‘নিজেকে পাওয়ারফুল বানিয়ে নিতে হয়’

যাতে সংঘর্ষ কাবু করতে না পারে। এমনটাই মত সদ্য রাজনীতিতে আসা নুসরত জাহানেরযাতে সংঘর্ষ কাবু করতে না পারে। এমনটাই মত সদ্য রাজনীতিতে আসা নুসরত জাহানের

Advertisement

পারমিতা সাহা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৯ ০০:০৯
Share:

নুসরত জাহান। —ফাইল চিত্র।

প্র: বাংলায় একটা কথা আছে, রাজনীতির ভূত। সেটা মাথায় চাপল কী ভাবে?

Advertisement

উ: এই শব্দটা আমার সঙ্গে যায় না। বহু দিন থেকেই যে ভূত আমার মাথায় চেপেছে, সেটা হল একা লড়াই করে জেতার ভূত।

প্র: অভিনয় আর রাজনীতি, দুই ক্ষেত্রের ফারাক তো বিস্তর!

Advertisement

উ: কে বলেছে! দুটো ক্ষেত্রেই ‘নেত্রী’ শব্দটা কিন্তু কমন। দু’ক্ষেত্রেই এন্টারটেনমেন্ট হয়, গসিপ হয়। তাই না? সিনেমার ক্ষেত্রেও একটা অন্য মাত্রায় রাজনীতি থাকে। শুধু সিনেমা কেন, অফিসে, সংসারে কোথায় না পলিটিক্স আছে! মানুষ তো রাজনৈতিক জীব। লোকে সিনেমা জগৎকে বলে ডার্টি। পলিটিক্সকেও বলে। অথচ তারা ভিতরের বাস্তবটা জানে না। কারও দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর জন্য আমি এখানে আসিনি। আমার কাজ ছিল মানুষকে ভাল ছবি উপহার দিয়ে মন ভাল করা। এখনও আমার সেটাই কাজ। শুধু প্রেক্ষিত বদলেছে।

প্র: রাজনীতি মানে ক্ষমতাও। এই ঘোষণার পর চেনা-পরিচিতদের ব্যবহারে কোনও বদল দেখেছেন?

উ: না দেখিনি। বন্ধুরা, মা আগের মতোই ট্রিট করছে। যখন কলেজে পড়তাম, তখনও নিজেকে পাওয়ারফুল মনে করতাম। কলেজের জিএস ছিলাম আমি (হেসে)। কোনও পোজ়িশনে এলেই যে ‘পাওয়ার’ অনুভূত হবে, তা নয়। ব্যক্তিগত জীবনেও অনেক লড়াই থাকে। তখন নিজেকে পাওয়ারফুল বানিয়ে নিতে হয়, যাতে সেই সংঘর্ষগুলো এফেক্ট না করে। সেটাই আমার কাছে ক্ষমতার সংজ্ঞা। মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছি আমি। এখনও পুরনো পাড়া কড়েয়া রোডে আমার পরিচিতি শাহজাহানদা’র মেয়ে হিসেবে। রবিবার করে পাড়ার লোকেরা বাবার কাছে নানা আবেদন নিয়ে আসে— কারও স্কুলে ভর্তি, কারও মেয়ের বিয়ে... সেই রক্তটা আমি পেয়েছি। মানুষের ভাল করার কথা শুধু রাজনীতিতে এসেই বলছি না। যখন পলিটিক্সে ছিলাম না, তখনও এনজিও খুলেছিলাম।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

প্র: রাজ্য রাজনীতি সম্পর্কে কি ওয়াকিবহাল?

উ: কিছুটা তো বটেই। তবে আগ্রহের কথায় বলব, সিনেমায় আসার আগে অভিনয়ের ব্যাপারেও কোনও আগ্রহ ছিল না। জীবন যে ভাবে এসেছে, সে ভাবে গ্রহণ করেছি।

প্র: অভিনেতারা রাজনীতিতে এলে অভিযোগ ওঠে, যথেষ্ট সময় সেই এলাকাকে দিচ্ছেন না। জনগণের সঙ্গে দূরত্ব রয়ে যাচ্ছে...

উ: দেখুন, অভিযোগটা কারা করছে, সেটা আগে দেখতে হবে। অভিনেতারা খুব ইমোশনাল মানুষ। সহজেই মানুষের দুঃখ-কষ্ট অনুভব করতে পারি। আর দর্শকের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা রয়েছে, তাই খারাপ কিছু কোনও দিন করতে পারব না। আমি বিশ্বাস করি, কর্মই মানুষের পরিচিতি।

প্র: এ বার কি তা হলে আপনার ফোকাস বদলে যাবে, অভিনয় থেকে রাজনীতিতে?

উ: যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে। আমি দুটোই সমান ভাবে ব্যালান্স করব। বাড়ি সামলানোর কাজও কম ঝক্কির নয়। আমাকে যখন এত বড় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তখন আমি মানুষকে আমার পরিবার হিসেবেই ট্রিট করব।

প্র: সুন্দর দেখানোটা অভিনেত্রী জীবনের একটা শর্ত। রাজনীতি কিছুটা হলেও এর বিপরীত মেরুর...

উ: আমি বোধহয় লাস্ট পার্সন যে, এ ভাবে ভাবি। কত জায়গায় যে মেকআপ ছাড়া চলে গিয়েছি! মাথার মধ্যে এ সব নিয়ে ঘুরলে অভিনয় করব কী করে, মানুষের জন্যই বা কাজ করব কী ভাবে? খুব গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্য না থাকলে আমি মনিটরও দেখি না। আর আমরা যে রকম, মানুষ সে ভাবে আমাদের দেখলে তাতে তো ভুল কিছু নেই।

প্র: এ বার তো মাঠেঘাটে, ঘর্মাক্ত মানুষের মধ্যে আপনার কাজ। কোনও ফরেন লোকেশনে বা এসি ফ্লোরে শুটিং নয়!

উ: সারা পশ্চিমবাংলার অসংখ্য মাঠে আমি অজস্র শো করেছি! টানা তিন ঘণ্টা ধরে। এক ঘণ্টা দর্শকের সঙ্গে শুধু কথা বলি। এ বার বিষয়টা বদলে যাবে। তাঁদের ব্যক্তিগত জীবনে ঢুকে বুঝতে হবে ক্ষোভ, অসুবিধেগুলো। আর কাঠফাটা রোদে শুট করে অভ্যস্ত আমি। মানুষকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি ঘরে ঘরে পৌঁছে তাঁদের সমস্যার কথা শুনব। সেটা স্থির করার পর থেকে আমি মানসিক ভাবে তৈরি।

প্র: ভোটে জিতলে সাংসদ নুসরত জাহান কি আগের মতো শো করবেন?

উ: নিশ্চয়ই। এই জায়গায় এসে পৌঁছেছি অভিনেত্রী হিসেবে জনগণ আমাকে সেই ভালবাসাটা দিয়েছেন বলে। এখন পলিটিক্সের সঙ্গে আমার নাম যুক্ত হয়েছে। কিন্তু তার অনেক আগেই স্থির করে নিয়েছিলাম, বছরে বড়জোর দুটো ভাল ছবি করব। পরপর ছবি বা শো নয়। তাই কোনও অসুবিধে হবে না। আর আমার শোয়ে আমি গান গাই। কিন্তু নাচি না। দর্শকরা নাচেন। এটাই আমার নিয়ম।

প্র: এসভিএফ থেকে সরে আসার জন্যই কি আপনার হাতে কম ছবি?

উ: এখনও আপনাকে দেখাতে পারি, বাড়িতে ক’টা স্ক্রিপ্ট পড়ে আছে। যা পাব, তাই করে নেব, এটা আর করতে পারছি না। নিজের সঙ্গে সময় কাটানোটা জরুরি ছিল। টানা শুটিং করে গিয়েছি, বাড়িতে কোথায় ধুলো পড়েছে সেটাও দেখার সময় ছিল না। এসভিএফ-এর যদি কোনও চরিত্রের জন্য আমাকে উপযোগী মনে হয়, নিশ্চয়ই ওদের সঙ্গে কাজ করব।

প্র: মিমি চক্রবর্তী আর আপনি একই সময়ে রাজনীতিতে। তুলনা তো হবেই...

উ: মিমির সঙ্গে সম্পর্কটা অফ ক্যামেরা এবং ইন্ডাস্ট্রির বাইরে। এটা নিয়ে মাথা ঘামাই না।

প্র: আর বিয়ে, সেটা কি এ বার পিছোবে?

উ: বিয়ের কথা আপনারাই লিখেছেন। তবে পিছোনোর কথা বলছেন কেন, এগোতেও তো পারে (হেসে)! অন আ সিরিয়াস নোট, মা পিছনে পড়ে রয়েছে আমার বিয়ে দেওয়ার জন্য। এটা তার কাছে চিন্তার বিষয়। কিন্তু দেখুন জীবনের এমন একটা জায়গায় আমি পৌঁছেছি, যেখানে ওই কলেজ জীবনের মতো প্রেম-প্রেম খেলে সময় নষ্ট করতে চাই না। সেটল করলে এক জন ভাল মানুষের সঙ্গে করব। ডেট আগে থাকতে জানিয়ে দেব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন