সমকামীর প্রেম

আসলে নীরব বিদ্রোহের ছবি। লিখছেন সংযুক্তা বসু অথচ এই সমকামিতা সমাজে এখনও স্বীকৃতি পায়নি। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে পরিচালক শতরূপা সান্যাল তাঁর ‘অন্য অপালা’ ছবিতে এক রক্ষণশীল পরিবারের নারীর জীবনে নিয়ে এলেন সমকামী স্বামীকে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৫ ০০:১৬
Share:

সমকামিতাও এক ধরনের প্রেম। নরনারীর প্রেমের আর এক দিক।

Advertisement

অথচ এই সমকামিতা সমাজে এখনও স্বীকৃতি পায়নি। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে পরিচালক শতরূপা সান্যাল তাঁর ‘অন্য অপালা’ ছবিতে এক রক্ষণশীল পরিবারের নারীর জীবনে নিয়ে এলেন সমকামী স্বামীকে।

কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘আর একটি প্রেমের গল্প’ বা ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘চিত্রাঙ্গদা’য় সমকামী পুরুষদের নিয়ে আগেও গল্প বলা হয়েছে। কিন্তু সমকামী স্বামীর সঙ্গে তার স্ত্রীর সম্পর্ক নিয়ে একটা সহজ সরল গল্প ‘অন্য অপালা’য় এই প্রথমবার। ছবির এক দিকে সমাজের ভেতর চোরাগোপ্তা সমকামের বয়ে চলা স্রোতের প্রতিচ্ছবি। অন্য দিকে রয়েছে পুরুষ-শাসিত সমাজে নারীর বঞ্চনা, রয়েছে মেয়েদের অধিকার খর্ব করার চাতুরী। দুয়ে মিলে এ ছবি একান্ত ভাবেই ‘জেন্ডার পলিটিক্সে’র গল্প। অজস্র দৃশ্যে ছড়িয়ে রয়েছে অপালার নিঃসঙ্গতা, তার সন্তান না হওয়া নিয়ে পারিবারিক টানাপড়েনের মতো প্রসঙ্গ।

Advertisement

গল্পের রেখাটা এই রকম: তরুণী অপালার বিয়ে হয় (ঋতাভরী চক্রবর্তী) গ্রামীণ এক অভিজাত পরিবারে। বিয়ের রাতে অপালার স্বামী শ্যাম (ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়) জানায় যে তার ‘রাধা ভাব’ চলেছে। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বলতে যা বোঝায় তা তার পক্ষে পালন করা সম্ভব নয়। কালক্রমে এও জানা যায় যে, কুলগুরু অনন্তবাবাজির প্রতি শ্যাম দেহমনে সমর্পিত।

চুরমার হয়ে যায় অপালার সংসারের স্বপ্ন। এর পর নানা চড়াই উতরাই পেরিয়ে, নিজের নারীমনের সমস্ত সাধআহ্লাদ বিসর্জন দিয়ে সমকামী স্বামী শ্যামকেই ভালবেসে চলে অপালা। কারণ একটাই। তার স্বামী, দাম্পত্যের ধর্ম পালন না করলেও মনেপ্রাণে ভালবাসে অপালাকে। সেই ভালবাসার টানেই অপালা থেকে যায় শ্বশুরবাড়িতে। অপালা আর তার স্বামীর মধ্যে স্বামী-স্ত্রী-র স্বাভাবিক সম্পর্ক না হলেও তৈরি হয় অভিনব সখ্য।

ছবি শুরু হয় অপালার স্বামীর পঁচিশতম মৃত্যুবার্ষিকীর দিন। সেই দিনের নানা অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফ্ল্যাশব্যাকে ফিরে ফিরে আসে অপালার অতীত। ছবির বক্তব্য বিষয় এতটাই জোরালো যে সাধারণ ভুলত্রুটিগুলো উপেক্ষা করাই যায়। তবু যেটুকু না বললেই নয়, তা হল বাংলা সিরিয়ালের গল্পের মতো বউ-শাশুড়ি সম্পর্কের চর্বিতচর্বণ ছবির প্রথমার্ধকে অকারণে ক্লান্তিকর করেছে।

কিন্তু হেরে যাওয়া মানসিকতা থেকে দৃঢ়চেতা নারী হয়ে ওঠা
বয়স্ক অপালার চরিত্রে রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিনয় ছবিতে অসাধারণ এক মাত্রা জুগিয়েছে। টিন এজ অপালার চরিত্রে ঋতাভরী স্বতঃস্ফূর্ত অভিনয়ের চেষ্টা
করেছেন। ছবির আর দুই ভরকেন্দ্র হল ভাস্বর চট্টোপাধ্যায় (শ্যাম) এবং অপালার পিসিশাশুড়ির
চরিত্রে কল্যাণী মণ্ডলের
অভিনয়। তবে অনন্ত বাবাজির চরিত্রে নাইজেল আকারার অভিনয় অতিনাটকীয়। ছবিতে
কীর্তনের ব্যবহার পুরনো বাংলাকে মনে করিয়ে দেয়।

মনে হয় যেন এ কোনও নারী বা পুরুষের গল্প নয়। সমকামিতার প্রেক্ষাপটে জন্ম নেয় এক স্বতন্ত্র সত্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন