Ritwik Ghatak

ঋত্বিক ঘটকের অসমাপ্ত ছবির রিল এখন এনএফএআই-এর ঝুলিতে

পুণের ন্যাশনাল ফিল্ম আর্কাইভ অব ইন্ডিয়া-র সংগ্রহশালায় এ বার দেখা মিলবে ঋত্বিক ঘটকের অসম্পূর্ণ তিনটি ছবির রিলের।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬ ১২:৩৭
Share:

রঙের গোলামের একটি দৃশ্য।

পুণের ন্যাশনাল ফিল্ম আর্কাইভ অব ইন্ডিয়া-র সংগ্রহশালায় এ বার দেখা মিলবে ঋত্বিক ঘটকের অসম্পূর্ণ তিনটি ছবির রিলের। অসমাপ্ত এই ছবি তিনটি হল 'কত অজানারে' (৮ রিল), 'বগলার বঙ্গদর্শন' (৪ রিল), এবং 'রঙের গোলাম' (৩ রিল)। ১৯৫৯ সাল থেকে ১৯৬৮ সালের মধ্যে ছবিগুলি তৈরির চেষ্টা করেছিলেন ঋত্বিক কুমার ঘটক। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য সংস্কৃতি দফতর ও ঋত্বিক ঘটক মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সাহায্যে এই মূল্যবান রিলগুলি সংগ্রহ করেছে এন.এফ.এ.আই ।

Advertisement

১৯৭৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি মারা যান ঋত্বিক ঘটক। আর মাঝপথে ফেলে যান অজস্র নাটক আর সিনেমার স্ক্রিপ্ট। 'মেঘে ঢাকা তারা', 'সুবর্ণরেখা', 'কোমলগান্ধার', 'অযান্ত্রিক', 'যুক্তি তক্কো আর গপ্পো', 'তিতাস একটি নদীর' নাম ছাড়াও এই তিনটে ছবির কাজে হাত নিয়েছিলেন পরিচালক। ১৯৮৫ সালে এন.এফ.এ.আই-এর তৎকালীন ডিরেক্টর হৈমন্তী বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, 'কত অজানারে ছবিটির শেষ দৃশ্যটি কেবল ঋত্বিক শুট করেছিলেন। তবে তাঁর স্ত্রী সুরমা দেবী এই ছবির কলাকুশলীদের নাম বলেছেন। অনিল চট্টোপাধ্যায়, উৎপল দত্ত, ছবি বিশ্বাস, করুণা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও আরও অনেকেই ছিলেন কত অজানারে ছবিতে। কালী বন্দ্যোপাধ্যায়কে গোঁফ ও চুলের কায়দা বদলে এমন মেক-আপ দেওয়া হয়েছিল তাঁকে যেন অবিকল ঋত্বিক ঘটকের বাবার মত দেখতে লাগছিল।'

কত অজানারে ছবির একটি দৃশ্য।

Advertisement

এক সপ্তাহ শুটিংয়ের পর 'বগলার বঙ্গদর্শন' (১৯৬৪-৬৫) বন্ধ হয়ে যায়। অভিনয়ে ছিলেন সুনীল মুখোপাধ্যায় এবং ইন্দ্রানু মুখোপাধ্যায়। ১৯৬৮ সালে একটা ছোট্ট আউটডোর শুটিং শেষের পর 'রঙের গোলাম'ও বন্ধ হয়ে যায়। অনিল চট্টোপাধ্যায় এবং সিতা দেবী ছিলেন এই ছবির মুখ্য চরিত্রে।

আরও পড়ুন: তৈমুর এ বার টিভির পর্দায়?

এন.এফ.এ.আই-এর পরিচালক প্রকাশ ম্যাগডাম বলেছেন ‘‘ঋত্বিক ঘটকের সম্পূর্ণ ছবিগুলো আমাদের সংগ্রহে ছিলই। আর এ বার অসম্পূর্ণগুলো পেয়ে শূন্যস্থানটা পূরণ হয়ে গেল।’’ তবে আর্কাইভের সংগ্রহে এসেছে আরও কয়েকটি মূল্যবান জিনিস। এর মধ্যে ঋত্বিকের 'তিতাস একটি নদীর নাম'(১৯৭৩)-এর বুকলেট, জয়ললিতা অভিনীত সিনেমা 'সেহজাদি মুমতাজ'(১৯৭৭)-এর বেশ কিছু ছবি, ১৯৩২ সালের মরাঠি ছবি 'সান্ট তুকারাম'-এর কিছু ছবি, অমিতাভ বচ্চনের অপ্রকাশিত সিনেমা জমানাত এর পোস্টার এবং প্রথম অহমীয়া ছবি 'জয়মতি'-এর কয়েকটা ছবি।

বগলার বঙ্গদর্শন।

ঋত্বিক ঘটকের সিনেমা তার সময়ে একেবারেই চলেনি। এক কথায় বলতে গেলে সেই সময় মানুষ তাঁর ছবি গলাধঃকরণ করতে পারেনি। ঋত্বিকের মৃত্যুর পর এক স্মরণসভায় সুবর্ণরেখার হরপ্রসাদ অর্থাৎ অভিনেতা বিজন ভট্টাচার্য বলেছিলেন ‘ঋত্বিককে খুন করা হয়েছে।’ প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে ঋত্বিক ঘটককে সিনেমা বানাতে হয়েছে। সিনেমা তৈরির বিন্দুমাত্র টাকাও জুটতো না তাঁর কপালে। সুবর্ণরেখার আউটডোর হয়েছিল জাফুলিয়াতে। সেখানে রাত ন’টায় একটা ট্রেন আসতো। ঋত্বিক সেই লোকটার অপেক্ষায় বসে থাকতেন কখন তিনি ফিল্মের র স্টক নিয়ে হাজির হবেন। র স্টক এলে তবেই শুটিং সম্ভব। কোনও কোনও দিন র স্টক এসে পৌঁছতও না। শুটিং বন্ধ হয়ে যেত। চিত্রনাট্যের বাইরেও অনেক বেশি ফুটেজ ঋত্বিক ঘটক তুলে রাখতেন সুবর্ণরেখার শুটিং-এর সময়ে। পরে এডিটিং টেবলে সেগুলোকে সাজানো হত। কিন্তু ওই এক্সট্রা শটগুলোই পরে টালিগঞ্জে রুপো গলানোর কাজে এসেছে। সে দিক থেকে দেখতে গেলে ন্যাশনাল ফিল্ম আর্কাইভ অব ইন্ডিয়া-র এই পদক্ষেপকে সাহসী বলতে হয়।

ছবি সৌজন্যে: ন্যাশনাল ফিল্ম আর্কাইভ অব ইন্ডিয়া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন