উৎসব-স্টেটাসে তোমাকে চাই...

লিখছেন পরমা দাশগুপ্তসাইটে ঢুঁ মারলেই জিজ্ঞেস করত ফেসবুক। জবাব? আস্ত একটা স্টেটাস লিখে ফেলা।কেউ লিখতেন। কেউ লিখতেন না। কেউ বা অষ্টপ্রহর কেন মনে কী আছে প্রশ্ন করা হবে, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলে ফেলতেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৬ ০০:৩১
Share:

মনে কী আছে?

Advertisement

সাইটে ঢুঁ মারলেই জিজ্ঞেস করত ফেসবুক। জবাব? আস্ত একটা স্টেটাস লিখে ফেলা।

কেউ লিখতেন। কেউ লিখতেন না। কেউ বা অষ্টপ্রহর কেন মনে কী আছে প্রশ্ন করা হবে, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলে ফেলতেন।

Advertisement

তবে প্রশ্নটা থেকেই গিয়েছিল ফেসবুক ওয়ালে। অভ্যাস হতেও সময় লাগেনি।

‌Zanti পারো..

বয়স বাড়ছে। আপনার তো বটেই, ফেসবুকেরও। কৌতুহলও বদলে বদলে যাচ্ছে তার। ‘হোয়্যাটস অন ইওর মাইন্ড’-এ শুধু কথার বদলে এখন ছবি, ট্যাগ, কোথায় যাচ্ছেন— সবই হাজির প্রশ্নবাণ হয়ে। আর তার সঙ্গেই হাজির উৎসব-বার্তার আহ্বান। মানে কোন উৎসবে কী করলেন, কোথায় খেলেন, কী পরলেন, সবটাই জেনে ফেলতে চায় টিম ফেসবুক। আর তাই উৎসবের দিনগুলোয় লগ-ইন করলেই স্টেটাস দেওয়ার ডাক। এবং চান বা না চান, ওয়াল ভরা স্টেটাসে কে কী করল সবটাই আপনারও নখদর্পণে।

তা দিয়েও তো ফেলেন, আট থেকে আশি। লেখায়-ছবিতে আমি কী করছি, কখন, কোথায়, কাদের সঙ্গে কেমন করে ভরে উঠছে উৎসবের দিনগুলো, জানাতে কে না ভালবাসে! অষ্টমীর শাড়ির সঙ্গে সাধের নেকপিস আর হিরের স্টাড কতটা তাক লাগিয়ে দিল ফেসবুক বন্ধুদের, সেটা জানাটাও একটা কর্তব্য তো বটে। এবং দলে-দলে, সদলবলে স্টেটাসে ছেয়ে যাওয়া নিউজফিড। লাইক-লাভ-ওয়াও-হাহা-অ্যাংরি। সঙ্গে কমেন্টের বন্যা।

হিট না ফ্লপ

শুরুটা হয়েছিল ক্রিসমাস-নিউ ইয়ার দিয়ে। ক্রিসমাসে কোন কেকটা বাজার মাতিয়েছে, নিউ ইয়ার্স ইভে আপনার পার্টিটা জমে কতটা ক্ষীর— হইহই করে স্টেটাস দিচ্ছিলেনও সক্কলেই। সে সব এখন অতীত। ইস্টার, হ্যালোইন পেরিয়ে এ বার খাঁটি ভারতীয় উৎসব নিয়েও কৌতুহলী ফেসবুক। পুজো, হোলি, দিওয়ালি, ইদে স্টেটাস দেওয়াও চলছিল রমরমিয়ে। কিন্তু গোল বাধিয়ে দিল শিবরাত্রি। এ বছর কারা শিবরাত্রি কেমন কাটিয়েছে, জানতে চেয়েছে ফেসবুক। আর তাতেই খানিক নাক কুঁচকে গিয়েছে জেনওয়াই বাঙালির। কেউ কেউ যদিও বলছেন, ক্ষতিটা কী? তবে অনেকেরই অভিজ্ঞতা— গণ ‘হেট স্টেটাস’-এ ধুয়ে গিয়েছে গুটিকতক ভাল-লাগা।

যুদ্ধং দেহী

টুয়েলভের পডুয়া তৃষা থেকে ব্যাঙ্ক ম্যানেজার জয়দীপ কিংবা গৃহবধূ রোমিতা— তিন জনই বলছেন, ‘‘এ আবার কী! নিউ ইয়ার থেকে পুজো, ইদ, হোলি ঠিক ছিল। তা বলে শিবরাত্রি! এর পরে কি নীলষষ্ঠী বা ইতুপুজোর কথাও জানতে চাইবে ফেসবুক?’’

পাল্টা তর্ক জুড়েছে ইতিহাসের ছাত্রী সর্বাণী আর ব্যস্ত কর্পোরেট তিথি, ‘‘কেন? সমস্যাটা কোথায়? হ্যালোইন নিয়ে লেখা যায় আর শিবরাত্রি হলেই দোষ! ভিন্‌দেশি ভূত-চতুর্দশীতে রাক্ষস-খোক্কোস সেজে আহ্লাদী স্টেটাস-ছবি দিলে ক্ষতি নেই! যে-ই বাঙালির উৎসব নিয়ে কথা, অমনি খারাপ হয়ে গেল? যত্ত সব!’’

Love-লোকসান

তর্কটা দিব্যি জিইয়ে আছে। থাকবেও। পরের উৎসবেও হয়তো বা ঝগড়া বাঁধবে কোমর বেঁধে। তা বলে লোকসান হল কী কিছু? মোটেই না। বরং লাভ-ই তো। টিম ফেসবুকের। ভারতীয় থেকে বাঙালি উৎসবের খুঁটিনাটি জোগাড় করে ফেলে তার ডেটা কালেকশন তো সারা! জায়গামতো উইশ-টুইশ করে আরও বেশি মন কাড়ার সুযোগও হাতের মুঠোয়।

ডেটলাইন, ‘পরের উৎসব’।

‘হোয়াটস অন ইওর মাইন্ড?’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন