?

উ: বদল তো নিজস্ব ইডিয়োলজি। আমি পলিটিশিয়ান নই! চারপাশটা বদলালে কী হতে পারে, তার একটা হিন্ট দিতে পারি সিনেমায়। যেমন দশ বছর আগে বলেছিলাম, মানুষ ইন্টারনেটে সিনেমা দেখবে।

প্র: আপনার সব ছবিই অনলাইনে মুক্তি পায়। গত মাসে ‘মামি’তে (মুম্বই অ্যাকাডেমি অব দ্য মুভিং ইমেজ) ‘গারবেজ’-এর স্ক্রিনিং হল। কেমন অভিজ্ঞতা?

উ: মামি-তে সারা বছর ধরে বিভিন্ন প্রোগ্রাম রাখা হয়। যে সব ছবি সাধারণ থিয়েট্রিক্যাল আবহাওয়ায় ডিস্ট্রিবিউশন পায় না, তাদের জন্য ভাল প্ল্যাটফর্ম এটা। ‘গারবেজ’ ছাড়া আমার ‘ব্রাহ্মণ নমন’-এরও স্ক্রিনিং হয়েছিল এখানে। আর শুধু বিনোদন জোগানো কোনও দিন আমার উদ্দেশ্য ছিল না। এনটারটেনমেন্টের মতো খামখেয়ালি তো কিছু হয় না। তাই ইন্টারেস্টিং কাজ আর মেনস্ট্রিম এনটারটেনমেন্টের তফাত থেকেই যায়। মেনস্ট্রিম রিলিজ় থেকে দূরে থাকি আমি। যে সিস্টেমে সলমন খানের ছবি লোকে দেখে, সেই সিস্টেমে আমার ছবিও চলবে— আমার এতে রীতিমতো ভয় হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন