Entertainment News

স্পিলবার্গকে না বলে দিয়েছিলেন অনায়াসে

শুধু কি সাম্রাজ্য? ফিকে হয়ে গেল আমাদের সকলের ছেলেবেলা! চলে গেলেন 'রূপ কি রানি'! এই সদমা কতটা কাটিয়ে উঠতে পারবে বলিউড? আপামর সিনেমাপ্রেমীর দল? জানা নেই!

Advertisement

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১৫:২০
Share:

শ্রীদেবী। —ফাইল চিত্র।

বুকের ভেতর যেন মোচড় দিয়ে উঠল ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালটা।

Advertisement

পলাশ ঝাঁকে ঝাঁকে রক্তিম! লাল রঙে এত বিষণ্ণতা আগে দেখেনি সেলুলয়েডের সাম্রাজ্য!

শুধু কি সাম্রাজ্য? ফিকে হয়ে গেল আমাদের সকলের ছেলেবেলা! চলে গেলেন 'রূপ কি রানি'! এই সদমা কতটা কাটিয়ে উঠতে পারবে বলিউড? আপামর সিনেমাপ্রেমীর দল? জানা নেই!

Advertisement

আমাদের জীবন থেকে আচমকা সরে গিয়ে স্মৃতি হয়ে গেলেন তিনি। শ্রী আম্মা ইয়াঙ্গের আয়্যাপান। এই সুন্দরের চেনা নাম হল শ্রীদেবী।

তামিলনাড়ুতে ১৯৬৩ সালের ১৩ অগস্ট জন্মগ্রহণ করেন শ্রী। বাবা ছিলেন একজন আইনজীবী। এক বোন ও দুই সৎভাই নিয়ে যৌথ পরিবারে দখিনি আদর্শে বেড়ে ওঠা তাঁর। এক বার এক সাক্ষাতকারে আফসোস করে বলেছিলেন, "এমন একটা পরিস্থিতি এসেছিল যখন সিনেমা আর পড়াশোনার মধ্যে আমাকে একটা বেছে নিতে হয়েছিল। আমি সিনেমা বেছেছিলাম। ইশ! যদি আরও একটু পড়তে পারতাম!"

তামিল ছবি ‘থুনাইভান’-এ শ্রীদেবী। বয়স চার। ছবি— সংগৃহীত।

মাত্র চার বছর বয়স থেকে অভিনয় করেছেন শ্রীদেবী। আট বছর বয়সে, ১৯৭১ সালে মালায়লাম সিনেমা ‘পুমবাতা’য় অভিনয়ের জন্য তিনি সেরা শিশু অভিনেত্রীর পুরস্কার পান।

১৩ বছর বয়সে ১৯৭৬ সালে ‘মন্দ্রু মুচিহো’ নামে তামিল সিনেমায় অভিনয় করেন। তার আগের বছর হিন্দি ছবি ‘জুলি’তে। চলচ্চিত্রজীবনে তিনি তামিল, তেলুগু, মালায়লাম, কন্নড় ও হিন্দি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। কলকাতায় 'মম' ছবির প্রমোশনে এসে বলেছিলেন, "প্রায় তিনশ ছবি হয়ে গেল আমার। আজও মনে হয় নতুন করে শুরু করি।" এক সঙ্গে টানা কাজ করার অভিজ্ঞতা আর সেই সঙ্গে কমিক থেকে রোম্যান্টিক রোলে অনায়াস অভিনয় তাঁকে নায়কদের একচেটিয়া রাজত্বে নব্বই দশকের সুপারস্টার করে দিয়েছিল। শ্রীদেবী তাই একক অভিনেতা। হিন্দি চলচ্চিত্রে যে কয়েক জন অভিনেত্রী পুরুষ সহকর্মীর সহায়তা ছাড়াই বক্স অফিসে ঝড় তুলতে পেরেছিলেন, তাঁদের মধ্যে তাঁকে অন্যতম বলে বিবেচনা করা হয়।

নায়িকা হিসেবে শ্রীদেবীর বলিউডে অভিষেক ঘটে ১৯৭৮ সালে। এর পর থেকে তিনি ভারতীয় সেরা অভিনেত্রীদের ঘোড়দৌড়ে নিজের জায়গা পাকা করেন।

শোনা যায় যশ চোপড়া 'চাঁদনী' করার সময় রেখার জায়গায় শ্রীদেবীকে নির্বাচন করেন। "আসলে শ্রী নিজে থেকে অভিনয় করতে করতে অনেক কিছু করে ফেলে যেগুলো আসলে মাস্টারস্ট্রোক"— বলেছিলেন যশ।

আরও পড়ুন, শিশু অভিনেতা থেকে সুপারস্টার শ্রীদেবী (১৯৬৩-২০১৮)

পাঁচ দশকের অভিনয় জীবনে (মাঝে ১৫ বছর সরে ছিলেন) তিনি তিনশো চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তাঁর অভিনীত সিনেমার মধ্যে ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’, ‘চাঁদনি’, ‘চালবাজ’, ‘তোফা’, ‘গুমরাহ’, ‘মাওয়ালি’, ‘নাগিনা’ ও ‘সদমা’ অন্যতম।

তামিল সিনেমায় শিশু শিল্পী হিসাবে কাজ শুরু করা শ্রীদেবী দক্ষিণ ভারতকেও বঞ্চনা করেননি। দক্ষিণের সুপারহিরো রজনীকান্ত, কমল হাসন থেকে শুরু করে চিরঞ্জীবী— সকলের সঙ্গেই কাজ করেছেন চুটিয়ে।

১৯৯৭ সালে তার ‘জুদাই’ সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার পর এই বৈচিত্রময় অভিনেত্রী চলচ্চিত্রশিল্পকে বিদায় জানানোর সিদ্ধান্ত নেন। এর পর দীর্ঘ ১৫ বছরে আর কোনও অভিনয় করেননি। সাম্রাজ্য থেকে আচমকা সরে এলেন। কারণ তখন তিনি মা হিসেবে নিজেকে দেখতে চাইলেন। "যে মানুষ ঈশ্বরের দেখা পায় না, সে মা কে পায়"— 'মম' ছবির সবচেয়ে প্রিয় সংলাপকে নিজের জীবন দিয়ে প্রমাণ করেছেন তিনি।

স্বামী বনি কপূরের সঙ্গে শ্রীদেবী। ছবি: শ্রীদেবীর ইনস্টাগ্রাম পেজের সৌজন্যে।

কিন্তু ২০১২ সালে ‘ইংলিশ-ভিংলিশ’ সিনেমার মাধ্যমে আবার চলচ্চিত্র জগতে ফিরে আসেন। ১৫ বছর পর সেই নির্বাসন ভেঙে ফিরে এসে কুড়িয়ে নিলেন ‘ভারতের মেরিল স্ট্রিপ’-এর ‘খেতাব’। ২০১৭ সালে সর্বশেষ তাকে ‘মম’ সিনেমায় দেখা গেছে।

২০১৩ সালে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করে।

আরও পড়ুন, শোকস্তব্ধ শ্রী-হীন বলিউড

একসময় পর্দায় শ্রীদেবীর উপস্থিতিতে বিবর্ণ হয়ে যেতেন সহশিল্পীরা। ভারতের অন্যতম কাঙ্ক্ষিত অভিনেত্রীকে বলা হয়— তিনি বলিউডের নারী অমিতাভ বচ্চন। ১৯৯৩ সালের কথা, সে সময় জুরাসিক পার্ক ছবিটি নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন হলিউড নির্মাতা স্টিভেন স্পিলবার্গ। শ্রীদেবীর সুনাম শুনেছিলেন তিনিও। এ ছবিতে শ্রীদেবীকে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন তিনি। শ্রীদেবী তখন বলিউডের বিগ বাজেটের ছবিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন। সব মিলিয়ে কেরিয়ারের সোনালি সময় পার করছিলেন। সে দিন স্পিলবার্গের এমন প্রস্তাব খুব একটা মনঃপূত হয়নি। দ্বিধাহীনভাবেই স্টিভেন স্পিলবার্গকে না বলে দিয়েছিলেন।

সপরিবারে...। ছবি: শ্রীদেবীর ইনস্টাগ্রাম পেজের সৌজন্যে।

শ্রীদেবী মানে কেবল সিনেমা বা অভিনয় নয়।

ক্লাসরুমে অঙ্ক খাতার মাঝে তাঁর ছবি। শুধু ছেলেরা নয়! তাঁর মতো হলদে বা নীল বা আশমানি শাড়ি হাওয়ায় না ওড়ালে নিজেদের সুন্দর মনে করত না আমাদের দেশের অনেক মেয়ে। উষ্ণতার রোম্যান্টিক গন্ধ, আবেদন তাঁর অন স্ক্রিন উপস্থিতিতেই ছড়িয়ে গিয়েছিল সারা বিশ্বে।

শ্রীদেবী শুধু রোম্যান্টিসিজমকে জাগিয়ে রাখলেন তা নয়। তার সঙ্গে এল স্ক্যান্ডাল! মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে তাঁর চুপিচুপি বিয়ের কথা আজও বি টাউনে কান পাতলে শোনা যায়।

আরও পড়ুন, যে ছবিগুলির জন্য শ্রীদেবীকে মনে রাখবে বলিউড

১৯৯৬ সালে তিনি চলচ্চিত্র প্রযোজক বনি কাপুরকে বিয়ে করেন। তাঁদের দুই মেয়ে জাহ্নভি এবং খুশি।

‘ইংলিশ ভিংলিশ’-এর শশীর মতোই জীবন কাটাতে চেয়েছিলেন শ্রীদেবী। পাপারাৎজির দল তাঁকে ঘিরে ধরলেও তিনি কোনও দিন ইন্ডাস্ট্রিকে ঘিরে মন্তব্য, ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে মুখ খোলেননি। এমনকী সাক্ষাৎকার দিতেও পছন্দ করতেন না।

হয়তো এ ভাবেই চলে যেতে চেয়েছিলেন। মৃত্যুর মুহূর্তে একা রইলেন।

ক্ষয় হল নক্ষত্রের। তাঁর নক্ষত্রের মতন হৃদয়। ফাল্গুনে ঝরে পড়ে গেল। তবু জীবন অগাধ। তোমারে রাখিবে ধরে পৃথিবীর আলো রাত যত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন