প্রত্যুষা ওখানে তিতান, শোকে পাথর জামশেদপুরের সোনারি

কেউ ভেবেছিলেন ‘এপ্রিল ফুল’ করছে কেউ। কেউ বা ভেবেছিলেন অন্য কোনও প্রত্যুষার কথা বলা হচ্ছে। জামশেদপুরের সোনারি এলাকার বাসিন্দারা প্রথমে কেউ বিশ্বাসই করতে পারেননি যে তাঁদের ‘তিতান’ এভাবে ফাঁকি দিয়ে চলে যাবে।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

রাঁচি শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৬ ১৮:৫২
Share:

প্রত্যুষার পারিবারিক অ্যালবাম থেকে পাওয়া ছবি।

কেউ ভেবেছিলেন ‘এপ্রিল ফুল’ করছে কেউ। কেউ বা ভেবেছিলেন অন্য কোনও প্রত্যুষার কথা বলা হচ্ছে। জামশেদপুরের সোনারি এলাকার বাসিন্দারা প্রথমে কেউ বিশ্বাসই করতে পারেননি যে তাঁদের ‘তিতান’ এভাবে ফাঁকি দিয়ে চলে যাবে। তিতানের ছোটবেলার বন্ধু থেকে পাড়ার কাকা, দাদারা সবাই শুধু বলছেন: এত উচ্ছল, মিশুকে স্বভাবের মেয়েটার মনে কী এমন ঝড় বইছিল যে আমাদের কারও সঙ্গেই তা ভাগ করে নিতে পারল না।

Advertisement

জামশেদপুরে প্রত্যুষাকে তিতান বলেই চেনে তাঁর পাড়া। তিতানের এক আত্মীয়, কিংশুক মুখোপাধ্যায় বলেন, “খবরটা গত কাল বিকেলে শুনেই ছুটে গিয়েছি ওদের বাড়ি। তিতানের সব আবদার তো আমার কাছেই ছিল। ওর বাবার থেকে বেশি আবদার আমার কাছে করত।’’ শেষবার জামশেদপুরে এসেছিল গত বছর জানুয়ারি মাসে। ওর এক কাকার ছেলের পৈতের অনুষ্ঠানে। কিংশুকবাবুর কথায়, ‘‘তখন বলল, কাকু চল ফুচকা খাই। মুম্বইয়েতো এই সুযোগ হয় না। আমরা দু’জন রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে ফুচকা খেলাম। তবে শুধু ফুচকাই নয়, পরের দিন আমাদের বাড়িতে এল ওর আরেকটা প্রিয় খাবার, আলু পোস্ত খেতে।”

কিংশুকবাবু পেশায় ম্যাজিশিয়ান। প্রত্যুষার কথা বলতে বলতে তাঁর গলা ধরে আসছিল। তিনি বলেন, “কত কথাই তো এখন মনে পড়ছে। ছোট বেলা থেকেই ওকে কোলেপিঠে মানুষ করেছি। আমার ম্যাজিক শোতে ওকে নিয়ে যেতাম। ও বলত, কাকু আমাকেও ম্যাজিক শিখিয়ে দাও। কত বিষয়েই যে ওর উৎসাহ ছিল।’’ তাঁর প্রশ্ন, এত জীবনমুখী একটা মেয়ে কী ভাবে আত্মহত্যা করতে পারে?

Advertisement

জামশেদপুর থেকে তিতানের মুম্বই পাড়ি দেওয়াটাকে যেন চোখের সামনে দেখতে পান জামশেদপুরের সোনারি এলাকার আর এক বাসিন্দা, বাণীপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। জামশেদপুরের টেগোর সোসাইটির শিক্ষক বাণীবাবুর কথায়, “ও টেগোর সোসাইটিতে সেভেন পর্যন্ত পড়েছিল। টিফিনে ওর সঙ্গে রোজ দেখা হতো। কত রকম আবদার করত! সেই আবদার তো এই সেদিনও করেছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমি বলতাম তুই তো এখন সেলিব্রিটি। এখনও আবদার করছিস? ও বলেছিল, তোমাদের কাছে আমি তো সেই তিতানই।” প্রত্যুষার মৃত্যুর খবর শুনে বাণীবাবুর চোখের সামনে ভেসে আসছে নানা স্মৃতি। তিনি বলেন, “ছোট থেকেই সাজগোজে খুব নজর ছিল। ওর বয়স তখন সাত কী আট হবে। আমাকে মাঝে মধ্যে বলত, আমি সুস্মিতা সেনের মতো হতে চাই। সুস্মিতা সেনের মতো চুল বাঁধা প্র্যাকটিস করত।”

জামশেদপুরে প্রত্যুষার পরিচিতরা জানাচ্ছেন ছোট থেকেই তার যে অভিনয়ের দিকে খুব ঝোঁক ছিল তা নয়। রোড শোয়ে নাটক করত। স্কুলের নাটকেও অভিনয় করেছে মাঝেমধ্যে। স্কুলে নাচের অনুষ্ঠান করত। তবে যাই করুক না কেন, নিজের হাসিখুশি ও মিশুকে স্বভাবের জন্য সবার কাছে প্রিয় হয়ে উঠত। প্রত্যুষার মা, বাবাও কোনও দিন ওর কোনও কাজে বাধা দেয়নি।

গত কাল সন্ধে থেকেই জামশেদপুরের সোনারি এলাকা যেন কালো মেঘে ঢেকে গিয়েছে। ওই পাড়ার আর এক বাসিন্দা ও প্রত্যুষাদের বাড়ির ঘনিষ্ঠ কুন্তল সেন বলেন, “আমি খবরটা গত কাল বিকেল চারটে নাগাদ শুনি। বিশ্বাস না করেও ওর বাড়িতে ছুটে যাই। ওর মা, বাবা গত কাল রাতেই কলকাতা চলে যায়। তিতানের মৃত্যু সংবাদ শুনে কেমন যেন অসহায়ের মতো লাগছিল। ও তো নিজের মেয়ের মতোই ছিল।”

জামশেদপুর তার নিজের মেয়েকে হারিয়ে এখন একটাই প্রশ্নই করছে। কেন এই অঘটন? ঘটনার তদন্ত করতেই হবে। তাঁদের কথায়, হাসিখুশি, উচ্ছল মেয়েটাকে কোনও দিনই কেউ দুঃখে ভেঙে পড়তে দেখেনি। সেই মেয়েটাই কিনা তাঁদের এত দুঃখ দিয়ে অকালে চলে গেল!

আরও পড়ুন, প্রত্যুষার মৃত্যুতে শক্ড্, বললেন সলমন!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন