‘বিসর্জন’-এর পোস্টারে জয়া।
‘বিসর্জন’। নামটাতেই কোথাও জড়িয়ে থাকে মনখারাপ। সেই মনখারাপ-ই সঙ্গী পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের আসন্ন ছবিতে। মুক্তি পাবে আগামী ১৪ এপ্রিল। পোস্টারেই পরিষ্কার এ ‘বিসর্জন’ রবীন্দ্রনাথের নয়। মৌলিক গল্প নিয়েই ছবি করেছেন পরিচালক। কিন্তু মনখারাপিয়া সুর ছড়িয়ে আছে গানে। ছড়িয়ে আছে এ ছবির অকালপ্রয়াত সঙ্গীতপরিচালক কালিকাপ্রসাদের স্মৃতিতে। কৌশিক বলছিলেন, ‘‘মৃত্যুর গান, দুঃখের গান— সব ছাপিয়ে এখন কালিকার মুখই ভেসে উঠছে।’’ ঠিক একই অনুভূতি জয়া আহসানেরও। এ ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে রয়েছেন অভিনেত্রী। বাংলাদেশ থেকে শেয়ার করলেন তাঁর ‘বিসর্জন’ যাত্রা।
কালিকাপ্রসাদকে ব্যক্তিগত ভাবে চিনতেন?
না, ব্যক্তিগত ঠিক নয়। কাজের সূত্রে আলাপ হয়েছিল কালিকার সঙ্গে। এই ছবিটা করতে গিয়ে যখন দেখা করলাম অসাধারণ ছিল সেই মুহূর্তগুলো। ওঁর গান আরও ইন্সপায়ার করেছে আমাকে। খুব ভুল না করলে প্রথম দিন শুটিংয়ে ছিলেন। সল্টলেকে ডাবিংয়েও দেখা হয়েছিল।
দুর্ঘটনার খবরটা বাংলাদেশে বসেই শুনেছিলেন?
হ্যাঁ, এখানেই একজন বললেন আমাকে। আমি তো বিশ্বাসই করিনি। তারপর কৌশিকদার সঙ্গে ফোনে কথা হয়। উনি বলেন, যা শুনেছ ঠিক শুনেছ। ফোন ধরে কিছুক্ষণ চুপ করে ছিলাম। কোনও কথা বলতে পারিনি। এমনটা হতে পারে না। এমনটা কী করে হল? কেমন যে কাটছে বলতে পারব না। ভীষণ শকড আমরা।
আরও পড়ুন, ইন্ডাস্ট্রিতে আমরা সবাই একে অন্যের পিঠ চুলকোচ্ছি
বাংলাদেশেও তো কালিকাপ্রসাদের জনপ্রিয়তা ছিল।
এখানে তো ভীষণই জনপ্রিয় ছিলেন। মাত্র একটা ছবি ‘ভুবন মাঝি’ করে চলে গেলেন। দোহারের গানেরও ভীষণ ভক্ত আমি। আসলে আমরা তো সহযাত্রী। ‘বিসর্জন’-এ ইমোশনাল জায়গা থেকে জড়িয়ে ছিলেন কালিকাদা। আমিও জড়িয়ে আছি। মনে হচ্ছে, ওঁনাকেই যেন বিসর্জন দিলাম। সবটা ঠিক মত শেষ করে দিয়ে যেন চলে গেলেন।
এই ছবির সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন কালিকাপ্রসাদ।
কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে এটাই তো আপনার প্রথম কাজ।
পরিচালক হিসেবে কৌশিকদার সঙ্গে অবশ্যই প্রথম কাজ। কিন্তু এর আগে অরিন্দমদার ‘আবর্ত’তে স্ক্রিন শেয়ার করেছিলাম।
পরিচালক হিসেবে কৌশিককে কেমন লাগল?
কৌশিকদার সঙ্গে কাজ মানে ভাল একজন অভিনেতাকে পরিচালক হিসেবে পাওয়া। কাজের স্টাইলটা একদম আলাদা। আর পুরো টিমটার অসাধারণ সিঙ্ক। সকলের ওয়েভ লেন্থই যেন এক।
আপনার চরিত্রটা কেমন?
আমার চরিত্রের নাম পদ্মা। গ্রামের বিধবা মেয়ে। তার জীবনসংগ্রাম, প্রেম। এমন একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায় যার কোনও সংজ্ঞা নেই। দুই বাংলার কথাও এসেছে খুব ভাল ভাবে।
আরও পড়ুন, ‘পোশাক কোনও কোনও ক্ষেত্রে উত্তেজনা তৈরি করে, এটা মেয়েরাও জানে’
ছবিটার ইউএসপি কী?
আমি তো বলব অনেক দিন বাদে একটা সত্যিকারের প্রেমের গল্প দেখবেন দর্শক।
বিসর্জন শব্দটা শুনলে প্রথম কী মনে হয়?
ছোটবেলায় দেখা দুর্গা ঠাকুরের বিসর্জনের দৃশ্য। তবে সবার জীবনেই হয়তো কিছু না কিছু বিসর্জন রয়েছে।
‘বিসর্জন’-এর একটি দৃশ্যে জয়া।
যেমন? কোনও ব্যক্তিগত বিসর্জনের কথা বলতে চাইছেন?
দেখুন কারও জীবনই হয়তো পরিপূর্ণ নয়। কাজের ইঁদুর দৌড়ে হয়তো আমরা নিজের সত্ত্বা হয়তো বিসর্জন দিয়ে ফেলি। অজান্তেই হয়তো দিয়ে ফেলি। বলতে পারি না। বুঝতে পারি না। স্ট্রাগলের মধ্যে হয়তো অনেক বিসর্জন থাকে। তাই কী হারিয়েছি হয়তো বুঝতে পারি না।
হিন্দিতে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘রাজকাহিনী’ মুক্তি পাচ্ছে আর ক’দিন পরেই। দেখবেন?
নিশ্চয়ই দেখব। ‘রাজকাহিনী’র অন্য একটি ইমেজ দেখব বলে অপেক্ষা করছি।
আরও পড়ুন, ‘যাঁরা সমালোচনা করছেন তাঁরাই নিয়মিত প্রত্যেকটা এপিসোড দেখছেন’
বাংলায় আপনার সঙ্গেই যাঁরা অভিনয় করেছিলেন, কেউ কেউ বলেছেন, ছবিটা না করলেও কোনও সমস্যা ছিল না। আপনার এ বিষয়ে কী মত?
দেখুন, অনেক চরিত্র থাকার ফলে হয়তো সকলেরই অভিনয়ের স্পেস কম ছিল। ফাইনাল এডিটে কিছু দৃশ্য হয়তো বাদ পড়ে গিয়েছে। কিন্তু ছোট জায়গাতে অভিনয় করাও তো চ্যালেঞ্জ।
আপনার কখনও এমন মনে হয়নি বলছেন?
ডেফিনেটলি চরিত্র বড় হলে আরও ভাল লাগত। কিন্তু পুরোটাই পরিচালকের হাতে। তবে আমার মনে হয় ছোট অবস্থানেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল আমার চরিত্র।
‘রাজকাহিনী’-র একটি দৃশ্যে জয়া।
আর কী কী কাজ করছেন এখন?
বাংলাদেশের কয়েকটা কাজ চলছে। সেগুলো শেষ করে আবার টলিউডে কনসেনট্রেট করব। তবে অন্য একটা কাজে হাত দিচ্ছি। সেটা আমার কাছে একদম নতুন।
কী সেটা? বলুন প্লিজ।
আমি প্রথমবার প্রযোজক হিসেবে কাজ শুরু করেছি। হুমায়ুন আহমেদের ‘দেবী’ অবলম্বনে তৈরি হবে ছবিটি। রহস্য গল্প। বাংলাদেশে এ ধরনের কাজ আগে খুব একটা হয়নি।
আরও পড়ুন, ‘বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত ডাকলেও যে লেজ উঠিয়ে যেতে হবে, তার কোনও মানে নেই’
আপনি অভিনয়ও করবেন তো?
হুম। আমার চরিত্রের নাম রানু। ব্যাস, এখনই আর কিছু জানতে চাইবেন না প্লিজ।
ছবি: টুইটারের সৌজন্যে।