The Kashmir Files

‘কাশ্মীর ফাইল্‌স অশ্লীল, হিংসাত্মক’, ইজ়রায়েলি পরিচালককে সমর্থন আরও তিন জুরির!

দিন কয়েক আগেই গোয়ায় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘দ্য কাশ্মীর ফাইল্‌স’ প্রদর্শিত হয়। উৎসবের শেষ দিনে ইফি-র জুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান লাপিড বিবেক অগ্নিহোত্রীর ছবিটির তীব্র সমালোচনা করেন।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

মুম্বই শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ ১১:৫২
Share:

‘দ্য কাশ্মীর ফাইল্‌স’ ছবিটিকে ‘অশ্লীল’ এবং ‘প্রচারমূলক’ বলে মন্তব্য করেন নাদাভ লাপিড। সংগৃহীত

বিতর্কের ঝড়ে পড়ে সবাই আঙুল তুললেও ইজ়রায়েলি পরিচালক নাদাভ লাপিডের পাশে দাঁড়ালেন গোয়া আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের জুরি বোর্ডের তিন সদস্য। জিঙ্কো গোটাহ্‌, পাস্কাল শ্যাভান্স এবং জেভিয়ার অ্যাঙ্গুলো বারতুরেন টুইটারে এক বিবৃতিতে জানান, জুরি বোর্ডের সদস্যরা সবাই জানতেন। এবং প্রধান হিসাবে লাপিড যা বলেছেন, তাঁর সঙ্গে তাঁরা একমত।

Advertisement

এর ফলে দলছুট হয়ে গেলেন সুদীপ্ত সেন, যিনি জুরি বোর্ডে থাকা একমাত্র ভারতীয় পরিচালক। সাফ বলেছিলেন, “লাপিড যা বলেছেন, তা সম্পূর্ণ ওঁর নিজস্ব মত।” প্রসঙ্গত, সুদীপ্ত নিজেও ধর্মান্তরণকে কেন্দ্র করে তোলা ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নামে এক ছবির পরিচালক। সেই ছবিকে নিয়েও বিতর্ক শুরু হয়েছে।

লাপিড অবশ্য পরে জানিয়েছিলেন, কাশ্মীরি পণ্ডিতদের দুর্দশাকে লঘু করা তাঁর উদ্দেশ্য ছিল না। তিনি কেবল, ছবিতে এর উপস্থাপনার দুর্বলতা নিয়ে কথা বলেছিলেন বলে দাবি করেন। তাঁর এই বক্তব্যে আলোকপাত করেই সমর্থন জানান তিন জুরি।

Advertisement

তিন জুরির বিবৃতিতে লেখা, ‘‘উৎসবের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে, জুরি বোর্ডের সভাপতি নাদাভ ল্যাপিড, জুরি সদস্যদের পক্ষে একটি বিবৃতি দিয়েছেন: ‘আমরা সবাই ১৫তম প্রদর্শিত ছবি, ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস্‌’ দেখে বিরক্ত এবং হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। যা আমাদের কাছে একটি অশ্লীল প্রচার বলে মনে হয়েছিল। এমন একটি ছবি মর্যাদাপূর্ণ উৎসবের শৈল্পিক প্রতিযোগিতামূলক বিভাগের জন্য অনুপযুক্ত বলে আমি মনে করি।’ আমরা তাঁর এই বক্তব্য সমর্থন করছি।’’

আরও দাবি করেন, ‘‘আমরা ছবির বিষয়বস্তু ঘিরে রাজনৈতিক অবস্থান নিইনি। আমরা শুধুমাত্র শৈল্পিক বিবৃতি দিয়েছি। বরং আমরা বলব, এ বার উৎসবের মঞ্চকে রাজনীতির জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। নাদাভের উপর ব্যক্তিগত আক্রমণ দেখে আমাদের খুব খারাপ লাগছে। এটি কখনই উদ্দেশ্য ছিল না জুরির।’’

জিনকো অস্কারজয়ী আমেরিকান প্রযোজক। জ়েভিয়ার তথ্যচিত্র নির্মাতা এবং একইসঙ্গে ফরাসি সাংবাদিক। পাস্কাল একজন ফরাসি ছবি-সম্পাদক।

দিন কয়েক আগেই গোয়ায় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘দ্য কাশ্মীর ফাইল্‌স’ প্রদর্শিত হয়। উৎসবের শেষ দিনে ইন্টারন্যাশানাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অফ ইন্ডিয়া বা ইফি-র জুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান লাপিড বিবেক অগ্নিহোত্রীর ছবিটির তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি জানান, এই ধরনের ছবি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের মঞ্চে স্থান পাওয়ার যোগ্য নয়। ছবিটিকে ‘অশ্লীল’ এবং ‘প্রচারমূলক’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

লাপিডের এ হেন মন্তব্যের পরই বিতর্কের ঝড় ওঠে। ইজ়রায়েলি রাষ্ট্রদূত তাঁর সমালোচনা করে ক্ষমা চেয়ে নেন। ইফি-র তরফে জানানো হয়, লাপিডের মতামত ব্যক্তিগত। তবে সেই দাবি উড়িয়ে দিয়ে লাপিড জানিয়েছেন, শুধু তিনি একা নন, জুরি বোর্ডের অন্যান্য সদস্যেরও ‘দ্য কাশ্মীর ফাইল‌স্’ ছবিটি নিয়ে একই কথা মনে হয়েছিল।

লাপিড বলেন, ‘‘কাশ্মীরের ঘটনায় যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন, তাঁদের প্রতি আমার বিপুল শ্রদ্ধা রয়েছে। আমি যা বলেছি, তা এই বিষয়ের কথাই নয়। আমি হাজার বার বলতে পারি, আমি কোনও রাজনৈতিক বা ঐতিহাসিক বিষয়ে মন্তব্য করিনি। আমি ছবিটি নিয়ে মন্তব্য করেছিলাম। আমার মতে, এমন গুরুতর একটি বিষয় আরও গুরুগম্ভীর একটি ছবি দাবি করে।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি যা বলেছি, তা মোটেই আমার ব্যক্তিগত মতামত ছিল না। আমাদের সকলেরই ছবিটি দেখে মনে হয়েছে, সেখানে ধারাবাহিক ভাবে ঘটনাগুলিকে অতিরঞ্জিত করা হয়েছে, অশ্লীল এবং হিংসাত্মক বিষয় টেনে আনা হয়েছে। কোনও স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে হিংসার বীজ বপন করার উদ্দেশ্যেই এমনটা করা হয়েছে বলে মনে হয়েছে আমাদের সকলের।’’

লাপিডের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিবেক চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন, তাঁর ছবিতে তথ্যের বিকৃতি প্রমাণ করতে পারলে তিনি পরিচালনা ছেড়ে দেবেন। সে প্রসঙ্গে লাপিডের বক্তব্য, ‘‘পরিচালক আমার কথায় ক্ষুণ্ণ হয়েছেন, সেটাই স্বাভাবিক। আমার ছবিকে কেউ এমন বললে আমারও খারাপ লাগত। কিন্তু উনিও ভাল করেই জানেন, ছবির বিষয়বস্তু নিয়ে আমি কিছু বলিনি। যা ঘটেছে, তা আমি কখনও অস্বীকার করিনি।’’

এর পরই অবশ্য ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলেন ইজ়রায়েলি পরিচালক লাপিড। জানিয়েছেন, কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ভাবাবেগে আঘাত করার কোনও উদ্দেশ্য তাঁর ছিল না। যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন, তাঁদের অপমান করতে চাননি তিনি। তাঁর বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে বলেও দাবি করেছেন লাপিড। যাঁদের খারাপ লেগেছে, তাঁদের কাছে পরিচালক ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন।

তবে ক্ষমা চাইলেও নিজের বক্তব্যে অনড় লাপিড। তিনি দাবি করেছেন, বিবেক অগ্নিহোত্রী পরিচালিত ‘দ্য কাশ্মীর ফাইল্‌স’ ছবিটি ‘অশ্লীল’, ‘হিংসাত্মক’ এবং ‘প্রচারমূলক’। এ কথা তিনি জোর গলায় বার বার বলতে পারেন বলে জানান লাপিড। এতেই সমর্থন জানান বাকি তিন বিদেশি জুরি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন