ওজন কমানের ইঁদুর দৌড়

লিকুইড সাপ্লিমেন্ট নিয়ে রোগা হওয়ার পরিকল্পনা করছেন। সতর্ক হন— লিখছেন ফিটনেস বিশেষজ্ঞ চিন্ময় রায়ওজন কমানের ইঁদুর দৌড়। এক মাসে-দুই মাসে কে কতটা কমাতে পারে! কমানোর এই ব্যস্ততার কত অছিলা— সামনে বিয়ে, জিন্স পরা যাচ্ছে না, পার্টিতে স্মার্ট লাগছে না। ঠিক কারণটা নিজেরই জানা নেই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share:

ওজন কমানের ইঁদুর দৌড়। এক মাসে-দুই মাসে কে কতটা কমাতে পারে! কমানোর এই ব্যস্ততার কত অছিলা— সামনে বিয়ে, জিন্স পরা যাচ্ছে না, পার্টিতে স্মার্ট লাগছে না। ঠিক কারণটা নিজেরই জানা নেই। কিন্তু অতি উৎসাহে গুগলে ক্লিক করা কে আটকায়? ‘লিকুইড ফর ওয়েট লস’ টাইপ করলেই ক্লোরোফিল, হাইড্রক্সিকার্ট, গার্সিনিয়া, ক্যাম্বোজিয়া...নামের সব ওজন কমানোর ম্যাজিক উপাদান। এক একটা তরলের পাশে লেখা, এক গ্লাস জলে এক চামচ দিয়ে দিনে দু’বার খান। ব্যস! সপ্তাহের মধ্যে হুহু করে শরীরের মেদ হাওয়া। লিকুইড সাপ্লিমেন্ট নিয়ে নিজেকে গিনিপিগ বানানোর আগে জেনে নিন শারীরবিজ্ঞানের কিছু কথা।

Advertisement

তরল খাবারে ক্যালরি কম থাকে, ঠিক কথা। এতে ওজন প্রথম দিকে কমবে বটে! খিন্তু শরীরে বিপাকের হার যাবে কমে। শরীর চাইবে এনার্জি বাঁচিয়ে রাখতে। সুতরাং ওজন কিন্তু ফেরত আসবে। তা ছাড়া তরল খাবার মানে কিছু না কিছু নিউট্রিয়েন্টের ঘাটতি থাকবেই। অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যগুণের অভাবে নানা সাইড এফেক্ট—যেমন ক্লান্তি, মাথা ঝিমঝিম করা, চুল পড়া, এবং গ্যাস-অম্বলের মতো শারীরিক সমস্যা আপনার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধবে।

এ তো গেল শুধু তরল খাবার খেয়ে ওজন কমানোর হ্যাপা। নেট ঘেঁটে লিকুইড সাপ্লিমেন্টের যে-গবেষণা আপনি করছেন, তার আসল সত্যিটা অন্য। ক্লোরোফিল তরল জেনিফার লজেন্স, নিকোল রিচিদের হাত ধরে বাজার ধরেছে। আদপে ডি-টক্সিফায়ার রক্ত বাড়ায়। ক্লোরোফিল খিদে দমিয়ে রাখে। এই দমিয়ে রাখার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হল, মাথাধরা, পেট গোলানো ইত্যাদি।

Advertisement

আরেক ওজন কমানোর নিদানের নাম হল ‘হাইড্রক্সিকাট ফ্রুট পাঞ্চ’। এক গ্লাস জলে দু’তিন চামচ। দিনে ২-৩ বার। কুমড়োর মতো ফলের ছাল থেকে উদ্ভূত গার্সিনিয়া ক্যাম্বোজিয়া নির্যাস নাকি মেদ বাড়তে দেয় না। সঙ্গে খাবার খাওয়ার ইচ্ছে কমায়। অর্লিস্টান্ট, রাপসবেরি, কিটোনস, গ্রিন কফি বিন...ম্যাজিক ভেষজ নির্মাণের তালিকাটি দীর্ঘ। তবে আগে যে ‘নাকি’ শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে, তার তাৎপর্যটা আলোচনা করা যাক।

ওজন কমানোর যে দাবি এই সব প্রস্তুতকারী কোম্পানি করে আসছে, তার বিজ্ঞানসম্মত, পরীক্ষিত কোনও তথ্য নেই। পুরো গবেষণাটাই কোম্পানির নিজস্ব খরচে করা, কোনও নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক স্বীকৃত ব্যবস্থা দ্বারা নয়। ওজন কমবে এই দাবি, আর তার প্রামাণিক তথ্যের অভাব—এই দুইয়ের মাঝে আটকে পড়ে ওজন কমাতে মরিয়া মানুষজনের আশা-আকাঙ্ক্ষা।

স্রেফ ডায়েট দিয়েই যদি ওজন কমাতে চান, তাহলে বরং অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য এই ফর্মুলাটি বাছুন। ধরে নিলাম আপনার পছন্দ হল ফল আর তরল খাদ্য। কিন্তু এর সঙ্গে প্রোটিন নিতেই হবে। আপনি লো-কার্বোহাইড্রেটযুক্ত তরমুজ, ফুটি, পাকা পেপে, আপেল, অমৃতকল্প, পিচ—এই সব ফল বাছুন। দিনে দু’বার তরমুজের শরবত খান। সকালের প্রাতরাশটা হোক পাকা পেপে, অঙ্কুরিত ছোলা, মুগ, আর এক গ্লাস তরমুজের শরবত। মাঝ-সকালে খান আপেল-আঙুরের সঙ্গে দুটি ডিমের সাদা অংশ, আর ডালিয়া এক বাটি।

দুপুরে—দুটি রুটি (পছন্দ না হলে ওটস ১ বাটি), শশা-টমাটো-পেয়াজের স্যলাড, চিকেন স্যুপ, আর আধগ্লাস মোসাম্বির রস।

মাঝ-বিকেলে— ড্রাই ফ্রুট, ৪-৫টি আমন্ড আর ওয়ালনাট।

সন্ধেবেলায় ব্ল্যাক টি। রাতে চিকেন স্যুপ, আর একটা ফল।

ওজন ঝরতে সময় হয়তো একটু বেশি লাগবে। কিন্তু স্বাস্থ্য বজার রেখে ওজন নিয়ন্ত্রণে আনাই শ্রেয়। তাই চটজলদি উপায় না বেছে, সুষম খাদ্যের মধ্যে ওজনকে বশে আনুন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement