Leena Gangopadhyay

ধারাবাহিকের লেখকদের বাংলা সাহিত্যের পাঠক আজও ব্রাত্য করে রেখেছে: লীনা

আমার মনে হয় এক জন লেখকের জীবনে পঁচিশ-তিরিশ বছর বয়সের সঞ্চয় যথেষ্ট। তখন সেই লেখক ততটাও নষ্ট হয় না।

Advertisement

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২২ ১৩:০৫
Share:

নতুন প্রজন্ম বাংলা বই কম পড়ে, বললেন লীনা।

বুধবার আপনার গল্প সমগ্র প্রকাশিত হচ্ছে। এমন কেউ আছেন, যাঁর কথা মনে পড়ছে?

Advertisement

লীনা: দেবেশবাবু। দেবেশ রায়। উনি খুব চাইতেন আমি আরও অনেক লিখি। গল্পের বই প্রকাশিত হোক আমার।আর এই গল্প সমগ্রের প্রকাশক। ওঁর উৎসাহ ছাড়া এ বই প্রকাশ হতো না।

Advertisement

তা হলে লেখেন না কেন?

লীনা: সারা দিনই তো লিখছি। মাধ্যম আলাদা হতে পারে। লেখার মধ্যে বরাবর মানুষের কথা বলার চেষ্টা করি।

আপনার ধারাবাহিক বাংলা পেরিয়ে হিন্দির দরবারে শিখর ছুঁয়েছে। এর মাঝে গল্প সমগ্র প্রকাশ...

লীনা: এই গল্পগুলো সবই আমার পঁচিশ থেকে তিরিশ বছর বয়সের লেখা। এখনকার নয়।

বইয়ের নাম ‘শবাধারে জ্যোৎস্না’ কেন?

এই সমগ্রে ‘শবাধারে জ্যোৎস্না’ নামে একটি গল্প আছে, যেখানে দু’জন মানুষের মধ্যে অপর এক মানুষকে ঘিরে সম্পর্কের টানাপোড়েন তৈরি হয়। কিন্তু সেই তৃতীয় জনের শবাধারের সামনে দাঁড়িয়ে তারা উভয়ে নিজেদের সম্পর্ককে নতুন করে দেখতে আরম্ভ করল। এই নতুন করে দেখার মধ্যে যে আলো, তাকে বোঝাতেই জ্যোৎস্না।

শোনা যায় আপনি গল্প সমগ্র প্রকাশ করতে আগ্রহী ছিলেন না...

আমার মনে হয়েছিল আমি অপরিচিত লেখক। গল্পলেখক বলতে যা বোধ হয়, আমার পরিচয় সেই মাধ্যমে বিস্তার লাভ করেনি।

লীনা গঙ্গোপাধ্যায়।

কী বলছেন! আপনি 'অপরিচিত'? আপনার লেখাই তো বিভিন্ন মাধ্যমে পাঠকের কাছে পৌঁছয়...

না। পৌঁছয় না। ধারাবাহিকের লেখকরা এখনও ‘সিরিয়াস’ পাঠকের কাছে ব্রাত্য। ফলে তারা যখন লেখায় আসে, তাদের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব তৈরি হয়। এটা অবশ্য সম্পূর্ণ আমার মতামত।

পঁচিশ-তিরিশ বছরের লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের গল্প আর আজকের বহু অভিজ্ঞতা নিয়ে চলা আপনার মধ্যে বিস্তর ফারাক। এই গল্প প্রকাশের সময় কিছু অংশ বদলাতে ইচ্ছে করেনি?

লীনা: না। আমার মনে হয় একজন লেখকের জীবনে পঁচিশ-তিরিশ বছর বয়সের সঞ্চয় যথেষ্ট। তখন সেই লেখক ততটাও নষ্ট হয় না।

নষ্ট হয় না বলতে?

মানুষের বয়স বাড়ে। অভিজ্ঞতা বাড়তে থাকে। সে ধীরে ধীরে তাঁর মৌলিকত্ব হারায়। শেখে কোথায়, কখন, কী কথা বলতে হয়। সে নষ্ট হতে আরম্ভ করে। সে দিনের সেই লীনা গঙ্গোপাধ্যায় অনেক কিছুর মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে আর পঁচিশের লীনা নেই। আমাদের কৌশলী হতে হয়। সে দিন ওই মনোভাব ছিল না। সে দিন কিছু না ভেবে নিজের ভাবনা প্রকাশ করব বলে ঝাঁপ দিয়েছিলাম। হ্যাঁ, লেখার দিক থেকে আজ লিখলে অনেক কৌশলী হতে পারতাম। লেখার পদ্ধতির কথা বলতে চাইছি। কিন্তু ওই গল্পগুলো অনেক বেশি স্বচ্ছ।

২০২২-র পৃথিবীতে বাংলা বই কত জন পড়ে বলে মনে হয়?

লীনা: শহুরে নাগরিকদের মধ্যে, এ প্রজন্মের মধ্যে বাংলা বই পড়ার চল কমেছে। বেশির ভাগ ইংরিজি বই পড়ে। আমি বলছি না ইংরিজি বই পড়া খারাপ। আমিও পড়ি। বিশ্বসাহিত্য পড়া অপরাধ নয়। কিন্তু মাটির টানটাও সমান ভাবে থাকা উচিত। বাংলায় দারুণ সব গল্প আছে। অনুবাদের অভাবে তা বিশ্বে পৌঁছয় না। তবুও লেখক লিখে যান। তাঁর কাজই তো লেখা। এটাই স্বাভাবিক। এখন মনে হয় পৃথিবীতে আমরা প্রত্যেকে একটা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে আসি। এটা হয়তো ভাববাদের কথা। এখন এটাই মনে হয়। যে গায়ক, সে তো গান গেয়েই যাবে।

কিন্তু সকলের পক্ষে সেই নির্দিষ্ট কাজ করা সম্ভব হয় না...
কেউ সুযোগ পায় না। কেউ পেয়ে করে না। এখনও হয়তো এক জন লেখক নীরবে মোমের আলোয় লিখে চলেছে। একদিন হঠাৎ তাকে আমরা খুঁজে পাব।

অনলাইনে বই পড়েন?

না। বই কাগজে পড়তে চাই। টাটকা বইয়ের গন্ধ নিয়ে অক্ষরের সঙ্গে আমার সখ্য বিনিময়। এই যে বইমেলায় এত বই কিনেছি। সেগুলো সব ব্যাগে রাখা আছে। এক বার করে তার মলাট,লেখকের নাম সব দেখে রেখেছি। এ বার আর এক দিন বাড়ি ফাঁকা হলে বই নিয়ে বসে পড়ব। আমি আসলে ভাল রান্না খাওয়ার মতো একটু করে চেখে চেখে বই পড়ি।

এই সময়ের লীনা গল্প লিখবেন না?

লীনা: লিখব হয়তো। আসলে অনেক কথা বলে যেতে চাই। যা এখনও বলা হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন