রহস্যই শেষ কথা

১৯৬৯-এ রাজেশ খন্না, নন্দা, ইফতেকারকে নিয়ে যশ চোপড়া যে ‘ইত্তেফাক’ তৈরি করেছিলেন, তা শক্ত জমি দিয়েছিল নায়ক-পরিচালক দু’জনকেই। বি আর চোপড়ার পৌত্র অভয় সেই ছবিরই রিমেক করেছেন।

Advertisement

সূর্য্য দত্ত

শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৭ ০৮:২০
Share:

ইত্তেফাক ছবির একটি দৃশ্য

ইত্তেফাক

Advertisement

পরিচালনা: অভয় চোপড়া

অভিনয়: অক্ষয় খন্না, সিদ্ধার্থ মলহোত্র, সোনাক্ষী সিংহ

Advertisement

৬/১০

রহস্যের ছবিতে সচরাচর একটা ভয়ের দিকও থাকে। সেই ভয় গোঁজামিলের কানাগলিতে ঢুকে খেই হারানোর। ধরা যাক, ছবি শুরু হয়েছে। বেরোচ্ছে রহস্যের নানা সুতো। কিন্তু শেষে গিয়ে দাঁড়াল একটা ‘কী হইতে কী হইল’ মার্কা ব্যাপার। তখন দর্শকের আক্ষেপ, ‘গোয়েন্দা অত কথা কী করে জেনে গেল?’ কিংবা, ‘অমুক লোকটা কেন এল, কেন গেল, কিছুই বোঝা গেল না!’

এখানেই বাহবা পাবেন পরিচালক অভয় চোপড়া। ‘ইত্তেফাক’-এ তিনি রহস্য যেমন ছড়িয়েছেন, তেমন পরিপাটি করে গুটিয়েও এনেছেন। প্রায় কোনও সুতোই আলগা ছাড়েননি। নির্মেদ, ছিমছাম একটি রহস্য-গল্প বলায় তিনি সফল। ইদানীং এক শ্রেণির ছবিতে গল্প বলার চেয়ে সস্তা স্মার্টনেস জাহির করার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। অভয়ের ছবি সেই প্রভাব-মুক্ত।

১৯৬৯-এ রাজেশ খন্না, নন্দা, ইফতেকারকে নিয়ে যশ চোপড়া যে ‘ইত্তেফাক’ তৈরি করেছিলেন, তা শক্ত জমি দিয়েছিল নায়ক-পরিচালক দু’জনকেই। বি আর চোপড়ার পৌত্র অভয় সেই ছবিরই রিমেক করেছেন। কিন্তু প্রায় পাঁচ দশক আগেকার গল্পকে ২০১৭-র মশলায় ভেজেই দায় সারেননি। পুরনো এবং নতুন ‘ইত্তেফাক’-এ রহস্যের শুরুটা মোটামুটি একই। কিন্তু ওইটুকুই। এ ছবির গল্প এগিয়েছে নিজস্ব খাতে। অজস্র মোড়, নতুন চরিত্র। রহস্যের জট পাকানো থেকে ছাড়ানো পর্যন্ত টানটান সাসপেন্স। যে কারণে রাজেশের ‘ইত্তেফাক’ দেখা থাকলেও এ ছবি পৌনে দু’ঘণ্টা সজাগ বসিয়ে রাখবে আপনাকে।

মজার কথা হল, গোড়ায় উল্টোটাই মনে হচ্ছিল। পুরনো ‘ইত্তেফাক’-এ এক বৃষ্টির রাতে রাজেশ পালিয়েছিলেন মানসিক হাসপাতাল থেকে। নতুন সংস্করণের প্রথম শটেই লেখক বিক্রম শেট্টি (সিদ্ধার্থ মলহোত্র) পালাচ্ছে মার্সিডিজ ছুটিয়ে। পিছনে পুলিশ। বিক্রমের প্রকাশক স্ত্রী ক্যাথরিনের মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে হোটেলে। পালাতে গিয়ে গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট করে বিক্রম। রক্তাক্ত অবস্থায় দৌড়ে সে যখন পুলিশের নাগালের বাইরে, তখনই বৃষ্টি নামে মুম্বইয়ে। আর বৃষ্টি ভেদ করে পুলিশের গাড়িতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে মায়া (সোনাক্ষী সিংহ)। পুলিশকে নিয়ে যায় নিজের ফ্ল্যাটে। সেখানে মেঝেতে পড়ে মায়ার আইনজীবী স্বামী শেখরের রক্তাক্ত দেহ। পাশে দাঁড়িয়ে বিক্রম। পুলিশ অফিসার দেব (অক্ষয় খন্না) দায়িত্ব নেয় কেসের। কিন্তু বিক্রম আর মায়া তো সম্পূর্ণ বিপরীত বয়ান দিচ্ছে! দেব বলে, ‌‘দু’জনের দু’টো গল্প আছে। আমরা সত্যিটাকে খুঁজছি।’

এর পরই যাবতীয় আন্দাজ গুলিয়ে দিয়ে বেমক্কা ‌জাল ছড়ায় রহস্য। একই অকুস্থলে বারবার ফিরে যাচ্ছে ক্যামেরা। নতুন বয়ান, নতুন ব্যাখ্যায় ফিরে ফিরে দেখছে ওই কয়েকটা ঘণ্টাকে। খুনের সমান্তরালে চলতে শুরু করছে অতীত-বর্তমানের একের পর এক অন্ধকার অলিগলি। এর বেশি বলাটা সাসপেন্সের অপমান।

সংলাপে সেন্স অব হিউমর যথেষ্ট। তবে কয়েক জন পুলিশের রসিকতা মাঝে মাঝে অবান্তর লাগে। ক্যামেরা, সম্পাদনা, আবহ— যত্নের ছাপ সবেতেই। অক্ষয়কে নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই। দুঁদে গোয়েন্দার মগজাস্ত্রের সঙ্গে রসিকতা, কাঠিন্য, মমত্বের আলো-ছায়া মিশিয়ে নতুন ‘লুক’-এর অক্ষয় যথাসম্ভব ভেঙেছেন নিজেকে। অফিসে বেরোনোর আগে রুমাল দিয়ে যত্ন করে জুতো মোছা, পুলিশি হেফাজতে জেরার সময়ে অভিযুক্তের প্লেট থেকেই ইডলি ভেঙে খাওয়া— দৃশ্যগুলোকে আক্ষরিক অর্থেই গিলে খেয়েছেন তিনি!

সিদ্ধার্থ বেশ ভাল। কখনও টেনশনে, কখনও লাস্যে সোনাক্ষীও ভাল, তবে চিত্রনাট্যের আরও একটু সাহায্য হয়তো দরকার ছিল তাঁর। অক্ষয়ের স্ত্রী হিসেবে ছোট্ট চরিত্রে মন্দিরা বেদীও সাবলীল।

বলিউডে থ্রিলার তো ঝুড়ি ঝুড়ি হয় না। পরিচালককে শুধু বলার, ‘বাড়তি টুইস্ট আছে’ বলে আগাম ঘোষণার কোনও দরকার ছিল না। দর্শক-হাজিরা যে দিনে দিনে বাড়ছে, সেটা কিন্তু ‘ইত্তেফাক’, মানে কাকতালীয় নয়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন