নরম নরম, লোমে ভর্তি, নাদুসনুদুস চেহারা তাদের। চোখগুলো কুতকুতে, কাচের গুলির মতো। উছলে পড়ে মায়ার মোম। লম্বা লম্বা দুটো করে কান সব সময়ই উঁচিয়ে থাকে। আর সেই কান খাড়া করা, মোটাসোটা চেহারার প্রাণীগুলো বড়ই পেটুক। গাজর, টম্যাটো, ব্ল্যাকবেরি, মুলো... সবেতেই খাই খাই। আপাত ভাবে দেখতে যতটা নিরীহ, ততটাই দুষ্টু বুদ্ধিতে ভরপুর। এমনই পাঁচ-পাঁচটা খরগোশকে নিয়ে গল্প লিখেছিলেন বিয়াট্রিক্স পটার। তা থেকে উইল গ্লাক বানিয়েছেন ‘পিটার র্যাবিট’।
ফ্লপসি, মপসি, কটনটেল— তিনখানা ঝোলা ঝোলা কানওয়ালা খরগোশ। এই তিন বোনের দেখভাল করে স্বঘোষিত সর্দার পিটার। আর এক তুতোভাই বেঞ্জামিন বয়সে বড় হলেও, তার কাজ হচ্ছে পিটারকে বিপদে-আপদে, সুখে-দুঃখে অনুসরণ করা। সব রূপকথাই যেমন হয়... সে এক সুখের সময় ছিল ভাই-বোনদের। মা-বাবাকে নিয়ে ছিল ভরপুর খরগোশ-সংসার। লন্ডন থেকে সামান্য দূরের গ্রামে যে গাছের তলায় পিটারের পরিবার বাড়ি তৈরি করেছিল, তার লাগোয়া জমিতে বাস করতে শুরু করে ভয়ঙ্কর, দৈত্যাকার মিস্টার ম্যাকগ্রেগর। তার বাগানে ঢুকে কলাটা-মুলোটা চুরির অপরাধে ম্যাকগ্রেগর পিটারের বাবাকে ধরে, কেটেকুটে, পাই বানিয়ে খেয়ে ফেলে। পিটারের মা মনের দুঃখে কাঁদতে কাঁদতে মারা যায়। পিটারদের দায়িত্ব নেয় ‘ভাল মানুষ’ বি (রোজ বার্ন)। যে কিনা রংবেরঙের কিম্ভূত ছবি আঁকবে বলে শহর ছেড়ে চলে এসেছে।
বাগানে চুরি কিন্তু অব্যাহতই থাকে। কেউ আনাজ লুফতে সাহায্য করে, কেউ কান দুলিয়ে ম্যাকগ্রেগরের পথ বাতলায়। আর ‘দৈত্য’র হাতে ধরা পড়লেই বাঁচাতে আসে বি। এ ভাবেই লাফিয়ে-ঝাঁপিয়ে-চুরি করে পিটারদের সুখের রাজত্ব। এরই মাঝে ম্যাকগ্রেগর মারা গেলে জমি বিক্রি করতে আসে আত্মীয় থমাস (ডোহনাল গ্লিসন)। থমাস-বি একে অপরকে পছন্দ করতে শুরু করলেও সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় খরগোশদের প্রতি থমাসের ঘৃণা। ফলে বাকি গল্পটা ভালবাসা আর ঘৃণার লড়াইয়ের, একে অপরকে শায়েস্তা করার।
পিটার র্যাবিট
পরিচালনা: উইল গ্লাক
অভিনয়: জেমস কর্ডন (কণ্ঠ), মার্গো রবি (কণ্ঠ), রোজ বার্ন
৫/১০
পিটারের গলার স্বরে মাতিয়ে দিয়েছেন জেমস কর্ডন। মজাদার লাগে ‘ফ্লপসি’ মার্গো রবিকেও। অভিনয়ের দিক দিয়ে ডোহনাল, রোজিও যথাযথ। অ্যানিমেশনের দুনিয়ায় হলিউড বহু আগেই চোখধাঁধানো কাজ করেছে। এই ছবির অ্যানিমেশন তার ধারেকাছেও আসতে পারেনি। তবে কুড়ি শতকের একটি লেখার উপর ভিত্তি করে ছবি বানাতে গিয়ে পরিচালক সেটি সাদামাঠাই রাখতে চেয়েছেন। ভালবেসে কাউকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে আঁকড়ে ধরে রাখার চেয়ে খোলা আকাশে উ়ড়তে দেওয়াই ভাল— খরগোশের জীবন আঁকতে গিয়ে এমন বার্তাই দিয়েছেন সুন্দর ভাবে। আর সে দিক থেকে দেখতে গেলে, এক নির্ভেজাল মজাদার গল্প বুনেছেন পরিচালক।