মজারু ফেসবুক

মজাদার গেমস আর ক্যুইজে জমজমাট এখন সোশ্যাল মিডিয়া। লিখছেন পরমা দাশগুপ্ত।প্রকৃতি, ৩৪, বিজনেস অ্যানালিস্ট: দিনভরের টানটান ব্যস্ততা। গুরুগম্ভীর বিজনেস মডেল তৈরির ফাঁকেই স্মার্টফোনে খানিক খুটখুট। হোয়্যাটসঅ্যাপ, ফেসবুকে। কাঠখোট্টা হিসেব কষতে গিয়ে বুদ্ধির গোড়ায় খানিক খোলা হাওয়াও তো দরকার পড়ে!

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:০১
Share:

প্রকৃতি, ৩৪, বিজনেস অ্যানালিস্ট: দিনভরের টানটান ব্যস্ততা। গুরুগম্ভীর বিজনেস মডেল তৈরির ফাঁকেই স্মার্টফোনে খানিক খুটখুট। হোয়্যাটসঅ্যাপ, ফেসবুকে। কাঠখোট্টা হিসেব কষতে গিয়ে বুদ্ধির গোড়ায় খানিক খোলা হাওয়াও তো দরকার পড়ে! প্রকৃতি ওরফে পিকি তখন ফেসবুকে ফান ক্যুইজ ট্রাই করে। আগের জন্মে হাতি ছিল না কাঁকড়াবিছে, এ জন্মে চিজ খেয়ে মরবে নাকি রোলার চাপা পড়ে, সান্টা এ বার ক্রিসমাসে কী দেবে— মাথামুণ্ডুহীন ক্যুইজগুলোর কোনওটা বাদ যায় না। এক্কেবারে নির্মল আনন্দ!

Advertisement

কৌশিক, ২৯, সফ্‌টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার: কোড লিখতে লিখতে আচমকা ঘেঁটে ঘ। জট খুলছে না তো খুলছেই না! ফেসবুক নাড়াচাড়া করতে গিয়েই দেওয়াল জোড়া একের পর এক ‘বি লাইক বিল’। ফ্রেন্ড লিস্টের অর্ধেকই নিজের সম্পর্কে পাঁচটা বাক্যে জেনে ফেলেছে, কেন বাকিদের তার মতো হওয়া উচিত। মোটামুটি মিলছেও। কৌশিকও বিল হয়ে যায় তৎক্ষণাৎ। ‘কৌশিক রায়চৌধুরী হেট্‌স জাঙ্ক ফুড। কৌশিক রায়চৌধুরী ইজ ফিট। কৌশিক রায়চৌধুরী এনজয়েস হোয়্যাট কৌশিক রায়চৌধুরী থিঙ্কস ইজ ট্রুথ, কৌশিক রায়চৌধুরী ইজ স্মার্ট। বি লাইক কৌশিক রায়চৌধুরী।’ বাঃ, এক্কেবারে বর্ণপরিচয়ের সুবোধ বালক! নিজের উপরে রচনা সগৌরবে দেওয়ালে টাঙিয়ে, নিজেই নিজের পিঠ চাপড়ে ব্যাক টু ওয়ার্ক।

Advertisement

খেলা যখন...

নিছক মজার খোরাক পেতেই হোক বা বোরিং সময়-যাপনে, গোমরাথেরিয়াম হয়েই হোক বা খিলখিল হাসিতে ঝলমলিয়ে, ফেসবুকের এই ক্যুইজগুলোয় এক বারও অংশ নেননি— বন্ধুতালিকায় এমন কাউকে খুঁজে পেতে আজকাল রীতিমতো মাইক্রোস্কোপ দরকার। ফেসবুক খুললেই হোল, দেওয়াল জুড়ে হানা দেবে একের পর এক ক্যুইজের রেজাল্ট। ফেসবুকে কোন শব্দগুলো সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেন, কোন বন্ধু জীবনে আয়নার মতো, কার ভালবাসায় ১ শতাংশও খাদ নেই— বন্ধুদের পোস্ট দেখতে দেখতেই কিন্তু নিজেরও খানিক সাধ জাগে।

অস্বীকার করে লাভ নেই বস! যতই বলুন— এ সব ক্যুইজ বড্ড বিরক্তিকর আর বোকা বোকা, ঠাট্টা করে স্টেটাস আপডেট দিন কিংবা রেজাল্ট পোস্ট করা বন্ধুদের খোরাক বানান, চুপি চুপি ফোন আড়াল করে নিজেও কি এক-আধ দিন ট্রাই করেননি? বন্ধুরা এ বার আপনাকে নিয়েও মজা করবে, সেই ভয়ে না হয় রেজাল্ট পোস্ট করেননি ওয়ালে। তা বলে কি এক দিনও ইচ্ছে হয়নি?

মন নিয়ে কাছাকাছি

প্রশ্নটা অবশ্য অন্য জায়গায়। শুধুই কি মজা বা সময় কাটানোর তাগিদ, এ সব ক্যুইজে অংশ নেওয়া বা ইচ্ছে তৈরি হওয়ার আড়ালে কি মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যাও নেই একটুও?

অবশ্যই আছে, বলছেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘সব মানুষেরই নিজের সম্পর্কে কৌতুহলের সীমা নেই। অন্যকে জিজ্ঞেস করলে হয়তো উত্তর মিলতে পারে, কিন্তু বলতে চানই বা ক’জন! এখানেই একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দিয়েছে ফেসবুকের এই ক্যুইজগুলো। যাঁরা এতে অংশ নেন, প্রত্যেকেই জানেন, এগুলো নিছক মজা। তবু আত্মমূল্যায়নের সুযোগটা ছাড়তে চান না। এ সব ক্যুইজের রেজাল্টে সাধারণত ভাল ভাল কথাই লেখা থাকে, ফলে আত্মবিশ্বাসও বাড়ে তখনকার মতো। তা ছাড়া, নিজের সম্পর্কে ভাল কথা পড়তে কার না ভাল লাগে!’’ কে বন্ধু, কে শত্রু কিংবা কে সবচেয়ে বেশি ভালবাসে জাতীয় ক্যুইজগুলো আবার খানিকটা অন্য রকম। অনুত্তমা বলছেন, ‘‘এ সব ক্যুইজের রেজাল্টগুলো বড্ড হিসেব কষা, ফলে প্রেডিক্টেবলও। আপনি যদি বিবাহিত হন, এবং স্বামী বা স্ত্রীর নাম প্রোফাইলে লেখা থাকে, তবে ক্যুইজের রেজাল্টে আপনাকে সবচেয়ে ভালবাসা মানুষটি তিনিই হবেন নিশ্চিত। এ বিষয়টাও সবারই জানা, তাই খানিকটা মজা করতেই ক্যুইজগুলো খেলে ফেলেন অনেকেই। ফেসবুকের ভার্চুয়াল দুনিয়ায় কে বেশি বন্ধু, কে নয়, সেটা জানার লোভটাও তো নেহাত কম নয়! তবে মনে রাখবেন, ফেসবুকের এই সব ক্যুইজকে একদম সিরিয়াসলি নেবেন না।’’

ভাবার বিষয়

শুধু প্রশ্ন নয়, ভয়ও আছে খানিক। ফেসবুকের এই ক্যুইজগুলো সবই আসলে নানা ধরনের ওয়েবসাইটে দেওয়া। মাঝে মিডিয়াম হয়ে থাকে ফেসবুক। ক্যুইজে অংশ নিতে চাইলেই সেই সাইট আপনার অনুমতি নিয়ে আপনারই প্রোফাইলের একাধিক তথ্য এবং ছবি ব্যবহার করে। বহু ক্ষেত্রে রেজাল্ট আসে তারই ভিত্তিতে। কিন্তু কতটা সুরক্ষিত এই তথ্য ভাগাভাগি করে নেওয়া? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যেখানে এ সব সাইট বেশ অপরিচিত?

সাইবার আইন বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘অপরিচিত এ সব সাইটকে তথ্য দেওয়া কিন্তু বেশ ঝুঁকির। ফেসবুকে আপনার তথ্য সুরক্ষিত হলেও এ ক্ষেত্রে সে শুধুমাত্র ইন্টারমিডিয়ারি। ফলে ক্যুইজের সাইটগুলো থেকে তথ্য নিয়ে কোনও ধরনের সমস্যা, প্রাইভেসি এনক্রোচমেন্ট বা সাইবার অপরাধের আশঙ্কা থেকেই যায়।’’ তাই এ ধরনের ক্যুইজে অংশ নেওয়ার সময়ে লগ-ইন করার আগে সরাসরি সাইটগুলোতে গিয়ে তার চেহারাটা দেখে নেওয়া বা গুগ্‌ল থেকে তার ব্যাক হিস্ট্রি জেনে নেওয়াটা জরুরি বলে সতর্ক করছেন বিভাসবাবু।

হাতে খানিক আলসে সময়? ফেসবুকে মজার ক্যুইজ আছে তো!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন