লাভ লাইফ নিয়ে বললে নজর লেগে যাবে

হৃতিক-সুজানের চোদ্দো বছরের বিয়ে ভেঙে যেতে দেখে ভয় পাচ্ছেন? মিমি চক্রবর্তী-র মুখোমুখি প্রিয়দর্শিনী রক্ষিতহৃতিক-সুজানের চোদ্দো বছরের বিয়ে ভেঙে যেতে দেখে ভয় পাচ্ছেন? মিমি চক্রবর্তী-র মুখোমুখি প্রিয়দর্শিনী রক্ষিত

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৬ ০৬:৩৬
Share:

ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল

আপনাকে সব সময় দেখা যায় মাটির কাছাকাছি পা রেখে চলতে। ইচ্ছাকৃত স্ট্র্যাটেজি?

Advertisement

আমি আসলে নিজেকে স্টার হিসেবে ভাবি না। চাকরিজীবী ধরি। আর দশটা লোক যেমন চাকরি করে, আমিও তেমন করি। তফাত একটাই — আমাকে টিভি আর বড় পর্দায় দেখা যায়।

Advertisement

কলকাতার মেয়ে নন, উত্তর বাংলা থেকে এসেছেন বলে বাড়তি কিছু প্রমাণের তাগিদ সব সময় থাকে?

হ্যাঁ। সেই জেদটা সব সময় কাজ করেছে। যখন প্রথম সিরিয়াল করছিলাম, ‘গানের ওপারে’ নয়, ‘চ্যাম্পিয়ন’ বলে একটা সিরিয়াল। ওটা ছ’মাস পর বন্ধ হয়ে গেল। তখন পরিবার আমার সঙ্গে ছিল না। কেউ সাপোর্ট করেনি। প্রথম প্রোমোটা বেরোনোর পরে ছ’মাসের বেশি বাবা আমার সঙ্গে কথা বলেনি। আমিও ওটা ভাঙানোর চেষ্টা করিনি। জানতাম ভাল পারফর্ম করলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। ‘গানের ওপারে’র পরে ঠিক হয়েও গেল। কিন্তু তার আগে ওরা ভাবত আমি এটা স্রেফ ফ্লুকে করছি। এখানে এত প্রতিযোগিতার মধ্যে বেশি দিন টিকব, ওরা ভাবতে পারেনি। বুঝতে পারেনি, টলিউডে থাকার মতো ‘এক্স ফ্যাক্টর’ আমার মধ্যে আছে। কিন্তু আমারও জেদ ছিল যে, আমাকে করতেই হবে।

এই মুহূর্তে লক্ষ্য কী? ইন্ডাস্ট্রিতেই থাকা? না জেন ওয়াইয়ের মতো জব সেক্টর পাল্টে ফেলা?

এত দিন যখন স্ট্রাগল করেছি, এতগুলো বছর যখন দিয়েছি, তখন, আমি এটাই ধরে রাখব।

অন্য চাকরি ছেড়ে ফিল্ম কেন?

এটার উত্তর দেওয়া খুব কঠিন। যখন ছোট ছিলাম, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নানা রকম পোজ দিতাম। রবিনা টন্ডন-অক্ষয় কুমার তখন হিট জুটি। ওদের ‘টিপ টিপ বরসা পানি’র সঙ্গে নাচতাম। ভেতরে ভেতরে সব সময় একটা ইচ্ছে ছিল যে আমাকে হিরোইন হতে হবে। আমার পরিবারের বাকিরা যা করছে, তার চেয়ে আলাদা কিছু করতে হবে। আমার ফ্যামিলিতে সবাই এমবিএ, না হলে ডক্টরেট। আমি সে সব করতে চাইনি। ওগুলো ভাল লাগত না। পড়াশোনা মানে ৮০ পার্সেন্ট পেয়ে গেলাম, ব্যস।

সে তো প্রচুর মার্কস।

আমার ফ্যামিলিতে ওটাই সবচেয়ে কম! যাই হোক, আমার বন্ধুরা জানত আমার ইচ্ছেটার কথা। তা ছাড়া উত্তর বাংলা আর অরুণাচলে থাকতাম বলে বাংলাটাও ঠিকঠাক বলতে পারতাম না। বাবার সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলতাম। মা-র সঙ্গে ভাঙা বাংলায়। সেকেন্ড ল্যাঙ্গোয়েজও হিন্দি ছিল।

তার পর?

তার পর একদিন হঠাৎ ‘ফেমিনা’ থেকে ফোন পেলাম। ওরা বলল, পূর্ব ভারতের টপ টোয়েন্টি কন্টেস্ট্যান্টের জন্য আমার অডিশন নিতে চায়। আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। পরে বুঝেছিলাম ওটা বন্ধুদের কাজ। কী করব, যেতেই হল।

টলিউডে এক নম্বর হওয়ার রোডম্যাপ?

নম্বরে বিশ্বাস করি না। তবে অনেক বছর ধরে ফিল্ম করে যেতে চাই।

অনেকে বলেন, আপনি ‘ভাল’ ফিল্মের অভিনেত্রী। তা হলে এত কমার্শিয়াল ফিল্ম, এত স্টেজ শো করেন কেন?

ভাল সিনেমা আমাকে টাকা দেবে না। টাকা দেয় এই ফিল্মগুলো। জানেন, ‘গানের ওপারে’র পর আমি স্টার জলসা-র সঙ্গে চুক্তি বাড়াইনি। আর বাবার কাছ থেকে এক পয়সাও নেব না প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। তখন একটা সময় এটিএমে কার্ড সোয়াইপ করে দেখি, মাত্র আটশো টাকা পড়ে! সেই স্ট্রাগলটা মনে আছে। আমরা যখন কমার্শিয়াল সিনেমা করি, যখন একটা গান হিট হয়, তখন স্টেজ শো পাই। ওখান থেকে টাকা আসে। আর ভাল সিনেমার কথা বললে আমি ‘খাদ’ আর ‘প্রলয়’ করেছি। আরও অফার এসেছিল, কিন্তু কিছু ফিল্মে কিছু জিনিস ছিল যেগুলো আমি কিছুতেই করতে পারব না।

যেমন?

বেড সিন করতে পারব না।
ইন্টিমেট সিন করতে পারব না।
এ সব ব্যাপারে কোথাও গিয়ে একটা আটকে যায়। জানি না, হয়তো পরে কেটে যাবে। কিন্তু আপাতত এগুলো আমার ‘ডোন্ট’ লিস্টে রয়েছে।

সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে স্টার আর ফ্যানের ব্যবধান প্রায় উধাও। এটা নিয়ে কী ভাবেন?

আমার কিন্তু মনে হয় এখন লোকে চায় এই ব্যবধানটা না থাক। এখন আমরা ফ্যানদের উত্তর দিই ফেসবুকে-টুইটারে। এতে কানেক্টটা বাড়ে, কমে না।

আপনার বয়ফ্রেন্ডের পরিচিতি তো টলিউডে ওপেন সিক্রেট।

সবাই চায় তার জীবনে এমন কেউ থাকুক যে তাকে সাপোর্ট করবে। দিনের শেষে যার সঙ্গে কথা বলে ভাল লাগবে। আমার জীবনেও এ রকম একজন আছে। কিন্তু এটা নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলায় বিশ্বাস করি না। এই ব্যাপারে আমি একটু সেকেলে। আমার বিশ্বাস, লাভ লাইফ নিয়ে বেশি কথা বললে নজর লেগে যায়। এই যে হৃতিক-সুজানের চোদ্দো বছরের বিয়ে ভেঙে যাচ্ছে, এগুলো দেখে খুব ভয় করে।

আপনাকে ঘিরে পুরুষদের এত মনোযোগ সামলান কী ভাবে?

যে কোনও মেয়েরই ভাল লাগবে যদি কোনও পুরুষ তার প্রশংসা করে।

দেবের সঙ্গে এত ফিল্ম করেছেন। প্রেমে পড়েননি!

এত ভাল বন্ধু ও, প্রেমে পড়ার প্রশ্ন নেই। ওই জায়গাটা অলরেডি একজনের জন্য বুকড।

এখন যে ফিল্মের শুটিং চলছে, সেখানেও তো দেব আছেন?

হ্যাঁ। ‘কেলোর কীর্তি’। আমি আছি। দেব, অঙ্কুশ, যিশু, সায়ন্তিকা, কৌশানি, নুসরত আছে।

অনেকে বলেন আপনি এখন যেখানে আছেন, সেটা নিয়েই খুশি।

একদমই নয়। যদি এতেই সন্তুষ্ট হতাম, তা হলে দিন-রাত কাজ করতাম না। আমি এমন কাজ-পাগল যে, এক দিন বাড়িতে বসে থাকলে মনে হয় এক মাস কাজ ছাড়া বসে আছি।

শেষ প্রশ্ন। ‘গানের ওপারে’র মিমি কি হারিয়ে গিয়েছেন?

একেবারেই না। সে রকম পরিচালক পেলে আপনারা আবার সেই মিমিকে দেখতে পাবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন