ভূমি
পরিচালনা: উমঙ্গ কুমার
অভিনয়: সঞ্জয় দত্ত, অদিতি রাও হায়দরি, শরদ কেলকর, ঋদ্ধি সেন
৬/১০
সমাজতত্ত্বে একটা কথা আছে, সার্বিক ভাবে সমাজকে ব্যক্তিমানুষের চেয়ে ভাল হতে হবে। সমাজ অপরাধীর সংশোধনের ভার নেবে। কিন্তু ব্যক্তির ক্ষেত্রে সেটা বাধ্যতামূলক শর্ত নয়। প্রতিহিংসা চরিতার্থ সে করতে পারে। ‘ভূমি’ও তেমনই এক ব্যক্তিমানুষের প্রতিহিংসার দলিল। অপরাধীকে ‘ক্ষমা করে বড় হওয়া’র লোভ তার নেই। ক্ষমা চাইতে আসা অপরাধীর বুকে সজোরে লাথি মেরে সে বুঝিয়ে দেয় তার চাওয়া-পাওয়া। ছবির মূল সুরও দর্শক বুঝে যায় এই একটা দৃশ্যেই।
আগরার এক জুতোর দোকানের মালিক অরুণ সচদেব (সঞ্জয় দত্ত)। মা-হারা মেয়ে ভূমির (অদিতি রাও হায়দরি) মায়ের দায়িত্ব পালনেও ত্রুটিহীন সে। আর অবশ্যই স্থান-কালের তুলনায় আধুনিক। মেয়ের রাত করে বাড়ি ফেরা বা লভ ম্যারেজে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায় না। বিয়ের আগের রাতে গণধর্ষণের শিকার হয় ভূমি। বিচারব্যবস্থাকে পরিহাসের পাত্র হতে দেখে নিজের হাতে অপরাধী সংহারের দায়িত্ব নেয় অরুণ। কী ভাবে, সেটা বড় পরদায় দেখাই ভাল। রিভেঞ্জ ড্রামা বা প্রতিহিংসামূলক ছবির সবটা বলে দিয়ে, দর্শকের প্রতিহিংসার মুখে পড়ার কোনও ইচ্ছে সমালোচকের নেই।
ছবির ঘরানা হিসেবে প্রতিহিংসামূলক ছবি নতুন কিছু নয়। ‘আখরি রাস্তা’ থেকে ‘মেমেন্টো’, বলি-হলি মিলিয়ে উদাহরণের শেষ নেই। সে পাত্রে ‘ভূমি’ নতুন কিছু আমদানি করতে পারেনি ঠিকই। অনেক দৃশ্যই ক্লিশে, বহু ব্যবহারে জীর্ণ। বাবার যন্ত্রণা বোঝানোর জন্য বাবা-মেয়ের ভাল সময়ের দৃশ্যের পশরা না খুললেই পারতেন পরিচালক উমঙ্গ কুমার। চাইলেই বাদ দিতে পারতেন ধর্ষণের দৃশ্যগুলো। চিত্রনাট্যে কিন্তু নতুন কিছু করার প্রচেষ্টা ছিল। কিশোরবয়স্ক অপরাধীর সাজা পাওয়া উচিত কি না, সেই দ্বন্দ্ব বেশ অন্য ভাবে দেখিয়েছেন।
ঘাটতি আসলে পূরণ করে দিয়েছেন অভিনেতারা। প্রায় তিন বছর পর বড় পরদায় ফিরলেন সঞ্জয় দত্ত। দীর্ঘ জেলবাস তাঁর চুলে পাক ধরাতে পারে, অভিনয়ে এতটুকু মরচে ধরাতে পারেনি। কামব্যাক বোধহয় একেই বলে। নরম বাবার চোখের জল উবে যায় প্রতিহিংসার আগুনে। চরিত্রের দুটো শেডের রংই খোলতাই সঞ্জুবাবার অভিনয়ে। খুন করা হোক বা খুনের হুমকি দেওয়া, সঞ্জয় দত্ত না থাকলে হয়তো সমস্যায় পড়তে হতো পরিচালককে।
শুধু সঞ্জয় দত্তই নন। অদিতি রাও হায়দরিও ভাল। বেদনার নির্বাক অভিব্যক্তি তাঁর অভিনয়ে ব্যক্ত। শরদ কেলকর এত দিনে একটা ঠিকঠাক চরিত্র পেলেন। এবং তার যথাযথ সদ্বব্যবহার করেছেন ভিলেন ধৌলির চরিত্রে। ছবির ডার্ক হর্স নিঃসন্দেহে ঋদ্ধি সেন। ছবির প্রথমার্ধের ভোলেভালা ছেলে থেকে দ্বিতীয়ার্ধের জঘন্য ক্রিমিনাল চরিত্রের এমন রূপান্তর দারুণ ফুটিয়ে তুলেছেন কলকাতার ছেলে।
অভিনয়ের যোগ্য সঙ্গত দিয়েছে আর্তুর জুরাস্কির ক্যামেরা। বাড়ির ছাদে মেয়ের চুলে তেল লাগিয়ে দিচ্ছে বাবা আর ব্যাকগ্রাউন্ডে তাজমহলের গম্বুজ। পরের দৃশ্যেই রাজস্থানের রুক্ষতা। চমৎকার! কে না জানে, রাজস্থানের মরুভূমি আস্তে আস্তে গ্রাস করছে আগরাকেও।
তবে সিনেমা মানেই তো স্রেফ কিছু ভাল দৃশ্য ও ভাল অভিনেতার মিশ্রণ হতে পারে না। শেখর সুমনকে তো ব্যবহারই করলেন না পরিচালক। তেমনই সানি লিওনির অতিব্যবহারে আবার বিরক্ত করলেন দর্শককে। ‘ভূমি’ তাই সঞ্জয় দত্তর দুর্দান্ত কামব্যাক ছবি হিসেবেই থেকে গেল, অসাধারণ রিভে়ঞ্জ ড্রামা ঘরানায় কল্কে পেল না।