আংটি কিংবা ঘড়ি নয়, একটা আঙুলে অন্য রকম নেলপলিশ পরেই এখন তৈরি করতে পারেন আপনার নিজস্ব স্টাইল স্টেটমেন্ট। নেলফ্যাশনে এটাই এখন ট্রেন্ড!
শুধু দিল্লি-মুম্বই নয়, কলকাতা থেকে কুলতলি মজেছে এই নয়া ফ্যাশনে। ট্রেনে, বাসে, ট্রামে হামেশাই নজর কাড়ছে অ্যাকসেন্ট নেল! মানে এক আঙুলে অন্য রঙের পলিশ। কিন্তু কোন আঙুলে পরব অন্য রঙ? মধ্যমা না তর্জনী? নেল পলিশের রঙই বা কেমন হবে? কাজের জায়গাতেও এই ফ্যাশন মানাবে তো? পার্টিতেই বা কোন রঙ মানাবে? এমন হাজারো প্রশ্নের ভিড় জেনারেশন নেক্সট-এর মনে। আর সেই সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে মুশকিল আসান করলেন মেকআপ আর্টিস্ট অনিরুদ্ধ চাকলাদার। বললেন, সব আঙুলের বদলে একটা আঙুলে নেল আর্ট করলে বা অন্য রঙের পলিশ পরলে দেখতে ভালো লাগে। আর সে ক্ষেত্রে রিং-ফিঙ্গারই আমার পছন্দ।
তবে রঙ লাগানোর তো কোনও বাঁধা ধরা নিয়ম হয় না। যে কোনও আঙুলেই লাগাতে পারেন। যদিও অনামিকায় অন্যরকমই নতুন প্রজন্মের ফার্স্ট চয়েস। কেউ আবার তারই সঙ্গে রাঙিয়ে নেন কড়ে আঙুলও। একটু সাহসী যারা, তারা কেউ কেউ মধ্যমায় লাগিয়ে নিচ্ছেন গাঢ় রঙের পলিশ। চেরি রেড, নেভি ব্লু, হান্টার গ্রিন, বা ডার্ক পার্পলের মতো বোল্ড রংই এখন ইন ! তার সঙ্গে মিলিয়ে এক আঙুলে পরতে পারেন প্যাস্টেল শেড। মুক্তো সাদা, আইভরি বা হালকা গোলাপি আপনার সাজে ফেমিনিন লুক আনবে। আর রাতের পার্টি থাকলে ওই আঙুলেই চাপিয়ে নিন গ্লিটার। ভিড়ের মাঝে সোনালি বা রূপোলি রঙের নখটা নজর কাড়বে সকলের।
কোথাও যাওয়ার আগে হাতে একটু সময় থাকলে তো কথাই নেই! নেল আর্ট আঁকুন। এই গরমে ফ্লোরাল প্রিন্টের খুব ডিমান্ড। তার সঙ্গে মিলিয়ে অন্য আঙুলে পরুন বেবি পিঙ্ক, পিচ, স্কাই ব্লু, লাইম গ্রিন কিংবা হলুদ। ট্রাই করতে পারেন অ্যানিম্যাল প্রিন্টও। শুধু রং নয়, শিমার, বিডস, প্যাটার্ন, স্টোন— চাহিদা রয়েছে এসবেরও। আসল কথাটা হল ইচ্ছে যেমন। মনের ভেতর জমে থাকা ইচ্ছেগুলো ঝরে পড়ুক নরম আঙুলে। কথাগুলো নেল আর্টের আঁকিবুঁকি হয়ে উঠুক। ‘‘তবে যেটাই পরুন দেখে নেবেন তা আপনার পোশাকের সঙ্গে মাননসই কি না’’ বললেন জনপ্রিয় ফ্যাশন স্টাইলিস্ট অনুপম চট্টোপাধ্যায়। অনুপম মনে করেন বাজার চলতি ফ্যাশন টুকে নয়, বরং নিজের ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মিলিয়ে নেলপলিশের রং বাছা উচিত। যেটাই করুন, কমফর্টেবল থাকাটাই আসল কথা। মন চাইলে হ্যান্ডলুমের শাড়ি, রূপোর দুল, ঘন কাজলের সঙ্গে নখ রাঙিয়ে নিতে পারেন— কমলা, লাল, আবির গোলাপি পলিশে।
নিজস্বতাই স্টাইল!— একই মত অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তীরও। গত তিন বছরে নখের শেপ ও রং নিয়ে প্রচুর এক্সপেরিমেন্ট করেছেন মিমি। তবে চলতি ফ্যাশন মেনে নয়, বরং তার বাইরে গিয়ে তৈরি করেছেন নিজস্ব ঘরানা। বললনে, ছিমছাম অথচ স্টাইলিশ থাকতে পছন্দ করি। তাই শ্যুটিং থাকলে বেজ বা ন্যুড কালারই বেছে নিই। অন্য সময় চেষ্টা করি নতুন কিছু বানাতে। কথায় কথায় জানালেন, ফ্লুরোসেন্ট সবুজ ফ্রেঞ্চ নেল মিমির বিশেষ পছন্দের। নখের শেপের দিকেও তাঁর তীক্ষ্ণ নজর। তবে পুরোটাই ম্যাডামের মর্জি মাফিক। এই প্রসঙ্গে তিনি বললেন, ‘‘যখন স্ক্যোয়ার নখের ট্রেন্ড ছিল তখন রাউন্ড শেপই রাখতাম। এখন রাউন্ডটাই ইন। কিন্তু আমার পছন্দ এখন রাউন্ড পয়েন্টেড নেল।’’
নখ রাঙাতে কিছুটা সৃজনশীলতার প্রয়োজন। ভাবনাও লাগে খানিকটা। তবু কলেজ পড়ুয়া কিশোরী হোক বা রূপ-সচেতন প্রৌঢ়া—নখের ফ্যাশনে এখন সবাই মজে। কিন্তু কেন? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাতের আঙুলেই লুকিয়ে থাকে আমাদের শরীরি ভাষা। নেল আর্টের মধ্যে দিয়ে সহজেই তা প্রকাশ করা যায়। আর এই ভাবে খুব কম সময়েই তৈরি করা যায় নিজের স্টাইল স্টেটমেন্ট। শুধু তাই নয়, রোজ রোজ স্টাইল বদলানো যায় আর ব্যাপারটা পকেট ফ্রেন্ডলিও। তাই খামখেয়ালি মনকে প্রশ্রয় দিতে পাঁচ আঙুলে পাঁচ রং কিংবা এক আঙুলেই অন্য রঙে অনন্য হয়ে উঠুন।