সোনম, আর বালকি এবং অক্ষয়
‘চিনি কম’ ছবির মাধ্যমেই পরিচালক আর বালকির প্রতিভার কথা সামনে এসেছিল। ‘পা’ করার পর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। তবে মুখ থুবড়ে পড়েছিল তাঁর ‘শামিতাভ’। এমনকী ‘কি অ্যান্ড কা’র ভাগ্যও বক্স অফিসে খুব একটা সুপ্রসন্ন ছিল না। তবে এখন ‘প্যাডম্যান’-এর জন্য শেষ মুহূর্তের প্রচারে ব্যস্ত বালকি।
প্র: ‘প্যাডম্যান’-এর মতো ছবির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী?
উ: লেখক-গায়ক-অভিনেতা স্বানন্দ কিরকিরে আর আমি— দু’জনে মিলেই ‘প্যাডম্যান’ লিখেছি। দু’জনের কাছে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ছিল ছবিটার লোকেশন খোঁজা। কেউ কেউ বলেছিলেন উজ্জয়িনীতে সেট তৈরি করতে। স্বানন্দ ইনদওরের ছেলে। আমরা উৎসাহের সঙ্গে ওখানে গেলাম। কিন্তু লোকেশন পছন্দ হল না। বহু জায়গা ঘোরার পর মহেশ্বর বলে একটা জায়গায় গিয়েছিলাম। ওখানে একটা মন্দিরের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে দু’জনেরই মনে হল, এখানেই ছবির শুটিং করা উচিত। তাই মহেশ্বরে থেকেই দু’জনে পুরো ছবিটা লিখি। যতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল, তার চেয়েও বেশি ইন্টারেস্টিং ছিল বিষয়টা।
প্র: দক্ষিণ ভারতের গল্পকে হিন্দিতে বানানোর কথা ভাবলেন কেন?
উ: কারণ একটাই। যাতে বেশি সংখ্যক দর্শক বিষয়টার সঙ্গে কানেক্ট করতে পারেন। ছবিটা দক্ষিণ ভারতে বানালে ওখানকার ভাষায় বানাতাম। আমি রিমেক বা ডাব করা ফিল্ম পছন্দ করি না। একটা ছন্নছাড়া ভাব তৈরি হয়। তা ছাড়া যদি ভারতের বিভিন্ন কোণে যান, তা হলে দেখবেন, ভাষা ভিন্ন হলেও, সমস্যাটা কিন্তু একই ধরনের। আমার কাছে বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ভাষাটা নয়।
প্র: মেনস্ট্রুয়েশন বিষয়টা নিয়ে কি কখনও আপনার মধ্যে কোনও ট্যাবু ছিল?
উ: ট্যাবু আমরা তাকেই বলি, যা নিয়ে কথা বলতে বা শুনতে চাই না। আর ট্যাবু তখনই ভেঙে যায়, যখন কেউ সেই বিষয়ে কথা বলতে বা শুনতে চায়। সিনেমা ভীষণ পাওয়ারফুল মিডিয়াম। এখন চারদিকে সকলেই এত বার ‘প্যাডম্যান’ কথাটা উচ্চারণ করছে যে, সেটা আর ট্যাবুতে আটকে নেই। আর অক্ষয়কুমারের মতো সুপারস্টার যখন ‘প্যাডম্যান’ করেন, তখন ছবিটা আরও অনেক জায়গায় গিয়ে পৌঁছয়। আমরা তো এটাও চাইছি যে, ‘প্যাডম্যান’কে চিলড্রেন্স ফিল্ম হিসেবে গণ্য করা হোক। পরিকল্পনাও করছি যাতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে স্কুলের মেয়েরা ছবিটা দেখতে পায়। আমার কাছে কোনও দিনই বিষয়টা ট্যাবু ছিল না। বিজ্ঞাপন জগতের মানুষ তো আমি। আমার প্রথম দিকের ক্যাম্পেনগুলোও কিন্তু স্যানিটারি ন্যাপকিনের উপরই ছিল। দরকারে আমি আমার স্ত্রী গৌরীর জন্য প্যাডও কিনেছি।
প্র: অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে আপনার একটা বিশেষ সম্পর্ক। কী ভাবে সেটা ব্যাখ্যা করবেন?
উ: আমি যখন বেঙ্গালুরুতে থাকতাম, তখন থেকেই আমি স্যারের ছবি দেখি। মুম্বইয়ের মতো ওখানেও পুরোদমে স্যারের ছবি রিলিজ হতো। পরবর্তী কালে আমি যখন পরিচালনা করতে শুরু করলাম, চেষ্টা করেছি যতটা বেশি সম্ভব ওঁর সঙ্গে কাজ করতে। ‘চিনি কম’, ‘পা’, ‘শামিতাভ’, ‘কি অ্যান্ড কা’ তো আছেই। ‘প্যাডম্যান’-এও কিন্তু ওঁর চরিত্রটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। উনি ছাড়া এটা কেউ করলে মোটেই মানানসই হতো না।
প্র: ‘শামিতাভ’ একদমই চলেনি। তা নিয়ে আফসোস হয়েছিল?
উ: খুবই। তবে এটাই বলব যে, এর জন্য একমাত্র আমিই দায়ী। আর কেউ নয়। একজন নির্দেশক হিসেবে দর্শকের সামনে গোটা ছবিটার আইডিয়াই তুলে ধরতে পারিনি। আমার মনে হয়, ‘শামিতাভ’-এর আইডিয়া ফিল্মের থেকেও বড় হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
প্র: দু’জন ক্রিয়েটিভ মানুষ এক ছাদের তলায় থাকার সুবিধে আর অসুবিধেটা কী?
উ: (হেসে) প্রশ্নটা আমাদের উপরের ফ্লোরে যিনি থাকেন, তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেই ভাল। আমরা দু’জনেই সব বিষয় নিয়ে প্রচুর কথা বলি। একে অন্যের ছবির চিত্রনাট্য পড়ি। ফিডব্যাকও দিই। প্রচুর তর্ক-বিতর্ক হয়। তবে তার পরে আমরা নিজেদের সিদ্ধান্তটা নিজেরাই নিই। গৌরী আমার চেয়ে দেখতে বেশি ভাল (হেসে)। আমার চেয়ে অনেক বেশি সংবেদনশীল ও। ভেবেচিন্তে কথা বলে। আর আমি কিন্তু একেবারেই উল্টো।