ডেটটা তা হলে কবে?
(হেসে) কীসের ডেট?
আনন্দplus-এর আমার সিনিয়র সহকর্মী বলছিলেন ডিসেম্বরে নাকি ডেট !
কী আছে ডিসেম্বরে? কীসের ডেট?
আপনার বিয়ের..
(হাসি) আপনার ওই আনন্দplus-এর সহকর্মীকে বলুন জার্নালিজম ছেড়ে গোয়েন্দাগিরি করতে। বিয়ে করব তো বটে, তবে এই ডিসেম্বরে নয়...
তা হলে পরের বছর জানুয়ারি?
নাথিং ইজ ফিক্সড। মোটামুটি বিয়ে যে করব সেটা ফাইনাল। কিন্তু ডেট ফিক্স করিনি।
আপনার বয়ফ্রেন্ডের নাম তো অর্জুন...
ইয়েস, অর্জুন দেব। গুয়াহাটিতে বাড়ি।
গত এক সপ্তাহ ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায় এপিসোড দেখে গুয়াহাটি শুনলেই কেমন লাগে...
হা হা। আমার কিছু বন্ধু তাই বলছিল। কিন্তু আমার কোনও চিন্তা নেই।
আপনার বয়ফ্রেন্ড বাঙালি তো?
হ্যাঁ হ্যাঁ, অবশ্যই বাঙালি। সিলেটি। শুঁটকি মাছ খায়। আবার সুশিও ভালবাসে। আমি ভীষণ লাকি টু হ্যাভ ফাউন্ড অর্জুন।
আপনাদের এই লাভ স্টোরিতে রাইমা সেনের নাকি বিরাট হাত ছিল?
রাইমা বলেছে, না?
না, রাইমা বলেননি...
হ্যাঁ, আছে রাইমার হাত। কিন্তু এ ব্যাপারে আমি কিছুই বলব না। তবে ইতালিয়ান কনসাল জেনারেলের একটা পার্টিতে প্রথম মিট করি অর্জুনকে। সেই পার্টিতে দেব ছিল। ঋতুদি ছিল। রাইমা আমার দারুণ বন্ধু। রাইমা শুধু আমাকে বলেছে, ওর বিয়ের আগে যেন আমি বিয়ে না করি। আচ্ছা এটা কি শুধুই ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ইন্টারভিউ, নাকি...
তা কেন হবে! একটু ব্যক্তিগত, একটু কাজ... ফ্ল্যাকচুয়েট করবে ইন্টারভিউ...
বুঝেছি। এখনও অবধি তো ফ্ল্যাকচুয়েট করছে না, তাই বলছি... (হাসি)
এ বার করবে। ‘নাটকের মতো’তে তো ভূয়সী প্রশংসা আপনার। অনেকে আপনার কামব্যাক বলছেন...
হ্যাঁ ‘নাটকের মতো’ ছবিটা কিন্তু ভীষণ ডিফিকাল্ট ছিল। আমি ‘খেয়া’র সঙ্গে একেবারে ইনভল্ভড হয়ে পড়েছিলাম। প্রায় পাঁচ মাস অন্য কোনও কাজ করিনি। আর প্রশংসা যা পেয়েছি, তা অকল্পনীয়। এত ভালবাসা পেয়ে এক কথায় আমি ওভারহোয়েল্মড। দেবুদা (দেবজ্যোতি মিশ্র) আমাকে বলেছে, এটা সিনেমা নয়, একটা সময়ের দলিল। কিন্তু কামব্যাক বললেন কেন?
কারণ আছে। ৯ সেপ্টেম্বর ২০১১ আনন্দবাজার পত্রিকায় ‘ছত্রাক’য়ের সেই খবর বেরোনোর পর হঠাৎ করে পাওলিকে নিয়ে সাঙ্ঘাতিক নেগেটিভিটি শুরু হয়েছিল। এখন সেপ্টেম্বর ২০১৫। অনেকটা পাল্টে গেল চার বছরে আপনার জীবনটা।
হ্যাঁ, সেই সেপ্টেম্বর আর এই সেপ্টেম্বরে আকাশপাতাল তফাত। সেই সময়টা হঠাৎ করে সব কী রকম পাল্টে গিয়েছিল একদিনে। কাছের মানুষদের ব্যবহার যে এত বদলে যাবে বুঝিনি। সেটা খুব দুঃখ দিয়েছিল। আজকে ‘নাটকের মতো’তে আমার অভিনয় প্রশংসিত... ব্যক্তিগত জীবনে আমি হ্যাপি। পুরোটাই একটা জার্নি।
আরও ভাল অভিনেত্রী হতে সাহায্য করেছে এই জার্নিটা? বঞ্চনা, গুঞ্জন থেকে আজকের স্বীকৃতি...
অবশ্যই সাহায্য করেছে। যে কোনও অভিনেতা তো ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতাই কাজে লাগায় তার অভিনয়ে। আমি কিন্তু কিছু রিগ্রেট করি না। ‘ছত্রাক’ ভুল ছিল, সেটাও মানি না। কিন্তু ‘ছত্রাক’য়ের ইনসিডেন্ট আমাকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। আমি গুম মেরে থাকতাম। আজকে অভিনয়ের সময় কোনও রিঅ্যাকশনে, কোনও পজে, সেই টার্বুলেন্ট সময়ের অভিজ্ঞতা অবশ্যই কাজে লাগাই।
অর্জুন দেখেছেন ‘ছত্রাক’য়ের সেই ক্লিপটা?
আমি তো ‘ছত্রাক’ ছবিটা আগে দেখিনি। অর্জুনের সঙ্গেই প্রথমবার দেখেছি ছবিটা। সঙ্গে ওই সিনটা।
চার বছরে কোনও দিন ওই ক্লিপটা দেখেননি...
কী দেখব? আমি তো অভিনয় করেছি। দেখতেও ইচ্ছে হয়নি। অর্জুনের সঙ্গেই প্রথম দেখেছি।
অর্জুনের রিঅ্যাকশন কী ছিল?
ও বলল, হি হ্যাজ নো প্রবলেম উইথ দ্য সিন। সঙ্গে এটাও বলল, ফালতু ফালতু কেন এটার পাইরেটেড ভার্সান বেরিয়েছিল কে জানে!
কিন্তু এটা মেনে নেওয়া তো সহজ নয়। বেশির ভাগ পুরুষই খুশি হবেন না এটা জেনে যে, পুরো পৃথিবী তাঁর বৌ বা গার্লফ্রেন্ডকে সম্পূর্ণ বিবস্ত্র অবস্থায় দেখে ফেলেছে...
হ্যাঁ, আমি জানি। ইট ইজ নট ইজি। কিন্তু অর্জুন মানুষটাকে এই জন্যই আমি এত ভালবাসি। হি ইজ আ ডিফারেন্ট পার্সন অলটুগেদার। ও জানে আমার সিনেমাবোধ সেই সময় যা ছিল, আজও তাই আছে। আমার এই বোধটাকে ও রেসপেক্ট করে। এবং তাই জন্যই আমার ওর প্রতি যতটা ভালবাসা, ঠিক ততটাই রেসপেক্ট রয়েছে। আমার থেকে যদিও ছোট, হিজ ম্যচিওরিটি ইজ অ্যামেজিং।
কত ছোট?
পাঁচ বছর।
‘ছত্রাক’ নিয়ে বোধ হয় ওঁর অসুবিধে নেই কারণ সেই সময় উনি ছিলেন না আপনার জীবনে। কিন্তু আজকে নাকি অর্জুন নানা রেস্ট্রিকশন এনেছেন আপনার জীবনে...
(হেসে) সেই আনন্দplus-এর সিনিয়র সহকর্মী নিশ্চয়ই?
সাংবাদিকদের তো সোর্স বলতে নেই।
বুঝে গেছি আপনার সোর্স। (হাসি) না না কোনও রেস্ট্রিকশন আনেনি অর্জুন। বলছি না, হি ইজ মাই বেস্ট ফ্রেন্ড। সব নিয়ে ওঁর সঙ্গে কথা বলতে পারি। তাই এত হ্যাপি থাকি ...
আপনার হ্যাপি থাকাটা চোখে পড়ার মতো। ‘ছত্রাক’য়ের পর যখনই কথা হয়েছে মনে হয়েছে আপনি ভীষণ নেগেটিভ স্পেসে রয়েছেন। অসম্ভব সিনিক্যাল। নিজের ছবি ছাড়া সব ছবি খারাপ, এ রকম একটা মাইন্ড সেট। এটা কি সেই সময় আপনার ঘনিষ্ঠতম পরিচালকের ইনফ্লুয়েন্স ছিল বলে?
যার কথা বলছেন তার ইনফ্লুয়েন্স ছিল না। সেই সময় সিনেমা নিয়ে একটা পাগলামো আমাকে গ্রাস করেছিল। খালি মনে হত আরও কী ভাবে অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে পুশ করব। আজও পাগলামিটা যে নেই তা নয়। কিন্তু সেটার মধ্যে একটা ব্যালান্স এসেছে।
লোকে সেই সময় বলত আপনি প্রেম করছেন বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে।
‘নাটকের মতো’ ছবিতে একটা ডায়লগ আছে, ‘‘দু’জন ক্রিয়েটিভ মানুষ একটা পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে গেলে একটা বন্ডিং তৈরি হয়। সেই বন্ডিংটা কিন্তু প্রেম নয়।’’ বাপ্পাদার সঙ্গে দু’টো ছবি করেছি। ভুলে যাবেন না বাপ্পাদা আমাকে রবীন্দ্রনাথ করার সুযোগ দিয়েছিল। ‘এলার চার অধ্যায়’ আমার জীবনে খুব ইম্পর্ট্যান্ট একটা ছবি। সেই সময় আমাকে দিয়ে যে রবীন্দ্রনাথের গল্পের নায়িকা করা যায় এটা কেউ ভাবেনি। তাই বাপ্পাদার সঙ্গে একটা বন্ডিং তৈরি হয়েছিল। কিন্তু শুধু আলাদা করে বাপ্পাদা নয়। আমার সব পরিচালকের সঙ্গেই একটা বন্ডিং হয়। দেবেশদা, কমলদা...
কাজ না করলেও তো বন্ডিং তৈরি হয় আপনার?
(হাসি) আবার ফ্ল্যাকচুয়েট করছে...
হ্যাঁ করছে। সৃজিতের সঙ্গে তো কোনও ছবি করেননি, কিন্তু পাটায়াতে রাতে সমুদ্রস্নানে গেলেন...
(হাসি) আমি একা গিয়েছি নাকি! কেজি (কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়) ছিল...
বাজে কথা। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় ডাঙায় ছিলেন...
হ্যাঁ, কৌশিকদা ডাঙায় ছিল, কিন্তু রানাদা (রানা সরকার) ছিল। আপনি ছিলেন। ওটাকে গণস্নান আপনারা বানিয়েছিলেন। শুধু আমার আর সৃজিতের স্নান কোনও দিন ছিল না।
সৃজিতের পরের ছবিতে নাকি আপনি অভিনয় করছেন ?
কই জানি না তো! তবে সৃজিতের সঙ্গে কথা হয় প্রায়ই। যখন ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পেল, খুব খুশি হয়েছিলাম। যখন অ্যাক্সিডেন্ট হল, খুব দুঃখ পেয়েছিলাম।
গিয়েছিলেন ওঁকে দেখতে? হিরোইনরা তো প্রায় তীর্থে যাওয়ার মতো সৃজিতের বাড়িতে যাচ্ছেন...
আমি যিশুর স্ত্রী নীলাঞ্জনার সঙ্গে ফলটল নিয়ে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখলাম, পর্ক মোমো খাচ্ছে। পর্ক মোমো নিয়ে গেলেই ভাল হত। (হাসি)
‘নাটকের মতো’র পর আর কী কী ছবি করছেন?
‘অরণি তখন’ বলে একটা বাংলা ছবি করছি। এ ছাড়া ঋক বসু-র ‘দেবী’ বলে দুর্দান্ত ইন্টারেস্টিং একটা ছবি করছি। এটা ‘দেবদাস’য়ের একটা ডিকনস্ট্রাকশন। তা ছাড়া কমলদার ছবিটা করলাম বুম্বাদার সঙ্গে। দু’জনের একশো এপিসোডের একটা সিরিয়ালের কথাও চলছে।
শুনছিলাম ছবিতে নাকি প্রচুর হট সিন আপনার আর প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের...
সে তো ছবি দেখে জানতে পারবেন। তবে বুম্বাদার সঙ্গে কাজ করার মধ্যে একটা কমফোর্ট ফ্যাক্টর আছে। কমার্শিয়াল বাংলা ছবি তো করেছি বুম্বাদার সঙ্গে।
আবার ‘মনের মানুষ’ও করেছি। তাই বুম্বাদার সঙ্গে একটা ন্যাচারাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং আর কেমিস্ট্রি আছে।
শোনা যাচ্ছে বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের পরের ছবিও আপনি করছেন?
গত সপ্তাহেই কথা হয়েছে একবার। ফাইনাল এখনও কিছু হয়নি। কিন্তু খুব ইচ্ছে আছে ছবিটা করার...
আর হিন্দি ছবি করবেন না?
একটা হিন্দি ছবি করছি। ইন্ডি ফিল্ম। পরিচালক শিলাদিত্য মৌলিক।
ওই নামটা তো তাহলে আর পিছু ছাড়ল না আপনার। শিলাদিত্য?
বাপ রে বাপ! কোথা থেকে কোথায় লিঙ্ক করলেন! তবে ওই যে বললাম মৃত্যু, আনন্দ, খ্যাতি, সবটাই নিয়ে আজকের আমি। দশ বছর হয়ে গেল এই জার্নির।
মৃত্যু মানে তো অভিনেতা শিলাদিত্য পত্রনবিশের মৃত্যু?
হ্যঁ, ওর মৃত্যু। আমার লাইফটা কিন্তু ওপেন বুক। আমি কোনও দিন কিছু লুকোইনি। যে কোনও সম্পর্কের ব্যাপারে আমি অনেস্ট থেকেছি...
ফিরে তাকালে কি মনে হয় বিক্রমের সঙ্গে সম্পর্কটা ভুল ছিল...
না, মনে হয় না।
সেই সময় বিক্রম স্ট্রাগলিং অ্যাক্টর। আপনি নামী হিরোইন। সামঞ্জস্য ছিল?
এটা পরে আমাকে অনেকেই বলেছেন। কিন্তু আমি যখন কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব করি তার ব্যাঙ্ক ব্যালান্স কী তার স্টেটাস কিন্তু দেখি না। মানুষটাকে দেখি। কিন্তু কিছু কিছু জিনিস বোধহয় হওয়ার নয়।
অর্জুন জানেন আপনার সম্পর্কগুলোর ব্যাপারে?
ইয়েস। আমি কোনও দিন কিছু লুকোইনি। অর্জুনের কাছ থেকে তো লুকোবই না। আর শুধু ও না, ওর ফ্যামিলির সঙ্গে আমার একটা সাঙ্ঘাতিক বন্ডিং। ওর মায়ের সঙ্গে সে দিন কামাক্ষ্যা মন্দিরে গেলাম। ওঁরা আমাকে ভীষণ ভালবাসেন। শপিং করি ওঁদের সঙ্গে।
কী কিনে দিলেন ওঁরা?
মেখলা। আরও অনেক কিছু...(হাসি)
বিয়ে করে কলকাতায় থাকবেন, না গুয়াহাটি?
না, না, কলকাতায় থাকব। ওঁদের কলকাতায় বাড়ি আছে। তা ছাড়া গুয়াহাটি তো রইলই। প্ল্যান আছে প্রচুর ঘুরব আমরা।
আপনারা গিয়েছিলেন তো ছুটিতে।
হ্যাঁ, ব্যাঙ্কক গিয়েছিলাম, সিঙ্গাপুর গিয়েছিলামা। পরের মাসে আমার জন্মদিনে ও আমাকে হংকং আর ম্যাকাও নিয়ে যাচ্ছে। টাচ উড, লাইফ ইজ গুড।
টাচ উড। শেষ প্রশ্ন। ডেট যখন বললেন না, তা হলে এটা বলুন হানিমুনটা কোথায়?
কোনও প্ল্যানিং হয়নি তো।
আপনাকে অর্জুন ম্যারেজ প্রোপোজ করেছেন, একসঙ্গে বেড়াতে যাচ্ছেন আপনারা। হানিমুনের প্ল্যান হয়নি, এটা কেউ বিশ্বাস করবে...
অনেকগুলো জায়গা আছে লিস্টে। কোনও একটা ঠিক নেই।
আপনার লিস্টে এক নম্বর জায়গা কোনটা?
নিউজিল্যান্ড। তবে আমাদের যা শিডিউল, শেষে দেখলেন টাইমই হল না। (হাসি) তখন দেখবেন হয়তো কাজিরাঙ্গা ন্যাশনাল পার্কে আমাদের হানিমুন হল।
ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।