Entertainment News

‘আম্মা জানে কেন বিয়ে করছি না’

আজ, ১৭ জানুয়ারি সুচিত্রা সেনের চতুর্থ প্রয়াণ দিবস। ‘আম্মা’, অর্থাৎ দিদিমাকে মনে করে আনন্দবাজার ডিজিটালের জন্য কলম ধরলেন রাইমা সেনআজ, ১৭ জানুয়ারি সুচিত্রা সেনের চতুর্থ প্রয়াণ দিবস। ‘আম্মা’, অর্থাৎ দিদিমাকে মনে করে আনন্দবাজার ডিজিটালের জন্য কলম ধরলেন রাইমা সেন

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:০০
Share:

রাইমা সেন। —ফাইল চিত্র।

আমার আম্মা।

Advertisement

অবান্তর স্মৃতির ভেতরে যার মায়া মুখ, গন্ধ, স্পর্শ নিয়ে রোজ আমার বেঁচে থাকা।

আলাদা করে অন্তত আমায় তাঁকে মনে করতে হয় না। হঠাৎ শাড়ির ভাঁজে, মেক আপ রুমের আয়নায়, খোঁপার সাজে আম্মা চলে আসে। ওকে দেখিয়ে নিই, ‘‘দেখ সুন্দর লাগছে তো? স্টাইলটা ঠিক আছে তো...?’’

Advertisement

মানুষকে দেখতে পেলাম না, আর তাই সে আর আমার কাছে থাকল না, এটা ভুল। আম্মা চলে গিয়ে এই সত্যিটা আমায়, আমাদের শিখিয়ে দিল। সময় আর স্মৃতির একটা চাপা লড়াই আছে, মানুষকে কাছে পাওয়ার, দূরে নিয়ে যাওয়ার অন্তহীন এই খেলায়।

খুব কি আবেগতাড়িত হয়ে পড়ছি আমি? নাহ্। আসলে অন্যরকম ভাবে আজ দেখতে ইচ্ছে করছে জীবনকে, আম্মাকে, সুচিত্রা সেন-কে। আর আমার কাছে আম্মা মানে তো আমারই এক অন্য গভীর জীবন!

দিদিমা সুচিত্রা সেনের মতোই কি দেখতে লাগছে রাইমাকে?

লিখতে লিখতে আমার হাতের দিকে চোখ গেল। আজও আমার হাতে ওর মিনাকারী সোনার বালা। মা পরিয়ে দিয়েছিল আমায়। মা বিশ্বাস করে, ওর মধ্যে আম্মার শক্তি ভরা আছে। এই বালা আমার জন্য সব ভাল পাওয়া— পৃথিবীর মাটি চিরে নিয়ে আসবে। সত্যি তাই, এই সুন্দরী বালা আমার জন্য বরাবর একরাশ খুশি নিয়ে আসে। খুশির আর এক নাম যে আম্মা।

ওর সব কিছুই তো আজ আমাদের সঙ্গে। শাড়ি, গয়না। আজ মনে পড়ছে কোনও একবার আনন্দবাজারের জন্য আম্মার শাড়ি পড়ে, আম্মার মতো করে সেজেছিলাম আমি। তখন তো আম্মা ছিল, আম্মা মায়ের বিয়েতে যে বেনারসি পড়েছিল সেটাই আমায় শুটের জন্যে পরতে বলেছিল। আছে ওই শাড়িটা আজও। আম্মার গন্ধ নিতে চাইলে ওর কাছে যাই।

ওর ফ্ল্যাটটাও তো আমাদের ফ্ল্যাটের পাশেই। আমরা রোজই যাই।

বড় পর্দায় রাইমা। তাঁর সঙ্গে সুচিত্রার মিল পান অনেকেই।

ছোট ড্রইংরুম। তেমন কিছু আসবাব নেই দামি টেবলটা ছাড়া। চোদ্দ বাই চোদ্দহবে ঘরটা। আম্মার ছবি ঝুলছে দেওয়ালে।একটা ‘সপ্তপদী’-র। অন্যটা বাড়িতে তোলা।

আম্মা সম্পর্কে আসলে খুব কিছু আমরা কেউই বলি না। কারণ সকলেই জানে আম্মা সেটা চাইত না।

আম্মার জন্মদিন আর চলে যাওয়ার দিনের আগে আগে মিডিয়া আমাকে, মাকে ঘিরে ধরে। অথচ কী আশ্চর্য, কলকাতাবাসী মাত্রে জানে, এক সময়, কিছু দিন পর পর একটা অদ্ভুত গুজব গোটা শহরে ছড়িয়ে পড়ত যে একটু আগে আম্মা প্রয়াত হয়েছে। আমরা এর সঙ্গে খুব পরিচিত। কারণ কনফার্মেশনের জন্য কেউ না কেউ ফোন করত আর ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করত আমায়, কী বাড়ির সবাই ভাল তো?

আমি বলতাম, ‘‘সি ইজ ফাইন।’’ সেটা হয়তো কুড়ি নম্বর কল ছিল।

বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের বাড়ির ছাদেই হয় আম্মার শ্রাদ্ধ। কোথাও কোনও বাড়ি ভাড়া করে নয়। সে দিন রেকর্ডারে যে গান বেজেছিল। ‘আঁধি’, ‘হসপিটাল’ আর ‘সপ্তপদী’-র।

আম্মা চেয়েছিল আমি বিয়ে করে সেটল করি। রিয়া যে বিয়ে করেছে আমি জানি, আম্মা খুব খুশি! রিয়ার বিয়ের পর আরও বেশি করে অনেকে জানতে চায় কবে বিয়ে করব আমি। কিন্তু আমার বিশ্বাস, আম্মা জানে যে আমি এখনও কেন বিয়ে করছি না, কী কারণ আম্মা ঠিক বুঝেছে। আম্মা জানে আমি এই মুহূর্তে আমার কেরিয়ার নিয়ে খুব ব্যস্ত। সব কিছুর সময় থাকে, আমার বিয়ের জন্য নিশ্চয়ই একটা সময় ঠিক করা আছে। সময়ের সঙ্গে চলি আমি। আর জানি, কোনও এক দিন আমার জন্য যা বেস্ট, তা আমি ঠিক পাবো, আমার অপেক্ষার মূল্য নিশ্চয়ই আছে।

‘অনেকে আমায় জিজ্ঞেস করে, আমি না রিয়া কে বেশি আম্মার মতো? আমি ঠিক উত্তর দিতে পারি না’

১৭ তারিখ প্রত্যেক বারের মতো আম্মার জন্য আমরা পুজো করব। কেবল পরিবারের আমরা। তবে এটার মধ্যেও কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। অনেক সময় এমন হয়েছে, আমরা শহরে হয় তো নেই! তাতে কী! থাকতেই হবে এমন তো নয়। আজও আমরা একে অন্যকে কানেক্ট করি।

অনেকে আমায় জিজ্ঞেস করে, আমি না রিয়া কে বেশি আম্মার মতো? আমি ঠিক উত্তর দিতে পারি না। আমার তো মনে হয় আমি আর রিয়া দু’জনে আম্মার একটা অংশ।

আচ্ছা, এই আম্মার মতোই আমি কোনও দিন সকলের সামনে থেকে হারিয়ে যাব? গায়ে জড়াব অন্ধকার?

হবে কি এমন?

উঁহু...বলব না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন