Lost Movie Review

‘পিঙ্ক’-এর পর অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর ‘লস্ট’ কতটা জমল, জেনে নিন আনন্দবাজার অনলাইনে

বিধি এক ক্রাইম সাংবাদিক। তার কাছে কোনটা বড়? সত্যটা, না কি সঠিক ভাবে পথ চলাটা? ব্লকবাস্টার ‘পিঙ্ক’-এর পর পরিচালক অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী ফিরলেন তাঁর পরের হিন্দি ছবি নিয়ে। কেমন হল সেই ছবি?

Advertisement

শতরূপা বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১২:৫১
Share:

‘লস্ট’ আসলে এক নারীর সত্য উদ্‌ঘাটনের যাত্রার কাহিনি। ছবি: সংগৃহীত।

কতটা পথ পেরোলে তবে সত্যের খোঁজ পাওয়া যায়? কতটা পথ পেরোলে তবে নিজের প্রাণের বাজি রেখে সেই সত্যকে খুঁড়ে বার করে সামনে আনা যায়? বিধি জানে না। সে শুধু জানে, তাকে সেই চরম সত্যটা খুঁজে বার করতে হবে। কিন্তু যেন-তেন-প্রকারেণ নয়। নিষ্ঠার সঙ্গে, নিজের সঙ্গে ভণ্ডামি না করে, সৎ থেকে।

Advertisement

পরিচালক অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর সাম্প্রতিকতম হিন্দি ছবি ‘লস্ট’-এর প্রেক্ষাপট অনেকটা এমনই। যার প্রধান চরিত্র বিধি (ইয়ামি গৌতম ধর)। ‘লস্ট’ ওটিটি-তে মুক্তি পেয়েছে ১৬ ফেব্রুয়ারি। বিধি এক সংবাদপত্রের ক্রাইম সাংবাদিক। খবর আসে, কলকাতায় পথনাটিকা করা একজন যুবক ঈশান (তুষার পাণ্ডে) হঠাৎই নিরুদ্দেশ। তাকে কি অপহরণ করা হয়েছে? না কি সে নিজের ইচ্ছেতেই বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছে? সে কি আদৌ বেঁচে আছে? শহরজুড়ে এই সব প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে থাকে।

আর বিধির ঘাড়ে দায়িত্ব পড়ে এই ‘কেস’ উদ্ধার করার। দর্শক বিধির মতোই বিশ বাঁও জলে। গল্প যত এগোয়, ততই ‘কেস’ ঘোরালো হয়ে ওঠে। পুলিশ বলে, ঈশান মাওবাদীদের দলে যোগ দিয়েছে। ঈশানের দিদি বলে, সে বুঝতে পারছে না, তার ভাই কী করে এ রকম উধাও হয়ে গেল। এ দিকে উচ্চাকাঙ্ক্ষী ঈশানের প্রেমিকা (পিয়া বাজপেয়ি) হাত মিলিয়েছে শহরের অন্যতম ক্ষমতাসম্পন্ন এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের (রাহুল খন্না) সঙ্গে। সঙ্গত কারণেই প্রেমিকাকে জেরা করে না পুলিশ। বিধি বুঝতে পারে, ঈশানের নিরুদ্দেশের পিছনে এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের হাত আছে। কিন্তু প্রমাণ ছাড়া সেই বিশ্বাসের মূল্য কী?

Advertisement

ছবির একটি দৃশ্যে সুমন মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ইয়ামি গৌতম। ছবি: সংগৃহীত।

‘লস্ট’ আসলে এক নারীর সত্য উদ্‌ঘাটনের যাত্রার কাহিনি। যে যাত্রার পরত খুলতে গিয়ে যে কাহিনি হয়ে ওঠে সেই নারীর নিজেকে উপলব্ধি করার কাহিনিও। পথ চলতে চলতে বিধি সম্মুখীন হয় দুটি প্রশ্নের। এক জন সাংবাদিকের কাছে কোনটা বড়? সত্য জানা, না কি সঠিক ভাবে পথ চলা? এই দ্বন্দ্বের সামনে পড়ে সে কী করবে?

পুরো ছবিরই পটভূমিকা কলকাতা। বিধি থাকে তার দাদুর (পঙ্কজ কাপুর) সঙ্গে একটি ছোট্ট ফ্ল্যাটে। দাদু অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। এবং ছবিতে সত্যের শিড়দাঁড়া। বিধিরও। গীতার শ্লোকের মাধ্যমে দাদু তাঁর নাতনিকে বোঝান জীবনের সার সত্য। পথ দেখান। দাদুর মন্ত্রে দীক্ষিত বিধি নিজের প্রাণ বাজি রেখে চষে ফেলে কলকাতার অলিগলি। সে অকুতোভয়। প্রাণনাশের হুমকিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সে দেখা করে মন্ত্রী থেকে ছায়াজগতের লোকজনের সঙ্গে। নিজের প্রেমিককে (নীল ভূপালাম) এবং বাবা-মাকে সে সাফ জানিয়ে দেয় যে, তার কাজই তার কাছে সব থেকে বড় সত্য। তার জীবন। সাধনা। সেখানে কারও নাক গলানো সে সহ্য করবে না। করেও না। বাবার উপহার দেওয়া গাড়ির চাবি সে বাবার অফিসে গিয়ে ফেরত দিয়ে আসে। শেষ পর্যন্ত বিধি কি পায় ঈশানের খোঁজ? সত্যরক্ষা কি হয় তার? কী ভাবে? সে উত্তর জানার জন্য ছবিটা দেখা দরকার।

শেষ পর্যন্ত বিধি কি পায় ঈশানের খোঁজ? সত্যরক্ষা কি হয় তার? ছবি: সংগৃহীত।

এটুকু বলা যেতে পারে ‘লস্ট’ আপনাকে হতাশ করবে না। সত্যের সন্ধানে বিধির দৌড়ের মধ্যে থ্রিলারের সব উপাদানই মজুত। প্রায় একটা হার্ডল রেস দেখার মতো। ছবি দেখতে দেখতে মনে পড়ে যায়, আমেরিকান ছবি ‘অল দ্য প্রেসিডেন্টস মেন’-এর কথা। যেখানে দুই তুখোড় সত্যসন্ধানী তদন্তকারী সাংবাদিকের কলমের খোঁচায় পড়ে গিয়েছিল তদানীন্তন নিক্সন সরকার।

‘লস্ট’-এর কলকাতা অন্ধকার-আলোয় মেশানো কলকাতা। সেখানে নেই হাওড়া ব্রিজ বা দ্বিতীয় হুগলি সেতু বা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। ভাগ্যিস! তার বদলে রয়েছে ব্যস্ত আমহার্স্ট স্ট্রিট পুলিশ স্টেশন, নোংরা গলি, ক্ষয়িষ্ণু শরিকি বাড়ি, গভীর রাতের শুনশান মেট্রো স্টেশন। অভীক মুখোপাধ্যায়ের আলো-আধাঁরি মিশানো ক্যামেরা খুব সুন্দর ধরে এই কলকাতা। শান্তনু মৈত্রর সঙ্গীত ভাল লাগে। বোধাদিত্য বন্দোপাধ্যায়ের সম্পাদনা তুখোড়। ভাল অনিরুদ্ধ এবং শ্যামল সেনগুপ্তর চিত্রনাট্যও। এবং সবার অভিনয় দারুণ। পঙ্কজ কপূরের মতো অভিনেতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে অভিনয় করেছেন ইয়ামি। বিশেষ করে ভাল লাগে ছোট ছোট চরিত্রে সোহাগ সেন, অরিন্দম শীল, সুমন মুখোপাধ্যায়, কৌশিক সেন, দেবপ্রিয় মুখোপাধ্যায়ের মতো কলকাতার একগুচ্ছ অভিনেতাকে।

শুধু ছবির দৈর্ঘ্যর দিকে আরও একটু নজর দিলে ভাল হত। বিধির সত্য-খোঁজের প্রক্রিয়া আরও একটু ছোট করা যেত বলে মনে হয়। হয়তো তা হলে ছবিটি সব ধরনের দর্শক সমান ভাবে উপভোগ করতে পারতেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন