‘আমার সঙ্গে মেয়েদেরও মেরেই ফেলত উৎপলেন্দু’

মার খেয়েও অনেক সময় রাত বারোটায় দোকান খুঁজে ওর সিগারেট নিয়ে আসতাম। দেখলাম, আমার মেয়েরা ওঁর এই নিয়মিত অত্যাচারে ভয় পেয়ে যাচ্ছে। কেউ চিৎকার করে কথা বললে, আমার বড় মেয়ে ভয়ে টয়লেট করে দিত। ছোট মেয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছিল। ওদের কোনও ব্যক্তিত্ব তৈরি হচ্ছিল না।

Advertisement

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৭ ১১:৩০
Share:

শতরূপা

দুপুরে আনন্দ প্লাসের দফতরে ফোনটা এল। ‘‘আমি শতরূপা সান্যাল বলছি। ৮ জুন আনন্দ প্লাসে লেখা ‘অর্থাভাব অসুস্থতায় জেরবার উৎপলেন্দু’ শীর্ষক রচনায় আমাকে এবং আমার মেয়েদের নিয়ে যে আঙ্গিকে লেখা হয়েছে তা নিয়ে আমার আপত্তি আছে! ১৯৯৭ সালে আমি আমার দুই মেয়েকে নিয়ে ওই বাড়ি ছেড়ে চলে আসি। ২০০০ সালে আমাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। এত দিন পর্যন্ত উৎপলেন্দু চক্রবর্তী তাঁর মেয়েদের একটা লজেন্সও দেননি।’’ খানিক থামলেন শতরূপা। সংবাদপত্রে উৎপলেন্দু চক্রবর্তীর অসুস্থতার খবর বেরোনোর পর থেকেই তাঁর মোবাইলে, হোয়াটস্অ্যাপে অসংখ্য মেসেজ। অনেকে এমনও বলেছেন, তাঁরই নাকি দায়িত্ব ছিল অসুস্থ প্রাক্তন স্বামীকে ১০ বাই ১০ ফুটের বদ্ধ, অনাহারের দেওয়াল থেকে নিজের কাছে নিয়ে আসার! ‘‘আমি ভালবেসে, ওঁর ট্যালেন্টের কাছে নতজানু হয়েছিলাম। আর উনি দুর্বল ভেবে রোজ মদ খেয়ে আমায় মারতেন। মার খেয়েও অনেক সময় রাত বারোটায় দোকান খুঁজে ওর সিগারেট নিয়ে আসতাম। দেখলাম, আমার মেয়েরা ওঁর এই নিয়মিত অত্যাচারে ভয় পেয়ে যাচ্ছে। কেউ চিৎকার করে কথা বললে, আমার বড় মেয়ে ভয়ে টয়লেট করে দিত। ছোট মেয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছিল। ওদের কোনও ব্যক্তিত্ব তৈরি হচ্ছিল না। বেশি দিন থাকলে আমার সঙ্গে আমার মেয়েদেরও উনি মেরেই ফেলতেন। বেরিয়ে এলাম। সেই বাবাকে আমার মেয়েরা কেন দেখবে?’’ প্রশ্ন শতরূপার।

Advertisement

আরও খবর
রণবীরের ভাঁড়ারে হিটও নেই, তাই মেজাজও নেই

জানতে চাইলেন, যে দিন দুই মেয়েকে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছেন, সে দিন তো কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেননি। আজ সকলে তাঁর প্রাক্তন স্বামীকে নিয়ে ‘আহা-উঁহু’ করছেন! বললেন, ‘‘ওঁর আগের স্ত্রী ইন্দ্রাণী আর পুত্র গোগোলও আছে। তাদের কথা কেউ বলছে না তো! তারা সেলিব্রিটি নয় বলে? নাকি আমার দুই মেয়ে চিত্রাঙ্গদা আর ঋতাভরী বাবার স্নেহ ছাড়াই নিজের পায়ে দাঁড়াবার চেষ্টা করছে বলে?’’ নিজে ডাক্তারিতে প্রথম হয়েছিলেন শতরূপা। সম্ভ্রান্ত পরিবারে মেয়ে। স্বামীর নির্মম অত্যাচার নিয়ে কোনও দিন কোথাও মুখ খোলেননি। স্বামীর সঙ্গে প্রায় সতেরো বছরের তফাত। সংসার করতেই গিয়েছিলেন। দুই কন্যা সন্তানের জন্মও দিয়েছেন। জানালেন, বাবা-মা আশ্রয় না দিলে সে দিন তিনজনই হয়তো শেষ হয়ে যেতেন! আবার ফিরলেন পুরনো কথায়,‘‘জানেন, সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটে বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত পড়ানোর জন্য উৎপলেন্দু চক্রবর্তীকে বলেছিলেন। উনি ক্লাস না নিয়ে সন্ধেবেলা বাড়ি এসে মদ নিয়ে বসতেন। আর রাতে আমার উপর অত্যাচার শুরু করতেন। চিৎকার করতেন, অমুকে অ্যাওয়ার্ড পেল আমি পেলাম না!’’

Advertisement

ফেসবুকে আজও কবিতা লেখেন শতরূপা। প্রগতিশীল শিক্ষিত পুরুষ যদি ক্ষমতা বা শিক্ষার জোরে দানবীয় আচরণ করে, তার দ্রুত জবাব দেওয়ার জন্য মেয়েদের উদ্বুদ্ধ করতে চান তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন