প্রস্তুতির সময় মিলেছে জাস্ট দু’দিন। জড়ো করে ফেলতে হবে তার মধ্যেই, মোটামুটি যারা আছে শহরে। সহজ উপায়, ফেসবুকে একটা ইভেন্ট বানিয়ে ফেলা। অমুকের বাড়িতে অমুক দিন। ক্লোজ্ড গ্রুপ বানিয়ে পছন্দের বন্ধুদের ইনভাইট করে দেওয়া হল। ব্যস! আর রিমাইন্ডারের নো ঝঞ্ঝাট।
হোস্ট-যুগল মহাব্যস্ত। ছুটির এতই আকাল। তার মধ্যেই সমানে চলছে অনলাইন অর্ডার। রেস্তোরাঁর খাবার তো আসবেই, সেই সঙ্গে সদ্যগিন্নির খুব শখ, বানাবে কিছু ওয়ার্ল্ড ক্যুইজিন। টেরিয়াকি চিকেন, ক্রেপসের মতো কিছু। আনকোরা সব উপকরণের জন্যও চলছে অনলাইন খরিদ্দারি। ক্রেট ক্রেট বিয়ার ঢুকে পড়েছে ফ্ল্যাটে। হোয়াট্সঅ্যাপে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চলছে বাড়ির সামনের লনটায় বারবিকিউয়ের তোড়জোড়। দিওয়ালি ব্যাশ-ইট্স এ গ্রুভি টাইম ম্যান! খাবার-পানীয়-মিউজিক-হাল্কা নাচ-আর এন্তার আড্ডা!
ভিড়ভাট্টায় কে আর যাবে নিশি নাচ-ঠেকগুলোয়? পাব বা ডিস্কে এই সব সন্ধেয় প্রায় দমবন্ধ হয়ে আসে। চাই তো শুধু মর্জি অনুযায়ী বদলে যাওয়া কিছু মিউজিক। সন্ধে থেকে রাতভর। বাড়িতে অজস্র সিডি রয়েছে। বাকিরা নিয়ে আসবে পেন ড্রাইভে ভরে পছন্দের গান। প্রত্যেক ঘরোয়া পার্টিতে তো এই ভাবেই তৈরি হয় ঘরোয়া ডিজে। পোর্টেবল সাউন্ড বক্স তো আছেই। স্মার্টফোনে ইউটিউব থেকে গান চলুক, বা আইপড থেকে- সাউন্ড বক্স লাগিয়ে নিলেই হল। গমগম করবে গোটা ফ্ল্যাট।
ধরা যাক, সন্ধের প্রথম প্রহরটায় চলল সিক্সটিজ। শার্লি ব্যাসি। ‘‘…নেভার, নেভার, নেভার ওয়ান্ট টু বি ইন লাভ উইথ এনিওয়ান বাট ইউ’’! এক খণ্ড বরফ, সঙ্গে মায়াবী পাত্রে চলকে ওঠে নরম রঙের পানীয়। আরও একটু জড়োসড়ো হয়ে বসে যুগলেরা। তার পরেই সামারটাইম। ‘ওহ্ ইউ ড্যাডিজ রিচ, ওহ্ ইউ মামাজ গুড লুকিং, সো হাশ লিট্ল বেবি, ডোন্ট ইউ ক্রাই’! ব্রায়ান অ্যাডাম্স বা এনরিকে নিবু আলোর ড্রয়িং রুমটাকে এমন স্বপ্নিল করে তোলে!
•বব মার্লে
•একন
•ইউবি ফর্টি
•এনরিকে
•জাস্টিন টিম্বারলেক
•কিথ আরবান
•ফ্যারেল উইলিয়ামস
•সব রকমের ডিজে মিক্স,
হিন্দি, ইংরেজি, বাংলা
(শাকিরা, রিকি মার্টিন,
জাস্টিন বিবার থেকে হানি
সিংহ, মিকা)
রাত এর পর একটু গভীর হয়ে আসে। ছন্দ খানিক দ্রুত হয় গানগুলোর। হিট হিন্দি-ইংরেজি বা কিছু বাংলা গানের মেডলে-মাশ আপ রিমিক্সের বিটে আলতো পা মেলানো। তাতে হানি সিংহ থেকে আছেন লেডি গাগা, জাস্টিন বিবার থেকে সোনা মহাপাত্র। সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত বা মুক্তি আসন্ন কোনও ছবির চার্টবাস্টারে থাকা গান এবং তার রিমিক্স। পুরনো ফাস্ট বিটের হিন্দিও থাকে তাতে কিছু। অরিজিৎ সিংহের সঙ্গে দিব্যি মিশে যান কিশোর-আশা।
কিছু সময় পরে আবার ফিরে যাওয়া ব্লুজ-এ।
তবে অভিজাত ভিড়গুলোর কান এখনও বিট্লস, বব ডিলান, বব মার্লে-তেই টিউন্ড। এক্সপেরিমেন্টাল হোক যতই, আজও হ্যারি বেলাফন্টে-র ‘জামাইকান ফেয়ারওয়েল’ অথবা ঈগল্স-এর ‘হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া’র লিড শুরু হলেই চনমনে হয়ে ওঠে মনটা। বাড়ি হোক বা কোনও পাব। তাই শহরের নাইট ক্লাব বা ডিস্কগুলোয় যেমন ডিজে হুসেন, ডিজে আদিত্য, ডিজে কবিরেরা নিজ নিজ রিমিক্স আইটেম নিয়ে সদাপ্রস্তুত থাকেন, লাইভ মিউজিকের শো-এ তেমনই রমরমা ক্লাসিক অথবা হার্ড রক, অল্টারনেটিভ রক, ব্লুজ, জ্যাজ, ইন্ডি পপ, পপ, ল্যাটিন, মেক্সিকান-আমেরিকান, ব্রাজিলিয়ান বোসা নোভা-র। তরুণ প্রজন্মের যাঁরা নিয়মিত ‘ক্লাব মিউজিক’ করছেন, তাঁদের মধ্যে ভোকালিস্ট রেয়া, বাস গিটারিস্ট পিয়ের-আঁতোয়ান বা ড্রামার শৌভিক নিজ অভিজ্ঞতা থেকে এমনটাই জানাচ্ছেন।
ক্লাবে এখনও নিয়মিত শো করেন ড্রামার নন্দন বাগচী, তাঁর ক্লাসিক রক ব্যান্ড ‘হিপ পকেট’ নিয়ে। গিটারিস্ট অমিত দত্তও তাঁর এক্সপেরিমেন্টাল ব্যান্ড ‘পিঙ্ক নয়েজ’ এবং কখনও পপ/রক ব্যান্ড ‘স্কিনি অ্যালি’-র সঙ্গে সমৃদ্ধ করেন ক্লাব মিউজিককে। রেয়া’জ অন্সম্বল ঘোরাফেরা করে মূলত থার্টিজ থেকে সিক্সটিজের জ্যাজ, ব্লুজ, পপ, বোসা নোভায়।
তার মধ্যেও স্বাদ বদলায় কখনও কখনও। প্যান এশিয়ান ফোক নিয়ে কোনও কোনও সন্ধেয় ধরা দিয়ে যায় ‘ফিডলার্স গ্রিন’। সেই দিনগুলোতে বাউল, ভাটিয়ালি, নেপালি গন্ধর্ব টিউন, সিন্ধি ফকিরি কলাম, গোয়ান ফোকের সঙ্গে মিলেমিশে যায় জিউয়িশ ফোক, আফ্রো-কিউবান রুম্বা। আইরিশ হার্প প্লেয়ার আনা তনভির, ফরাসি জিপসি জ্যাজ গিটারিস্ট ইয়ান বোজিয়ুঁ কখনও সঙ্গে থাকেন ফিডলার্স গ্রিনের। কখনও কখনও থাকে ফিউশন সুফি ব্যান্ড ওয়াঘা রোড বা দ্য ফোক ফাউন্ডেশন। পুরোপুরি বঙ্গভাষায় অবশ্য কোনও দিনই মজে না অন্তত ক্লাবমুখী বাঙালির মন। সুরের যদিও থাকতে নেই কোনও ভাষার গণ্ডি, তাই গিটারের লিড সঙ্গী করে এখনও নাগরিক সন্ধেগুলোকে বুঁদ করে রাখে ‘অন আ ডার্ক ডেজার্ট হাইওয়ে, কুল উইন্ড ইন মাই হেয়ার, ওয়ার্ম স্মেল অফ কলিটাস, রাইজিং আপ থ্রু দি এয়ার...’