Joshojit Banerjee on Father's Day

‘আমার বাবা ঠোঁটকাটা, বাবা আমার জীবনের আদর্শ নয়’! পিতৃ দিবসে লিখলেন জয়জিৎ-পুত্র যশোজিৎ

আমাদের তিন জনের মধ্যে যে বিশ্বাস, সেটা কেউ ভাঙতে পারবে না। পারিবারিক ছবি পোস্ট করে আমরা এক আছি, সেটা বোঝাতে হবে না।

Advertisement

যশোজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২৫ ০৯:০০
Share:

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

বাবাকে ছোটবেলা থেকেই টিভিতে দেখছি। আমার বাবাকে টেলিভিশনে দেখা যায়! সিনেমায় তো ওমরিশ পুরীর মতো বাবাকে দেখেছি। বড্ড রাগী, অনুশাসনের কড়া গণ্ডিতে বেঁধে রাখেন ছেলেমেয়েকে। আবার ইরফান খানের মতো বাবাকেও দেখেছি। এ ছাড়াও দেখেছি ‘ইয়ে জাওয়ানি হে দিওয়ানি’ ছবিতে ফারুখ শেখের মতো বাবাকে। যে ছেলের স্বপ্নে উড়ান দিতে জানে, যে ছেলের বন্ধু হতে চায়। সমাজের কোনও প্রতিবন্ধকতাই ছেলেকে বুঝতেই দেয় না।

Advertisement

আমার বাবা তেমনই একটা মানুষ। তিনি জয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। বড্ড ঠোটকাঁটা, আবার তেমনই মিশুকে। মাঝে মাঝে ভাবি ইশ্! আমি যদি একটু বাবার মতো হতে পারতাম। কত কথাই না সহজে বলে দিতে পারতাম। আমার আর বাবার মিল অনেক। আবার অমিলও রয়েছে প্রচুর। অমিলের মধ্যে অন্যতম হল বাবার এই সহজ কথা সহজে বলে দিতে পারা। আমি অনেকটা চাপা, খুব একটা প্রকাশ নেই আমার। আবার লোকে বলে আমি বাবার মতো সৃষ্টিশীল।

আমি অবশ্য ‘বাবা দিবস’ উদ্‌যাপনে খুব একটা বিশ্বাসী নই। কখনও যে বাবার জন্য বিশেষ কিছু একটা করেছি, তেমনও নয়। বরং বাবা আমাকে সারপ্রাইজ় দিয়েছে। আমি এখনও বাবাকে তেমন চমকে দেওয়ার মতো কিছু করতে পারিনি। তবে আমি আর আমার বাবা একে অপরের প্রিয়তম বন্ধু

Advertisement

আমরা দু’জনে একসঙ্গে ঘুরতে যাই। সেখানে নিজেদের ইচ্ছে মতো থাকি। যখন খুশি ঘুম থেকে উঠে বেরিয়ে পড়ি উদ্দশ্যহীন ভাবে। আসলে দু’জনেই বড্ড অগোছালো। কিন্তু এই দুই অগোছালো পুরুষকে নিয়ে কিন্তু মায়ের কোনও অভিযোগ নেই।

আমার বড় হয়ে ওঠার পিছনে বাবা-মা যেমন রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন আমার ঠাকুরদা-ঠাকুমা। আসলে তাঁদের কাছেই যে বড় হয়েছি, তাই যে কোনও বিশেষ দিন এই দু’জন মানুষকে ছাড়াও অসম্পূর্ণ।

এ সবের মাঝে একটা কথা বলতেই হয়, আমার বাবাকে ছোট থেকেই দেখেছি ব্যস্ত। কিন্তু সে জন্য আমার প্রতি যে কোনও অবহেলা করেছেন, তা নয়। আমার বাবা কী ভাবে সবটা সামলে নিত, কে জানে! ঠিক সময় বের করে নিত। আমার বই পড়ার নেশা, সিনেমা দেখার নেশা— সবই বাবার থেকে পাওয়া। ছোটবেলা থেকেই আমরা একসঙ্গে সিনেমা দেখতাম। আবার ভিডিয়ো গেমও খেলি। আজকাল বাবা প্রায়ই জিজ্ঞেস করে আমার কোনও প্রেম হল কি না! যদিও উত্তরটা ‘না’-ই হয় প্রতিবার। বাবা বলেই রেখেছে প্রেমিকা হলে যেন প্রথম বাবাকেই জানাই আমি। অথচ, বাবা কিন্তু জানে, এখন সামনে একগুচ্ছ পরীক্ষার প্রস্তুতির চাপ। এ সব ভাবার সময় নেই!

আমরা ‘মা দিবস’ অনেক বেশি উদ্‌যাপন করি। সেটা ভালই। কিন্তু এ ক্ষেত্রে এখনও খানিক পিছিয়ে বাবারা। হয়তো সত্যি কোনও একটা দিনের নিরিখে তাঁদের আত্মত্যাগকে বিচার করা যায় না। আমি নিজেও যে বাবার জন্য বিশেষ কিছু পরিকল্পনা করে উঠতে পেরেছি, তেমন নয়। কিন্তু আমি জানি আমার বাবা ঠিক কতটা পরিশ্রম করেছে আমাকে আমার ইচ্ছে মতো বেড়ে উঠতে দেওয়ার জন্য।

বাবার জন্য কিন্তু আমি বিপদেও পড়েছি। ছোটবেলা থেকে পর্দায় দুষ্টু লোকের চরিত্রে অভিনয় করত বাবা। স্কুলে এসে অনেকেই বলত এ বার একটু ভাল হতে বল! আমি যদিও শুনে মজাই পেতাম। তবে এই খ্যাতির বিড়ম্বনা আছে। গত বছর থেকেই নানা বিতর্ক নানা অভিযোগ শুনেছি। সেই সময় আমার পরীক্ষা চলছিল। কিন্তু কোনও ধরনের বিতর্ক আমাদের ছুঁতে পারেনি। যাঁরা বলেন, আমার মা-বাবা আলাদা, তাঁরা আসলে বিতর্ক খুঁজে বেড়ান। ২১ বছরের বিবাহিত জীবন ওদের। আমার ১৮ বছর বয়স। আমাদের তিন জনের মধ্যে যে বিশ্বাস, সেটা কেউ ভাঙতে পারবে না। পারিবারিক ছবি পোস্ট করে আমরা এক আছি, সেটা বোঝাতে হবে না।

আসলে আমার বাবা তার সংবেদনশীলতা, কষ্ট-দুঃখ কখনও আমার কাছে গোপন করেনি। আবার আমি এটাও জানি, আজকে আমার বাবাকে নিয়ে যে এত চর্চা হচ্ছে, তার কারণ ‘লাইম লাইট’। আর সেটা পাওয়ার জন্য বাবাকে কতটা পরিশ্রম করতে হয়েছে, সেটাও বুঝি আমি। খারাপ যে লাগে না তা নয়। কিন্তু সত্যিটা কী, আমরা জানি। অন্য কিছু নিয়ে ভাবি না। বাবা আমার ‘রোল মডেল’ নয়, বাবা আমার বন্ধু।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement