বিক্রম চট্টোপাধ্যায়।
বিক্রম-সোনিকা কাণ্ডে বাংলা ইন্ডাস্ট্রির মেরুকরণ স্পষ্ট। কিন্তু তার মাঝেও একটা প্রশ্ন উঠে আসছে। পরদায় দেখা হ্যান্ডসাম, ভদ্র ছেলেটি আসলে কেমন? সাধারণ মানুষের মধ্যেই এ প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। টলিউডে এর জবাব খুঁজতে বেরোলেও একটা বিভাজন চোখে পড়ছে।
ফিল্ম-টেলিভিশন দুনিয়ার তারকাদের নিয়ে এমনিতেই অনেক গল্পকথা শোনা যায়। পার্টি-মদ্যপান-নৈশযাপন... যার অনেকটা সত্যি। অনেকটা অতিরঞ্জিত। ওই ঘটনার দিন বিক্রম চট্টোপাধ্যায় মদ খেয়েছিলেন কি না সেটা নিয়েও বিতর্ক চলছে। বিক্রম প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে পুলিশের জেরার মুখে বয়ান বদল করেন। যে পার্টিতে তাঁরা গিয়েছিলেন, সেখানে উপস্থিত অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় সোচ্চার হন এবং জানিয়ে দেন, পার্টিতে তাঁরা বিক্রমকে মদ্যপান করতে দেখেছেন।
অভিনেতার এক পুরনো বন্ধু জানাচ্ছেন, একটা সময়ে বিক্রম মদ্যপান থেকে শতহস্ত দূরে থাকতেন। ওই বন্ধুর সঙ্গে ব্যক্তিগত কারণে বিক্রমের আর যোগাযোগ নেই। সেই বন্ধুর কথায়, ‘‘ওকে কোনও দিনই মদ খেতে দেখিনি। খুব ফিটনেস সচেতন ছিল। সিগারেটও খেত না। বাকি বন্ধুরা খুব জোরাজুরি করলে বড়জোড় একটা বিয়ার। সে এখন পার্টিতে গিয়ে ড্রিঙ্ক করে বেসামাল হচ্ছে দেখলে, একটু অবাক লাগে। জানি না, সাফল্য মানুষকে বদলে দেয় কি না!’’
আরও পড়ুন:হিন্দি ভুতুর মুম্বই-পাড়ি
এ সন্দেহ আরও অনেকেরই রয়েছে। ছোট পরদার ‘সাত পাকে বাঁধা’ ধারাবাহিক দিয়ে বিক্রমের উত্থান। বড় পরদাতেও ছবি করেছেন। মৈনাক ভৌমিকের ‘বেডরুম’, বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ‘এলার চার অধ্যায়’। যেটা করার সময়েই বিক্রমের সঙ্গে পাওলির সম্পর্ক হয়। একটা সময় বিক্রম পরিচিত ছিলেন পাওলির প্রেমিক হিসেবেই। তার পর দু’জনের বিচ্ছেদ ইত্যাদি... বাংলা ‘বিগ বস’ বিক্রমকে ফের খবরে নিয়ে আসে। তবে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়েছিলেন ‘ইচ্ছেনদী’ ধারাবাহিক দিয়ে। অনুষ্ঠান, মাচা, পারিশ্রমিক নিয়ে ঘরোয়া পার্টি ইত্যাদি মিলিয়ে বেশ ব্যস্ত ছিলেন।
বিক্রমের এক বান্ধবী ও অভিনেত্রীর কথায়, ‘‘ওর মতো ভদ্র ছেলে খুব কম হয়। তা বলে পার্টি করবে না, মজা করবে না, এমন তো নয়। এ ভাবে কারও চরিত্র বিচার করা উচিত নয়।’’ তবে ওই বান্ধবী এ-ও জানালেন, নাইটক্লাব বা পাবে বিক্রমের মদ খেয়ে বেসামাল হওয়ার ঘটনা তিনি দেখেছেন! সিরিয়াল পাড়ার সকলেই অবশ্য অভিনেতার পাশে দাঁড়াচ্ছেন।
বিক্রমকে ছ’বছর ধরে চেনেন অভিনেতা অঙ্কুশ। তাঁর কথায়, ‘‘আলাপের প্রথম দিন ওকে যেমন দেখেছিলাম, এখনও তাই। কাজের প্রতি প্রচণ্ড ডেডিকেটেড। সাফল্য ওকে বদলে দিয়েছে, এ কথা আমি অন্তত বলব না।’’ বিক্রমের সঙ্গে অনেক বার পার্টি করেছেন অঙ্কুশ। কিন্তু কোনও দিন মদ্যপান করতে দেখেননি। বললেন, ‘‘আমি বাইরে পার্টিও করি না। ড্রিঙ্কও করি না। আমার বাড়ির পার্টিতে ও সবের বন্দোবস্ত থাকে না। বিক্রম তো কোনও দিন এসে বলেনি, ভাই ড্রিঙ্ক নেই কেন? এমনও হয়েছে, বিক্রম কোনও পার্টি থেকে ঘুরে আমার বাড়িতে এসেছে। বিন্দুমাত্র বেসামাল দেখিনি ওকে।’’
সাফল্য ধীরে ধীরে আসছিল। বড় পরদাতেও পরপর কাজ পাচ্ছিলেন। সামনেই তাঁর ‘মেঘনাদবধ রহস্য’ মুক্তি পাচ্ছে। যে ছবির প্রমোশনে তাঁকে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। কেরিয়ারের এই সময় এমন একটা ঘটনা বিক্রমকে যে প্যাঁচে ফেলে দিল, সেটা স্বীকার করছেন অনেকেই।
অঙ্কুশ প্রথম দিন থেকেই বিক্রমের পাশে ছিলেন, এখনও আছেন। ‘‘সব দেখে শুনে কী মনে হচ্ছে বলুন তো, বিক্রম বেঁচে গিয়ে যেন অন্যায় করেছে!’’