‘সিনেমার পরিচিত অভিনেতাদের নিলেই কাজ চলে যাবে, এটা ভাবা ভুল’

নামকরা অভিনেতারা টিভিতে এলেই কি সফল হয় ধারাবাহিক? না কি কনটেন্টই শেষ কথা?নামকরা অভিনেতারা টিভিতে এলেই কি সফল হয় ধারাবাহিক? না কি কনটেন্টই শেষ কথা?

Advertisement

অন্তরা মজুমদার

শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share:

সমকালীন নাগরিক জীবনে বিনোদন বলতে বেশির ভাগই বোঝেন বাংলা ধারাবাহিকের কথা। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ফ্যামিলি ড্রামা হোক বা পিরিয়ড পিস কিংবা জাদুমন্ত্র— বাঙালির কাছে জনপ্রিয় বাংলা সিরিয়াল দেখাই এখন কালচারাল প্র্যাকটিস। আর পরিবার-পরিজনের থেকেও প্রিয়জন হলেন সেই সব মানুষ, যাঁদের মোটামুটি সন্ধে ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত টেলিভিশন সেটে দর্শক রোজ দেখতে পান! কিন্তু জনপ্রিয়তার নিরিখে কোন সিরিয়াল এগিয়ে আর ধারাবাহিকের নিরিখে কোন চরিত্র সবচেয়ে বেশি দর্শকমন জয় করতে পারছে, তার হিসেবটাও রাখা দরকার। এব‌ং সেই হিসেব মতো দেখা যাচ্ছে, এই মুহূর্তে নামকরা মুখ দিয়ে যে ক’টা ধারাবাহিক চালানো হচ্ছে, তার সব ক’টাই রেটিংয়ের দিক থেকে পিছিয়ে। অথচ এগিয়ে রয়েছে অপেক্ষাকৃত নতুন মুখদের নিয়ে বানানো সিরিয়াল।

Advertisement

একাধিক নামকরা মুখ নিয়ে বানানো ধারাবাহিক ‘ভূমিকন্যা’ তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ। অন্য রকম আইডিয়া, টানটান প্লটলাইনের ‘ভূমিকন্যা’ নিয়ে দর্শকের আগ্রহ ছিলই। কিন্তু শুরু থেকেই নিতান্ত মাঝারি রেটিং পেয়ে এসেছে ধারাবাহিকটি। সোহিনী সরকার, চিরঞ্জিৎ, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, সুদীপ্তা চক্রবর্তী, কৌশিক সেনদের পারফরম্যান্সে কোনও খামতি না থাকলেও জনপ্রিয়তা যথেষ্ট কম এই শোয়ের। অথচ প্রাইম টাইমেই রোজ চালানো হয় ‘ভূমিকন্যা’। তার পরেও এ রকম অবস্থা কেন? তা হলে কি অন্য রকম কনটেন্ট মানুষ চাইছেন না? একঘেয়ে ছক মেনে পরিবারের কোনও এক জনকে হেনস্থা, অন্যের সংসারে ভাঙন সৃষ্টি, বাবা-মায়ের সঙ্গে ছেলে বা মেয়ের দ্বন্দ্বই চাইছেন মানুষ? না কি সিনেমার অভিনেতাদের টিভিতে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত নন তাঁরা...

অন্য দিকে ইন্দ্রাণী হালদার অভিনীত ‘সীমারেখা’র রেটিং মাঝারি, যেখানে অভিনেত্রী দ্বৈত চরিত্রে। অথচ তাঁরই করা ‘গোয়েন্দা গিন্নি’ বিরাট জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। সেখানে অবশ্য একটা বৈপরীত্য রয়েছেই। কারণ এক জন বাড়ির গিন্নি অনায়াসে একের পর এক জটিল রহস্যের সুরাহা বার করে ফেলছে, এ রকম একটা অভিনব ভাবনার গুরুত্ব রয়েছেই। সে রকমই নারীশক্তির উত্থান নিয়ে আর একটি ধারাবাহিক ‘জয় কালী কলকত্তাওয়ালি’। এক জন মহিলা সমাজের সমস্ত অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছে, এ রকম লাইনে চলা গল্প। মুখ্য ভূমিকায় রয়েছেন বাংলা ইন্ডাস্ট্রির দাপুটে অভিনেত্রী অনন্যা চট্টোপাধ্যায়। তাঁর টেলিভিশনে ফিরে আসায় উৎসাহিত হয়েছিলেন দর্শক। কিন্তু রেটিং বেশ খারাপ।

Advertisement

বিভিন্ন ধারাবাহিকের সফলতম চিত্রনাট্যকার লীনা গঙ্গোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে বললেন, ‘‘টেলিভিশন যেহেতু আক্ষরিক অর্থে রাইটার্স মিডিয়াম, তাই এখানে শুধুমাত্র সিনেমার নামকরা মুখ বা পরিচিত অভিনেতাদের নিলেই কাজ চলে যাবে, এটা ভাবা ভুল। মানুষ যেমন গল্প চাইছেন, তেমনটা দেখাতে পারলেই একটা শো সফল হয়। এমন অনেক সময়েই হয়েছে, নতুন কোনও মেয়েকে নেওয়া হল, যে বেশ হাই রেটিং দিতে পেরেছে। আবার চেনা তারকা সেটা দিতে পারেননি। সবটাই নির্ভর করে গল্পটা মানুষ চাইছেন কি না, তার উপরে।’’ লীনা পাশাপাশি এটাও জানালেন, বহু পরিচিত, জনপ্রিয় তারকাকে নিয়ে শো হিট করেছে, এ-ও তাঁদের দেখা ঘটনা। ‘‘কিন্তু মানুষকে আধঘণ্টা টিভির সামনে বসিয়ে রাখতে পারবে, এমন কনটেন্ট প্রয়োজন,’’ শেষ কথা তাঁর।

মোটামুটি একই কথা বলছেন অভিনেতা রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়ও। দিন কয়েক আগেই শেষ করেছেন ‘অর্ধাঙ্গিনী’র কাজ। এই ধারাবাহিকও রেটিংয়ের হিসেবে বেশ পিছিয়ে। রাহুল বললেন, ‘‘নামী মুখকে নিলেই যে ধারাবাহিক হিট করবে, এমন কোনও শর্ত নেই। ‘রানি রাসমণি’তে দিতিপ্রিয়া যে এত সাফল্য পেল, এটাই তো সবচেয়ে বড় উদাহরণ। ‘ভজগোবিন্দ’র রোহন ভট্টাচার্যও তাই। এঁরা তো কেউ সিনেমার লোক নন! আসল কথা হল, সিনেমায় যত বড়় মুখই কেউ হোক না কেন, টেলিভিশনে নতুন করে সাফল্য না দিতে পারলে টিভি থেকে কিন্তু সরিয়ে দেওয়া হবে। আর এই সাফল্যটা নির্ভর করে ধারাবাহিকের কাহিনির উপরেই।’’ তবে রাহুল এটাও মনে করেন, কেরিয়ারে অভিজ্ঞতার ভূমিকা বিরাট। এবং ভাল অভিনেতার প্রয়োজন সব সময়েই রয়েছে ইন্ডাস্ট্রিতে। ‘‘আমারই যেমন এত বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। সিনেমাতে কাজ করি, টেলিভিশনেও। যদিও আমার শুরুটা এবং স্বীকৃতি পাওয়া টেলিভিশন থেকেই। তাই এই অভিজ্ঞতার দাম তো নির্মাতারা দেবেনই,’’ মন্তব্য অভিনেতার।

সুতরাং মেগা সিরিয়ালের সাফল্যে মেগাস্টারের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ কনটেন্ট, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তার সঙ্গে ভাল অভিনেতার সঙ্গত থাকলে যে বিষয়টা নির্ভেজাল হয়, সেটাই বোঝা গেল এ বার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন