গেরুয়া: শাহরুখ-কাজল
আপনি তো বলিউডি গানের গৈরিকীকরণ করে দিলেন!
হা হা হা হা! আমি কিন্তু ঠিক করেছি গানটার জন্য কোনও পুরস্কার পেলে গেরুয়া পোশাক পরেই যাব!
তা, এত রং থাকতে গেরুয়া! প্রিয় রং নাকি?
(হাসতে হাসতে) আরে, আমি তো শেড কার্ড নিয়ে গান লিখতে বসিনি! আসলে গেরুয়া রং, গেরুয়া বসনের সঙ্গে তো একটা সুফি অনুষঙ্গ জড়িয়ে আছে। প্রেমের গভীরতা একটা সময় সব কিছু ছেড়ে সেই মানসিক অবস্থাটাতে পৌঁছে যায়। আমি গানটাতে সেই সুফি-মননটাকেই ছোঁয়ার চেষ্টা করেছি।
শাহরুখ-কাজলের মতো জুটির জন্য গান লিখতে হবে, আগে থেকে চাপ ছিল?
এ রকম আইকনিক জুটির জন্য গান লেখাটা সব সময়ই চ্যালেঞ্জিং। তবে এ জন্য যে খুব মাথা খাটিয়ে আমি ভেবেছি, তা নয়। গান তৈরি করতে প্রীতমদার সঙ্গে বসে হঠাৎই কথাগুলো আমার মাথায় আসে। তখনও জানতাম না তো ভিস্যুয়াল কেমন হবে। তারপর শ্যুট হওয়ার পর দেখেটেখে নিশ্চিন্ত হলাম। ‘গেরুয়া’ শব্দটা আনকমন বলে গানটার নামও ওটাই রাখা হল।
‘গেরুয়া’ চার বাঙালির সমবেত গান! আপনি, প্রীতম, অরিজিৎ সিংহ, অন্তরা মিত্র!
হ্যাঁ, এটা আমি শুরুতে খেয়াল করিনি! পরে মনে হল আরে তাই তো! এটা সত্যিই খুব ইন্টারেস্টিং ব্যাপার। খেয়াল করে আমার নিজেরই খুব ভাল লেগেছে।
বলিউডি লিরিকে গত কয়েক বছরে যে তারুণ্যের মেজাজ, মুখের ভাষা এসেছে, তার অন্যতম পুরোধা তো মনে করা হয় আপনাকে...
না না, আমি একা নই। আসলে বছর দশেক ধরেই হিন্দি ছবির কথা নিয়ে একটা পজিটিভ এক্সপেরিমেন্ট চলছে। অনেকেই খুব ভাল কাজ করছেন। স্বানন্দ কিরকিরে আছেন, ইরশাদ কামিল ভাই আছেন... লেজেন্ডরা তো আছেনই। আসলে আমাদের সবার লেখাই সবাইকে উৎসাহ দেয়।
আপনার অনুপ্রেরণা কে?
যে কোনও গানই শুনে ভাল লাগলে আমরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করি, কী ভাল লিখেছে! কিন্তু আমার ব্যক্তিগত অনুপ্রেরণা জিজ্ঞাসা করলে আমি বলব গুলজারের কথা। আমাদের তো অনেক কম বয়স। উনি ওই যে ‘বিড়ি জ্বলাইলে জিগর সে পিয়া...’’ লিখে দিলেন, এ তো একেবারে একটা পঁচিশবছর বয়সির মনের ভাবনা! উনি কিংবদন্তি বলেই সবার মনটা এত ভাল বুঝতে পারেন।
এখন তো মূলধারার বলিউডি ছবির গানেও বিতর্কিত বিষয়ের কথা ছোঁয়া হচ্ছে। ‘বজরঙ্গি ভাইজান’ ছবির ‘চিকেন সং’ গানটির লিরিকে রয়েছে, ‘‘থোড়ি বিরিয়ানি বুখারি, থোড়ি নাল্লি নিহারি, লে আও আজ ধর্মভ্রষ্ট হো যায়ে...’’ ইঙ্গিতটা তো খুব স্পষ্ট!
‘বজরঙ্গি...’র জন্য আমি গান লিখেছি। তবে ওটা আমার লেখা নয়। তাই ওটা নিয়ে আমি বলতে পারব না। ওই গানটা ময়ূর পুরীর লেখা। তবে উনি যখন লিখেছেন কথাগুলো, নিশ্চয়ই একটা কিছু ভেবেই লিখেছেন।
সোশ্যাল মিডিয়ার কথাও তো এখন লিরিকে খুব চলছে। বজরঙ্গিতে সলমন বলছেন, ‘সেলফি লে লে রে’। তামাশায় রণবীর বলছেন, ‘ম্যা ট্যুইটার পে হুঁ, ডিপি মেরি দেখো...’’
যে বদলটার কথাটা বলছিলাম না, এগুলো আসলে তারই প্রকাশ। আমরা কথার মধ্যে দিয়ে আসলে জনতার সঙ্গে যোগাযোগ গড়তে চাই। তো, এখন লোকজন যা সব নিয়ে কথা বলে সেগুলো তো লিরিকে প্রতিফলিত হবেই! বলিউডি লিরিক তো আশপাশে যা ঘটছে তার বাইরে নয়।
এখনকার সমাজ-সংস্কৃতির কথাই উঠে আসছে গানে।
বাংলা গান লিখবেন না?
(হাসতে হাসতে) আমার বেড়ে ওঠা লখনউতে। আমি বাংলা ভালবাসি, বলতে পারি, সবই ঠিক আছে। কিন্তু বাংলায় লেখার জন্য যে শৈলী দরকার, তা সত্যিই আমার নেই। তাই ও কথা ভাবিইনি!
অমিতাভ ভট্টাচার্য ছবি আর বিজ্ঞাপনের গান ছাড়া নিজের জন্য কী লেখেন?
এটা শুনলে কেউ বিশ্বাস করবে না। আমি নিজের জন্য এক লাইনও লিখি না। একটা লাইনও না।
সত্যি?
বলছি তো, কেউ বিশ্বাস করে না। আসলে সুর ছাড়া আমার লেখা আসেই না। আমি আগে লিখি না। সুর তৈরি হতে থাকে, তার সঙ্গে সঙ্গে আমি কথা তৈরি করি। তার পর গান তৈরি হয়। নিজে যে খাতা-পেন নিয়ে লিখতে বসব, সেটা ভাবিই না।
নিজের জন্য লিখছেন কবে?
(হাসতে হাসতে) সত্যিই জানি না। লখনউ থেকে মুম্বই এসেছিলাম গায়ক হব বলে। হয়ে গেলাম গীতিকার।
তবে আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি যে এত ভাল ভাল প্রোজেক্টে কাজ করতে পেরেছি। ‘ইমোশনাল অত্যাচার’ যেমন লিখেছি, তেমনই ‘কবীরা’ লিখেছি। ‘দিল্লিওয়ালি গার্লফ্রেন্ড’ যেমন লিখেছি তেমনই লুটেরার, ‘সওয়ার লুঁ’, ‘মনটা রে’, ‘মনমর্জিয়াঁ’ লিখেছি। এটা সত্যিই আমার কাছে তৃপ্তির। তবুও আমি নিজেকে কবি বলতে চাই না। আমি কেবল একজন লিরিসিস্ট। আপাতত তা নিয়েই থাকি...। পরে দেখা যাক কী হয়!