সত্যি কথা বলাটাই দরকার

তাঁর জীবনী, নাতি-নাতনি, বলিউডের সফরনামা নিয়ে হেমা মালিনীবই প্রকাশের পর সইশিকারিদের আবদার মিটিয়ে রাত দশটা অবধি সাক্ষাৎকার দিয়ে যান অমলিন হাসি রেখে। তিনি হেমা মালিনী। তামাম ভারতবাসীর মনে তিনি স্বপ্নের মতো সুন্দর।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৭ ০৮:০০
Share:

হেমা মালিনী। ছবি: সুদীপ্ত চন্দ

বয়সকে তিনি তোয়াক্কা করেন না। তাই তো সত্তরের কোঠায় দাঁড়িয়েও তিনি সদ্য তিরিশের মতো সুন্দরী। মথুরা থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা ড্রাইভের পর দিল্লি হয়ে উড়ান ধরে কলকাতায় নেমেও ক্লান্তি নেই তাঁর। বই প্রকাশের পর সইশিকারিদের আবদার মিটিয়ে রাত দশটা অবধি সাক্ষাৎকার দিয়ে যান অমলিন হাসি রেখে। তিনি হেমা মালিনী। তামাম ভারতবাসীর মনে তিনি স্বপ্নের মতো সুন্দর।

Advertisement

অথচ শুরুয়াতটা এ রকম ছিল না। খুব ছোটবেলায় ঘরের কোণ, আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতো জীবন ছেড়ে তিনি পা দিয়েছিলেন শো-বিজের দুনিয়ায়। বলিউডের তাবড় তাবড় অভিনেতার সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে অভিনয় করেছেন। মঞ্চ কাঁপিয়েছেন নাচের ছন্দে। এমন সম্পর্কে জড়িয়েছেন, যা নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। তবু ভালবেসে বিয়ে করে আজ তিনি নিজের সংসারে পরিপূর্ণা। রাজনীতিতেও পা দিয়েছেন। এ সব কিছুর অন্দর মহলের কাহিনি নিয়েই রাম কমল মুখোপাধ্যায় লিখেছেন ‘হেমা মালিনী— বিয়ন্ড দ্য ড্রিম গার্ল’।

জীবনীমূলক বই এখন বিক্রির উপাদান হয়ে উঠেছে। তাই নিজের সম্পর্কে সত্যি কথা বলাটা কতটা জরুরি? ‘‘সত্যি কথাটাই তো বলা দরকার। আমার জীবনটা সহজ-সরল। আমাকে যা যা জিজ্ঞেস করা হয়েছে, তার সত্যিটাই বলেছি,’’ স্পষ্ট জবাব নায়িকার। সেই সহজ জীবনের হাত ধরেই কখনও ভাল সময় এসেছে, তো কখনও চড়াই। যেমনটা হয়েছিল ২০১৫-এ। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলেন এমপি হেমা। মৃত্যু হয়েছিল এক শিশুর। এত বছর পরেও সেই আতঙ্ক তাড়া করে বেড়ায় হেমাকে। ‘‘বারবার এটাই বোঝাতে চেয়েছি যে, আমার দোষ ছিল না। ওটা দুর্ঘটনা। আমার কপাল ফেটে রক্ত ঝরছে। পিঠে অসহ্য যন্ত্রণা। তারই মাঝে সেখানে এসে কেউ আমাকে ঘটনাস্থল থেকে চলে যেতে বলল। বাইরে তখন অনেক লোক। পরে বাচ্চাটির কথা শুনে কষ্ট পেয়েছিলাম। আমার কথাও কিন্তু কেউ জিজ্ঞেস করেনি,’’ মলিন হাসি হেমার মুখে।

Advertisement

দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের কেরিয়ারে ইন্ডাস্ট্রিকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন হেমা। বড় কোনও বদল চোখে পড়েনি? ‘‘এখনকার ছেলে-মেয়েরা কত অর্গনাইজড! একটা কাজ হাতে নিয়ে চটজলদি শেষ করে। তার পর অন্য কাজ। আমাদের সময়ে তো আগে একসঙ্গে অনেক কাজ হতো। প্রযোজকদের মধ্যে ঝামেলা লাগার জোগা়ড়। তার ওপর যদি শত্রুঘ্নের (সিংহ) সঙ্গে শ্যুটিং থাকত, তা হলে তো হয়েই গেল। ও আসত প্যাক আপের সময়ে। সেই শ্যুটিং শেষে দেরি করে যখন অন্য ছবির শ্যুটিংয়ে যেতাম, সেখানে হয়তো দেখতাম অমিতাভ দু’ঘণ্টা ধরে বসে আছে মাথা নিচু করে। সময়ের খুব কদর করেন অমিতাভ,’’ হেসে ফেললেন হেমা। তিনি চেয়েছিলেন বাংলা ছবিতেও কাজ করতে। বিশেষত সত্যজিৎ রায় ও তপন সিংহের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে ছিল তাঁর। নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র, নাচের অনুষ্ঠান, ছবির কাজ— এ সবের পরও তাঁর সময় থাকে পরিবারের জন্য। যেমন নাতি ডারিয়েনকে (অহনার ছেলে) তামিল শ্লোক শেখানোর, রং কিনে দেওয়ার সময় পান হেমা। এত কাজেও মন পড়ে থাকে সদ্যোজাত রাধ্যার (এষার মেয়ে) জন্য। কখন সেই একরত্তিকে আদর করবেন!

জীবনে এত কিছু পাওয়া আসলে ভগবানের দান। তাঁরই কষে দেওয়া জীবনছকে নিরন্তর কাজ করে যাওয়ায় বিশ্বাসী হেমা। কলকাতা ছাড়ার আগে শহরবাসীকে জানিয়ে গেলেন, এখনকার দিনে চলতে গেলে মেয়েদের হতে হবে গীতার মতো, যারা ছড়ি ঘুরিয়ে দুষ্টের দমন করবে। কিন্তু ঘরের কোনায় সে হবে সীতা। যত্নবান, ক্ষমাশীল আর ধৈর্যের প্রতিমূর্তি। ‘‘আফটার অল ইন্ডিয়ান উওম্যান!’’ হেসে ফেললেন ড্রিম গার্ল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement