ফিরব বললেই ফেরা যায়...

টিভিতে পুরনো জুটির বারবার ফেরার রহস্যবড় পরদার তারকাদের জন্য দর্শকের প্রেম যদি হয় রূপকথার মতো, তা হলে ছোট পরদার কলাকুশলী এক্কেবারে ঘরের ছেলে-মেয়ে।

Advertisement

রূম্পা দাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৭:৪০
Share:

‘রাঙিয়ে দিয়ে যাও’ ধারাবাহিকে জিতু ও টুম্পা

খুনসুটি, ভালবাসা, দজ্জাল শাশুড়ির প্যাঁচ পয়জার হোক বা ত্রিকোণ প্রেমের জটিলতা— বাঙালির ড্রয়িং রুমে প্রতি সন্ধেয় ঘাঁটি গেড়ে বসে বাংলা ধারাবাহিকের কত চরিত্র। একটা সময়ের পর মেগা সিরিয়ালের অভিনেতাদের দেখাটাই হয়ে ওঠে নিয়মিত অভ্যেস। বড় পরদার তারকাদের জন্য দর্শকের প্রেম যদি হয় রূপকথার মতো, তা হলে ছোট পরদার কলাকুশলী এক্কেবারে ঘরের ছেলে-মেয়ে।

Advertisement

ফেরার গল্প

Advertisement

বড় পরদার মতোই টিভিতেও হিট জুটিরা ফিরে আসে বারবার। সঞ্জু-ঝিল (‘তুমি রবে নীরবে’) হয়ে যায় কোহিনুর-ঝুমকো (‘জড়োয়ার ঝুমকো’)। মল্লার-কোমল (‘রাগে অনুরাগে’) ধরা দেয় বাবলু-শিউলি (‘রাঙিয়ে দিয়ে যাও’) হয়ে। একটা সময় জুড়ে পরদায় বারবার ফিরেছেন ভাস্বর চট্টোপাধ্যায় ও সোনালি চৌধুরী। তাঁদের পরদার রসায়ন দেখে দর্শক বাস্তবের জুটি ভেবেও ভুল করেছেন। সোনালি বললেন, ‘‘আমরা সিরিয়াল, টেলিফিল্ম মিলিয়ে ২০টারও বেশি কাজ করেছি। তার মধ্যে ১০টার বেশি জায়গায় আমাদের বিয়ের দৃশ্যও রয়েছে। আমাদের ব্যক্তিগত বন্ধুত্বটা খুব ভাল বলেই হয়তো আমরা সফল।’’ ‘তুমি রবে নীরবে’র মূক ঝিল ও সঞ্জুর প্রেম ভাষা পেয়ে ফিরেছিল ‘জড়োয়ার ঝুমকো’র মাধ্যমে। ‘সুবর্ণলতা’র পর বিশ্বনাথ বসু ও অনন্যা চট্টোপাধ্যায়কে আবার স্বামী-স্ত্রীর ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে ‘জয় কালী কলকাত্তাওয়ালী’তে।

সুবিধে-অসুবিধে

একটি ধারাবাহিক জনপ্রিয় হওয়ার পর শেষ হয়ে গেলে স্বাভাবিক ভাবেই দর্শকের মনে চরিত্রগুলোর নিয়মিত উপস্থিতির অভাব বোধ হয়। নতুন ধারাবাহিক শুরু হলেও পুরনো মুখের টান রয়েই যায়। তাই পুরনো জুটি ফিরে আসায় যেমন দর্শকের ভালবাসা বাড়ে, তেমনই সুবিধে হয় অভিনেতাদেরও। বিশ্বনাথ বসু বললেন, ‘‘একজন অভিনেতার সঙ্গে কাজ করার সুবাদে আগে থেকেই জানা হয়ে যায়, তিনি কী ভাবে কাজ করেন। ফলে নতুন কাজ করার ক্ষেত্রে দু’পক্ষেরই সুবিধে অনেক। ‘সুবর্ণলতা’য় আড়াই বছর ধরে অনন্যার সঙ্গে কাজ করেছি বলে কমফর্ট জোন আছে।’’

পরদার পুরনো মুখ ফিরছেন মানেই যে সেটা রোম্যান্টিক জুটি হবে, তা নয়। ঋষি কৌশিক ও অপরাজিতা ঘোষ দাসের ‘একদিন প্রতিদিন’ জনপ্রিয় হয়েছিল। তার পর ‘এখানে আকাশ নীল’। বহু বছর পর ‘কুসুমদোলা’য় তাঁদের ফের দেখা যাচ্ছে। রণজয়-রূপকথার মধ্যে শুরুতে রোম্যান্টিক অ্যাঙ্গল থাকলেও পরে ছিটেফোঁটাও নেই। ঋষি বললেন, ‘‘পুরনো সহকর্মীর সঙ্গে আবার কাজ করার বিষয়টা খানিকটা চেনা পিচে খেলার মতো।’’

ঋষি ও অপরাজিতা

চরিত্রায়ন ও টিআরপি

পছন্দের জুটি আবার ফিরে এলে দর্শকরা সেটা বেশি করে দেখেন। তার প্রভাব নিশ্চয়ই পড়ে সপ্তাহান্তের টিআরপিতে। একটি চ্যানেলের ক্লাস্টার্ড বিজনেস হেড সম্রাট ঘোষ বললেন, ‘‘নতুন ধারাবাহিকের ক্ষেত্রে আগে চরিত্রকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। তার পর চরিত্রের মুখ খোঁজা হয়। পুরনো জুটির কথা মাথায় এলে, তাঁদেরও স্ক্রিন, লুক টেস্ট করতে হয়। জুটিকে ফিরিয়ে আনতে চাইছি বলেই ফেরানো হয় না। ‘রাগে অনুরাগে’তে জিতু কামাল ও টুম্পা ঘোষ ভাল অভিনয় করেছিল। ‘রাঙিয়ে দিয়ে যাও’তে দেখা হয়েছে, ওঁদের বাবলু-শিউলির চরিত্রে মানাচ্ছে কি না।’’ ‘জয় কালী কলকাত্তাওয়ালী’র পরিচালক ভিক্টো বললেন, ‘‘পুরনো জুটি দর্শকের ভাল লাগবে, সেই প্রত্যাশা থাকেই। এ ছাড়া সেই জুটি আগে কাজ করার দরুন তাঁদের কাজও আরও স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে যায়।’’

দর্শক টিআরপির ওঠানামা নিয়ে চিন্তিত নন। পছন্দের মুখগুলোকে পরদায় ফিরতে দেখেই তাঁরা খুশি। তাই ছোট পরদার কিছু কিছু জুটি কাকতালীয় ভাবে হলেও ‘ফিরব বললেই’ ফিরে আসতে পারে। তাঁদের সম্বল একটাই— অগুনতি দর্শকের ভালবাসা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন