ককপিট
পরিচালনা: কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়
অভিনয়: দেব, রুক্মিণী মৈত্র, কোয়েল মল্লিক
৬/১০
ছবিটা দেখে মোদ্দা যেটা বুঝলাম— পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় ধারণা করে নিয়েছেন, দর্শক কী দেখতে চান। তার সঙ্গে দর্শককে কী দেখানো দরকার, এই ব্যাপারটার সমঝোতা করে ছবিটা বানিয়েছেন। প্রকৃত প্রস্তাবে স্বচ্ছ।
ছবিতে দেব পাইলট দিব্যেন্দু রক্ষিত। তার বাবার (প্রসেনজিৎ) মৃত্যু হয়েছিল বিমান দুর্ঘটনায়। তেমনই একটা রুদ্ধশ্বাস দিন আসে দিব্যেন্দুর জীবনেও। চালকের আসনে সে। বিমানে রয়েছে ১৪৬ জন যাত্রী। মুম্বই থেকে তারা ফিরছে কলকাতা। সেই ফেরার সঙ্গে জড়িয়ে টুকরো টুকরো গল্প। দিব্যেন্দু কি পারবে রানওয়ের মসৃণে তাঁদের নামিয়ে আনতে? নিরাপদে? এই হল মোদ্দা গল্প। আর গল্প হল দেব-রুক্মিণী-কোয়েলের। যেটা এই সমস্ত কিছুর সমান্তরালে ফিরে দেখতে দেখতে যাওয়া হয়।
কীর্তি সচদেব (রুক্মিণী মৈত্র) এয়ার হস্টেস। দেবের সঙ্গে তার আলাপ হয়। একা, মদ্যপ মেয়েটিকে সঙ্গ দিয়ে দিব্যেন্দু ফিরিয়ে আনে নিরাপদ জীবনে। তার পরে যথাকালে, ফ্রেন্ডজোনে পাঠিয়ে গাঁটছড়া বাঁধে ইতিহাস শিক্ষিকা রিয়ার (কোয়েল মল্লিক) সঙ্গে। ইশ!
রুক্মিণী মৈত্র বাংলা ছবির নতুন ঝকঝকে নায়িকা। দেব-কোয়েল জুটি আমাদের তরুণ বয়সের। ক্রমশ বিশ্বাস করতে শুরু করেছি, অকালেই আমার মধ্য-বয়সের শুরুয়াত হল। ‘ককপিট’-এ কোয়েলকে দেখে সেই বিশ্বাস বদ্ধমূল হয়েছে আরও এক ছটাক। কোয়েলেরও বয়স হচ্ছে!
ছবির কথায় ফেরা যাক। ‘ককপিট’-এর চিত্রনাট্যকে সিট বেল্টের মতো করে বেঁধে রেখেছে শুভঙ্কর ভড়ের ক্যামেরা। দর্শক তাঁর উপরে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারেন। আর যথাযথ রবিরঞ্জন মৈত্রের সম্পাদনা। টুকরো টুকরো গল্পকে ছিমছাম সাজিয়েছেন তিনি। আলাদা করে বলা দরকার কো-পাইলট জিয়াউল হোসেন ও অভিনেত্রী আফরিন হামিদির ভূমিকায় প্রিয়ঙ্কা সরকারের নাম।
অনুযোগ বলতে ঝড়ের মধ্যে প্লেন উড়ে যাওয়ার দৃশ্যগুলো আরও বিশ্বাসযোগ্য হতে পারত। আরও নান্দনিকও। কিছু রেফারেন্স এবড়োখেবড়ো। কিছু সংলাপ কেমন যেন আরোপিত। অবশ্য সে সমস্ত তুশ্চু। ওটুকু চোখ-কান আমরা হরবখত বুজে থাকি।
তবে সমস্ত কিছুর পরে যে-ব্যাপারটা নিয়ে মাতামাতি হওয়ার, সেটাই নির্ঘাত হবে। দেবের উচ্চারণ। দেবের সিনেমা দেখতে যাওয়ার সময়ে গোড়াতেই এটা জেনেবুঝে যাওয়া দরকার যে, তিনি পরশুরামের ‘রামরাজ্য’ গল্পের পবনপুত্র হনুমানের মতো ভবানীপুরী বাংলায় দড় নন। এই ছবিতে তাঁর অনেক সংলাপ আবার ইংরেজিতে। সে সমস্ত নিয়েও খুব একচোট মশকরা হবে নিশ্চয়।
তাই ফের নিজের কথা বলতে হচ্ছে। স্কুলে পড়ার সময়ে বলতাম ‘প্লেজার’। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠে লায়েক হয়ে একটা সময়ে বলতে শুরু করেছি ‘প্লেজ়ার’। সেই ইস্তক এই যে জ-এর তলায় ছোট্ট একটা ফুটকি, এর মধ্যে ত্রিশঙ্কু হয়ে ঝুলে থাকে আমার নন্দন-বোধ। আমার অহং। ককপিটে যখন দেব, আমি তাঁর উপরে ভরসা রাখি। তিনি আমাকে মাটিতে নামিয়ে আনেন। বেশ করেন।
দেব আকাশে ওড়ান। দেব মাটিতে নামান। তাই তিনি নায়ক। অভিনয় আর উচ্চারণের চুলচেরা বিচার ছেড়ে একবার দেখলেনই না হয়!