কঙ্গনা-ইমরান।
দীপিকা-ইরফান, কঙ্গনা-ইমরান বা শাহিদ-আলিয়া— এই জুটিগুলির বিশেষত্ব কী বলুন তো? এক বার ভেবে দেখুন। এই জুটিদের প্রথম বার আপনি ছবিতে দেখবেন বা ইতিমধ্যেই দেখেছেন। বলিউডের নতুন ছবিগুলিতে এমনই নতুন জুটিদের ভিড়, যাদের একসঙ্গে দেখার কথা আপনি হয়ত আগে ভাবেননি।
নব্বইয়ের দশক বা কয়েক বছর আগেও পরিচালকদের ভরসা ছিল ‘হিট জুটি’। তাই পর্দায় বারবার দেখা যেত শাহরুখ-কাজল, আমির-জুহি বা হৃতিক-করিনাকে। কিন্তু সে সব দিন আর নেই। নতুনদের সঙ্গে জুটি বাঁধছে পুরনোরা, পুরনোদের সঙ্গে নতুনরা। যে কারও সঙ্গেই যে কাউকে দেখতে পারেন। পরিচালকদেরও ভয় নেই রিস্ক নিতে, কারণ এখন দর্শক চায় শুধুই আনকোরা নতুন জুটিকে।
এর কারণ, নতুনরা তাঁদের প্রথম ছবি থেকেই সহজ, সাবলীল ও ক্যামেরা-ফ্রেন্ডলি। সিদ্ধার্থ থেকে বরুণ বা টাইগার থেকে সুরজ— প্রত্যেকেই নিজের লুকস নিয়ে ওয়াকিবহাল। সিক্স-প্যাকের হাতছানি হোক বা মেট্রোসেক্সুয়ালিটির অ্যাপিল, ষোলো থেকে ষাট বছরের মেয়ে ও মহিলাদের নজর এদের উপর। অন্য দিকে আছে, তন্বী দীপিকা-সোনম-অনুষ্কাদের ভুবন ভোলানো স্টাইল। আবার পৃথুলা পরিনীতি-হুমা-সোনাক্ষীর মোহময়ী রূপ। তাই এমন সব গুড-লুকিং অভিনেতা-অভিনেত্রী একসাথে পর্দায় এলে তারিয়ে তারিয়ে দেখেই দর্শকের মন ভরে যায়। ‘‘এই অ্যাই-ক্যান্ডি ফ্যাক্টর আজকের প্রজন্মের কাছে বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ,’’ বললেন বিপণন বিশেষজ্ঞ আমোদ মেহরা।
আজকালকার নবাগত বা নবাগতারা টাইপ কাস্ট হতে চান না। তাই আলিয়া ভট্টের প্রথম ছবি সিদ্ধার্থ ও বরুণের সঙ্গে, দ্বিতীয় ছবিতেই তিনি রণদীপ হুডার সঙ্গে, ‘টু স্টেটস’-এ অর্জুন কপূর আর আগামী ‘শানদার’-এ তাঁকে দেখা যাবে শাহিদের বিপরীতে। বিপণন বিশেষজ্ঞ তরণ আদর্শের মতে, ‘‘ইটজ আ হেলদি প্র্যাকটিস। এতে ওভার-এক্সপোজারের ভয় থাকে না।’’ স্থায়ী জুটি নয়, নতুন পার্টনারের সঙ্গে কেমিস্ট্রি গড়ে তুলতেই আগ্রহী এঁরা।
এই নতুন জুটিগুলির মধ্যে কিছু জুটি খুবই অন্য রকমের। তবে পর্দায় এরাই নজর কেড়েছেন সম্প্রতি। যেমন দীপিকা-ইরফান। পিকু ছবিতে গ্ল্যামারাস দীপিকা ৩০ ছুঁই-ছুঁই পিকুর চরিত্রে। তার সঙ্গে তথাকথিত গুড-লুকিং নয় ইরফানকে কিন্তু বেশ মানিয়েছিল। এর কারণ, আজকালকার ছবিগুলোতে অভিনেতা-অভিনেত্রীর নির্বাচন হয় বিষয়-ভিত্তিক। ‘‘নব্বইয়ের দশকের মতো রোম্যান্টিক বা পারিবারিক ছবিও এখন কম হয়। সেখানে গানও থাকে কম। কোনও কোনও ছবিতে গান থাকেও না। তাই সে সব বিষয়কে মাথায় রেখেই নতুন জুটির কোনও বিকল্প নেই। শুধু ছবি নয়, ছবির সিকুয়েলেও তাই দেখবেন নতুন মুখ,’’ বললেন আমোদ মেহরা।
তবে এই নতুন জুটিরাই কি কোনও ডুবন্ত ছবির তরী পার করে দিতে পারে? সম্প্রতি অনেক ছবি বক্স-অফিস কাঁপালেও, ছবি হিসেবে ততটা দরের ছিল না। চিত্রনাট্যের দুর্বলতা বা গল্পের শিথিল বাঁধুনিকে ঢাকতে এরাই কি হয়ে ওঠে ভরসার শেষ খড়কুটো? এই মতকে সমর্থন করলেন আমোদ মেহরা। তবে মতটা ‘নেহাতই ব্যক্তিগত’ বললেন তরণ আদর্শ। ছবির বিষয়ই সার। দর্শকের পছন্দ হলে সেটাই সুপারহিট।
তবে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে নেই খানেরাও। পঞ্চাশ ছুঁই-ছুঁই শাহরুখের বিপরীতে যদি বলিউডের সবচেয়ে নবীন আলিয়াকে না দেখে থাকেন, তা হলে তো পিকচার আভি ভি বাকি হ্যায় মেরে দোস্ত।শুধু মেনস্ট্রিম বলিউড নয়, বিপণন জগতেরও ছবিটা কিন্তু একই ধাঁচে বদলেছে। কর্নেটো আইসক্রিমের বিজ্ঞাপন দেখে যদি সিদ্ধার্থ-ইয়ামির প্রেমে পড়ে থাকেন, তা হলে আমেরিকান সোয়ানে সিদ্ধার্থ-কৃতী সাননের কেমিস্ট্রিকে কী বলবেন? আর ব্রু কফির বিজ্ঞাপনে অনুষ্কা-সিদ্ধার্থও কিন্তু সমান ভাবেই আকর্ষণীয়। তাই প্রতিযোগিতা সমানে-সমানে। কাকে ছেড়ে কাকে দেখবেন, সেটা বাছা এখন কঠিন।