Debojyoti Mishra

‘ভাষা রাজনীতির ঊর্ধ্বে’, ‘সোনার বাংলা’ গেয়ে বললেন জোনাকি! দেবজ্যোতির কাছে এটি সম্প্রীতির গান?

বাংলাদেশের পরিস্থিতি গত বছর থেকে উত্তপ্ত। তার পর থেকে এই গান আদৌ বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে থাকবে কি না, তা নিয়েও বিতর্ক শুরু হয়।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৫ ১৮:৫৫
Share:

দেবজ্যোতির সঙ্গীতায়োজনে জোনাকির গান। ছবি: সংগৃহীত।

‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি....’, ১৯০৫ সালে এই গান রচনা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ব্রিটিশ শাসকদের বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তখন সরব অখণ্ড বাংলা। সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে এই গানটি কলকাতা টাউন হলের একটি প্রবন্ধ পাঠের আসরে প্রথমবার গাওয়া হয়েছিল। পরে ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ এটিকে জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গ্রহণ করে। তবে বরাবরই এই গান দুই বাংলার বাঙালির প্রাণের সঙ্গে জড়িয়ে। তবে ২০২৫ সালে এই গান আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এর মধ্যেই এই গান গাইছেন জোনাকি মুখোপাধ্যায়। সঙ্গীতায়োজন করেছেন দেবজ্যোতি মিশ্র।

Advertisement

গত কয়েক দিনে বার বার শিরোনামে উঠে এসেছে বাংলা ভাষার অবস্থান। ভিন্‌ রাজ্যে বাংলায় কথা বলায় হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে বলেও অভিযোগ। সেই ঘটনার প্রতিবাদে পর পর মিছিল হয়েছে কলকাতার রাজপথে। এমনকি, গত ২১ জুলাইয়ের সমাবেশেও ওই সব ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করেছেন এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। এই সময়ে রবীন্দ্রনাথের এই গান গাওয়া তাৎপর্যপূর্ণ নয় কি? প্রথমেই জোনাকি বলেন, “এই গান আমার চিরকালের পছন্দের। এই গানের মধ্যে বাংলার সৌন্দর্য, সংস্কৃতি, আবেগ, ভূগোল, সব রয়েছে। এই গানের আবেগ আমাকে টানে। ১৮ বছর দিল্লিতে ছিলাম। সেখানে থেকে বুঝেছি, বাংলার প্রতি, নিজের শিকড়ের প্রতি আমার টান কতটা।”

বাংলা ভাষা মানে তাঁর কাছে আবেগ। ভাষা নিয়ে রাজনীতি করার পক্ষে তিনি নন। জোনাকি বলেছেন, “ভাষা বা আবেগ নিয়ে রাজনীতি চলে না। এটা রাজনীতির অনেক ঊর্ধ্বে। বাংলা ভাষা বলার কারণে হেনস্থা হতে হচ্ছে, এই ঘটনাগুলি কতটা সঠিক তা তো আমাদের কারও জানা নেই। আসলে কী ঘটেছিল, আমরা কেউই জানি না। কিন্ত বৃহৎ ভাবে দেখতে গেলে, সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি যে ভারতীয় ভাষা বলা হয়, সেটি হল বাংলা ভাষা।”

Advertisement

দেবজ্যোতি মিশ্র এই প্রসঙ্গে বলেন, “এই গানের প্রয়োজনীয়তা এখন দুর্নিবার। এই ‘সোনার বাংলা’ ভাষা উচ্চারণ করে আমরা বার বার রবীন্দ্রনাথের কাছে, বাংলা ভাষার কাছে এবং শিকড়ের কাছে ফিরছি। নিজের শিকড়ের কাছে ফেরা না গেলে, সারা বিশ্বের মাকেও সম্মান করা যায় না।”

গানের মুহূর্তে জোনাকি মুখোপাধ্যায়।

বাংলাদেশের পরিস্থিতি গত বছর থেকে উত্তপ্ত হয়। তার পর থেকে এই গান আদৌ বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে থাকবে কি না, তা নিয়েও বিতর্ক শুরু হয়। এমন পরিস্থিতিতে এই গান কতটা গুরুত্বপূর্ণ? এই প্রশ্নের উত্তরে দেবজ্যোতি বলেন, “এই গান আসলে সম্প্রীতি তৈরি করে। এই গান কোনও হিন্দু গাইছে, না কি মুসলিম গাইছে, তার উপর কিছু নির্ভর করে না। এই গান রাজনৈতিকতার কথা বলে। এই গান নৈতিকতার কথাও বলে। ঐতিহ্যের কথাও বলে। বাংলা ভাষা শেখায়, হৃদয় যেন সমৃদ্ধ থাকে।” বাঙালি জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এই গানের ভূমিকা রয়েছে বলে জানান সঙ্গীত পরিচালক।

দেবজ্যোতি আরও বলেন, “বাংলাদেশে আজ কোলাহল তৈরি হয়েছে, এই গান থাকবে না। পশ্চিমবঙ্গেও দেখতে পাচ্ছি, বাংলা ক্ষয়িষ্ণু। তাই ‘সোনার বাংলা’ যত উচ্চারিত হবে, তত আমরা ঐতিহ্যের কাছে ফিরতে পারব।”

‘সোনার বাংলা’ গানটি নিয়ে আগেও কাজ করেছেন পরিচালক। কিন্তু এ বার স্ত্রী জোনাকির জন্য সঙ্গীতায়োজন করলেন। দেবজ্যোতি বলেন, “জোনাকির কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথের গান অসম্ভব ভাল লাগে। জোনাকি দেবব্রত বিশ্বাসের কাছে গান শিখেছিলেন। এই গান আয়োজন করার সময়ে রবীন্দ্রনাথ ছাড়াও আরও তিন জনের কথা আমার মনে এসেছে। এই গানে ঋত্বিক ঘটকের বাংলা রয়েছে। জীবনানন্দ দাশের বাংলা রয়েছে। সামসুর রহমানের বাংলা রয়েছে। তাই খেয়াল রেখেছি, অতিরিক্ত বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার যাতে না হয়। সহজ সরল ভাবে একতারা, দোতারার সুর থাকে। বাংলা ভাষায় কথা বলি, গৌরব হয়। সেই দীপ্তি এই সঙ্গীতায়োজনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement