Smartphone Photography

বাই বাই ফোটোগ্রাফার

চাই শুধু একটা স্মার্টফোন। তা হলে আপনিই হয়ে যেতে পারেন সেরা ফোটোগ্রাফার। এমনকী সেরা চিত্রশিল্পীও। লিখছেন মধুবন্তী রক্ষিতচাই শুধু একটা স্মার্টফোন। তা হলে আপনিই হয়ে যেতে পারেন সেরা ফোটোগ্রাফার। এমনকী সেরা চিত্রশিল্পীও। লিখছেন মধুবন্তী রক্ষিত

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৬ ০০:০৩
Share:

শেক্সপিয়র বলেছিলেন, গোটা বিশ্ব নাটকের মঞ্চ। স্মার্টফোন আর সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে তিনি জন্মালে নির্ঘাত বলতেন, গোটা বিশ্বটা ফোটো স্টুডিয়ো!

Advertisement

চারপাশে তাকিয়ে দেখুন। শপিং মল থেকে সিনেমা হল, অফিস থেকে পার্ক, রেস্তোরাঁ থেকে খোলা রাস্তা, সব জায়গায় আজকাল চলছে ফোটোশ্যুট। মডেল বা পেশাদার ফোটোগ্রাফারওয়ালা ফোটোশ্যুট নয়। স্মার্টফোন হাতে আম-আদমির সেলফি, গ্রুপফি, সিনারি, ফুডস্টাগ্রাম, পাউট ফেস, ক্রেজি ফেস—আরও কত রকম ইন্সট্যান্ট ফোটোশ্যুট।

চট করে স্মার্টফোনে ছবি তুলে তাতে ব্যবহার করা হচ্ছে একগুচ্ছ ফিল্টার। আর আপলোড হয়ে যাচ্ছে ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, ট্যুইটারে।

Advertisement

ফিল্টার? ওয়াটার ফিল্টার অবশ্যই নয়। জেন ওয়াই-এর অভিধানে ফিল্টার হল কোনও গ্রাফিক এফেক্ট যা একটা ছবি বা তার কোনও একটা অংশে বিশেষ এফেক্ট দেয়। সেপিয়া আর ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট তো প্রাগৈতিহাসিক। অ্যান্ড্রয়েড এবং আইফোনের অ্যাপস্টোরে গেলেই আপনি দেখতে পাবেন লক্ষাধিক ফোটো এ়ডিটর অ্যাপ। চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার মতো এক একটা এফেক্ট। যার দৌলতে এখন আমরা সবাই ফোটোগ্রাফার।

ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো থেকে প্রিয়ঙ্কা চোপড়া, মিমি চক্রবর্তী থেকে বিরাট কোহালি সব সেলেব ঝাঁপিয়ে পড়েছেন এই অ্যাপ শপিংয়ে।

কখনও ইন্সটাগ্রামের ক্লারেনডন, জুনো, লার্ক, লুডউইগ, হেফে ফিল্টার দিয়ে নিজের ছবিকে প্রি-অ্যাডজাস্টেড কালার স্যাচুরেশন, শার্পনেস, কনট্রাস্ট, ব্রাইটনেস-এর টেমপ্লেটস ব্যবহার করে আরও সুন্দর করে তোলা। কখনও আবার প্রিজমার দৌলতে খোদ আর্টিস্ট হয়ে ওঠা। ফোটোর, বনফায়ার প্রো, ফোটো এডিটর প্রো, ইন্সটাগ্রাম, পিকসআর্ট, বি৬১২, রেট্রিকা, স্ন্যাপসিড, ভিএসসিও, এনলাইট... আরও কত অগুন্তি অ্যাপ গুগল অথবা অ্যাপল অ্যাপ স্টোরে খুঁজলেই পেয়ে যাবেন।

এখন লেটেস্ট গ্লোবাল ক্রেজ—প্রিজমা, আপনাকে বানিয়ে তুলবে মিনিটের মধ্যে চিত্রকর।

নিজের সেলফি তুলে তাতে ফিল্টার লাগালেই মনে হবে যেন, তুলি দিয়ে ক্যানভাসে আঁকা ছবি। ইন্সটাগ্রাম তো সেই কবে থেকে আছে। সেলফি ক্যারেকটর বা বিউটিফিকেশন ক্যাটাগরিতে খুঁজলে চাহিদা মতো অ্যাপ পেয়ে পাওয়া যাবে হাজারো। তা দিয়ে নিজের চেহারার জেল্লা বাড়িয়ে নিয়ে, একটু এয়ারব্রাশ করে ছোটখাট খুঁত সারিয়ে লা-জবাব ছবি আপলোড করতে লাগে কয়েক সেকেন্ড।

কার ধৈর্য আছে প্রফেশনাল ক্যামেরায় তোলা ছবি ঘণ্টার পর ঘণ্টা এডিট করার? আর ভাল প্রফেশনাল ক্যামেরার যা দাম, তার ভগ্নাংশে এখন হাতে চলে আসছে ভাল একটা স্মার্টফোন। এর সঙ্গে যোগ করুন অ্যাপগুলো ব্যবহার করার স্বাচ্ছন্দ্য। এগুলো এত ইউজার ফ্রেন্ডলি যে, আঙুলের কয়েকটা ছোঁয়ায় অতি সাধারণ একটা ছবি হয়ে উঠছে অনেক গুণ বেশি আকর্ষক। আর সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এই অ্যাপগুলির বেশির ভাগই ফ্রি।

তা ছাড়া দশের মধ্যে তিন জন এখন নিকন বা ক্যানন ক্যামেরার মালিক হতে পারেন, কিন্তু এঁরাও ফোনের এই অ্যাপে সমান আগ্রহী। যিনি দামি রেস্তোরাঁয় খান, রাস্তার ধারের ফুচকা তো তাঁকেও টানে!

এতটাই যে, প্রায় প্রতিদিন বাজারে আসছে নতুন কোনও ফোটো এডিটিং অ্যাপ। ইন্সটাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাটের মতো ফোটো শেয়ারিং অ্যাপ তাদের ইউজার-দের দিচ্ছে নিত্যনতুন কন্ট্রোল ফিচারস।

কথায় আছে, ‘আ পিকচার ইজ ওয়ার্থ আ থাউজ্যান্ড ওয়ার্ডস’। ছবির সর্বজনীন ভাষা সবাইকে করে তুলেছে ফোটোগ্রাফার।

আর ফোটো এডিটর অ্যাপগুলি তৈরি করেছে ফোটোগ্রাফারের এক নতুন প্রজন্ম—যাদের হাতে আছে স্মার্টফোন এবং সেই স্মার্টফোনে আছে অভিনব সব ফোটো এডিটর অ্যাপ্লিকেশন।

সোশ্যাল মিডিয়ার প্রজন্মে কোনও কিছুই আর প্রাইভেট নয়। আপনার লাঞ্চে কী ছিল, সকালে উঠে কোন কাপে চা খেলেন, বিকেলে অফিসের জানালা থেকে আকাশটা কেমন লাগে, সবাইকে না জানালে চলবে কী করে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন