অক্ষয়ের সেরা অভিনয়

লিখছেন অরিজিৎ চক্রবর্তীছবিতে একটু ‘সিনেমাটিক লাইসেন্স’ নিয়েছেন পরিচালক রাজা কৃষ্ণ মেনন। পৃথিবীর এই সর্ববৃহৎ উদ্ধারকার্যের কৃতিত্ব প্রায় পুরোটাই দিয়েছেন অক্ষয়কুমার অভিনীত রঞ্জিত কাটিয়ালকে। স্বাভাবিক ভাবেই এমন ‘ওয়ান ম্যান শো’ ভাল লাগেনি বিদেশ মন্ত্রকের কর্তাব্যক্তিদের। যদিও পর্দায় হিরোইজম ভালই লাগে। ‘স্পেশাল ২৬’ আর ‘বেবি’র কথা মাথায় রেখেও বলতে হয়, এটাই এখনও পর্যন্ত অক্ষয়কুমারের সেরা অভিনয়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০০:১৬
Share:

‘এয়ারলিফ্ট’ রিলিজের পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রক থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করে বলা হচ্ছিল, তথ্যগত ভাবে ছবিটা কতটা ভুল। ছবি দেখতে দেখতে ব্রেখটের একটা কথা খুব মনে পড়ছিল, ‘‘শিল্প বাস্তবের সামনে তুলে ধরা আয়না না।’’ তবে ছবিটা কতটা শিল্পসমৃদ্ধ হয়েছে, সে প্রসঙ্গে পরে আসছি।

Advertisement

ইন্টারনেট কানেকশনওয়ালা স্মার্টফোনের দুনিয়ায় ছবির গল্পটা হয়তো সবার জানা। ১৯৯০-এর অগস্টে সাদ্দাম হুসেনের ইরাকি বাহিনী দখল নেয় কুয়েতের। কুয়েতে বসবাসকারী প্রায় এক লক্ষ সত্তর হাজার ভারতীয় রাতারাতি আটকে পড়ে নো-ম্যান’স-ল্যান্ডে। দু’পক্ষের অনেক আলোচনা, টালবাহানার পর নিকটবর্তী জর্ডন থেকে বিমানের প্রায় পাঁচ’শ উড়ানে ভারতে ফেরানো হয় তাদের।

তবে ছবিতে একটু ‘সিনেমাটিক লাইসেন্স’ নিয়েছেন পরিচালক রাজা কৃষ্ণ মেনন। পৃথিবীর এই সর্ববৃহৎ উদ্ধারকার্যের কৃতিত্ব প্রায় পুরোটাই দিয়েছেন অক্ষয়কুমার অভিনীত রঞ্জিত কাটিয়ালকে। স্বাভাবিক ভাবেই এমন ‘ওয়ান ম্যান শো’ ভাল লাগেনি বিদেশ মন্ত্রকের কর্তাব্যক্তিদের। যদিও পর্দায় হিরোইজম ভালই লাগে। ‘স্পেশাল ২৬’ আর ‘বেবি’র কথা মাথায় রেখেও বলতে হয়, এটাই এখনও পর্যন্ত অক্ষয়কুমারের সেরা অভিনয়।

Advertisement

ছবির প্রথম অংশে ভারতকে ভুলতে চাওয়া আর পরের অংশে ভারতে ফিরতে ব্যাকুল ব্যবসায়ীর চরিত্র যে ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, না দেখলে মিস করবেন। নিঃসন্দেহে ছবির সেরা পাওনা অক্ষয়কুমার। কাঁচাপাকা চুল, খোঁচাখোঁচা দাড়িতে একেবারে যথার্থ। বলিউডে খুব বেশি নায়ক তো আর নিজের বয়স পর্দায় দেখান না। অক্ষয় দেখান। দেখিয়েছেনও। তিনিই যে ছবিটা জুড়ে থাকবেন, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

তবে সহ-অভিনেতার জন্য প্রয়োজনীয় জায়গাও ছেড়েছেন। ‘দ্য লাঞ্চবক্স’‌য়ের অভিনেত্রী নিমরত কৌর এ ছবিতেও নিজের জাত বুঝিয়ে দিয়েছেন। স্বামীকে অপমানের প্রতিবাদে ঝাপিয়ে পড়া মহিলার চরিত্রে তাঁর অভিনয় প্রশংসার দাবি রাখে। শুধু প্রধান চরিত্রই নয়, নজর কাড়ে পার্শ্বচরিত্ররাও। যেমন, ইনামুল্লাহ। কুয়েতে সাদ্দামের মেজর খালাফ বিন জায়েদের চরিত্রে তাঁর অভিনয় টানটান ছবিতে প্রয়োজনীয় কমিক রিলিফ দেয়। ডায়লগ কখনও কখনও ক্লিশে মনে হলেও টাইমিংয়ে উতরে দিয়েছেন। পূরব কোহলির পাঁচ মিনিটের উপস্থিতিও মনে থাকতে বাধ্য। রিফিউজি ক্যাম্পে মাঝবয়সি খিটখিটে মেজাজের প্রকাশ বেলাওয়াদিও মনে রাখার মতো। একই রকম প্রশংসার পাত্র জয়েন্ট সেক্রেটারির ভূমিকায় কুমুদ মিশ্র।

তবে চিত্রনাট্যের জন্য এক রাউন্ড হাততালি বাড়তি প্রাপ্য। বিদেশে বসবাসকারী ভারতীয় মানেই যে মার্সেডিজ-বিএমডব্লিউ, গুচ্চি স্যুট নয়, সেই মিথটাকে ভাঙার চেষ্টা করেছেন মেনন। আর্থিক বৈষম্য শুধু স্বদেশের ঘটনা নয়। ছবিতে তাই কেউ ভারতে ফেরার জন্য অবলীলায় দিতে চান দশ লাখ ডলার, আবার কেউ দু’শো ডলারও দিতে পারে না। দেশপ্রেমিক ছবি হলেই স্বাভাবিক প্রবণতা থাকে অন্য দেশকে ভিলেন বানানোর — সেটা থেকেও বিরত থেকেছেন পরিচালক।

চরিত্র নির্মাণেও যথেষ্ট মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন চিত্রনাট্যকার। ‘আত্ম-কেন্দ্রিক’ ব্যবসাদার থেকে অজানা-অচেনা লোকের সাহায্যে ঝাঁপিয়ে পড়া রঞ্জিত কাটিয়ালে রূপান্তরে মেলোড্রামা আসেনি। একই ভাবে নিমরত কৌর অভিনীত অমৃতার চরিত্রকেও শুধুমাত্র স্বামীকে ভাল কাজ থেকে টেনে ধরা মহিলাতেই আটকে রাখেননি। ‘এয়ারলিফ্ট’‌য়ের অনেক ছোট ছোট দৃশ্যও মনে রাখার মতো। বিদেশ মন্ত্রকের দফতরে ফোন এসেছে। জয়েন্ট সেক্রেটারি হাতঘড়ি দেখছেন, ফোনটা তুলবেন নাকি ‘ফালতু’ ঝামেলায় না জড়িয়ে বাড়ির দিকে রওনা দেবেন — ভুক্তভোগী মাত্রেই জানেন এ পরিস্থিতি কাল্পনিক নয়!

তা বলে ভাববেন না এ ছবি নিখুঁত। কয়েকটা ‘ক্লিশে’ ডায়ালগ আর চিত্রনাট্যে বছর চার আগের হলিউডি ছবি ‘আর্গো’র প্রভাব একটু কম হলে নম্বর কাটা মুশকিল হত। বলিউডি নাচ এই তালিকায় ইচ্ছা করেই রাখলাম না। এই তো ক’দিন আগে ইউরোপিয়ান ফিগার স্কেটিং চ্যাম্পিয়নশিপে বলিউডি গানের তালেই তো জিতেছেন অলিম্পিক চ্যাম্পিয়নরা!

ছবিটা দেখে আসুন। প্রকৃত ঘটনার সঙ্গে মিল খুঁজতে যাবেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন