Movie Review

মুভি রিভিউ: ক্রাইসিসে ‘ক্রিসক্রস’

অভিনেত্রী মানেই কাজের জগতে আপস নয়! ধারণাগুলো পাল্টে দিতে চায় মেহের (নুসরত জাহান)। মেহেরের উপস্থিতি বোঝায়, নারীর শরীর অত সস্তা নয়!

Advertisement

অময় দেব রায়

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৮ ২১:২৬
Share:

ছবি: ক্রিসক্রস

Advertisement

পরিচালনা: বিরসা দাসগুপ্ত

অভিনয়: জয়া আহসান, সোহিনী সরকার, প্রিয়ঙ্কা সরকার, মিমি চক্রবর্তী, নুসরত জাহান

Advertisement

পাঁচটি মেয়ে। মেহের, ইরা, রূপা, সুজি এবং মিস সেন। বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থান থেকে উঠে আসা পাঁচ জন। কেউ চাকরি খুঁজে হয়রান। কেউ আপস না করতে পেরে পিছলে যাওয়া। কেউ জীবনের অগ্রাধিকার নিয়ে ব্যতিব্যস্ত। কেউ আবার সংসারের জাঁতাকলে পিষ্ট হতে হতে জীবনের মানে হারিয়ে ফেলা এক ছাপোষা মেয়ে!

প্রত্যেকের একটা দিনের ক্রাইসিস ‘ক্রিসক্রস’-এর প্রাণ। ছবির শুরুটা সকালের সুন্দর ছন্দে। গোটা চার-পাঁচেক উঠতি স্ট্রিট মিউজিশিয়ান রোজকার মতো রাস্তার ধারে তাদের ইন্সট্রুমেন্ট সাজায়। ওরা নিশ্চিত, কোনও না কোনও এক দিন ঠিক সাধারণের নজর কেড়ে নেবে।

অন্য দিকে, ফটোগ্রাফার ইরার (মিমি চক্রবর্তী) জীবন দশটা-পাঁচটার গণ্ডিতে বাঁধা থাকে না। মাঝেমধ্যে গোটা একটা রাত কেটে যায় অফিসেই। ব্যক্তিজীবন, সম্পর্ক আর প্রফেশনাল কমিটমেন্টের বোঝায় গুলিয়ে যায় জীবনের ব্যালান্স।

শাশুড়ির মুখঝামটা, দেওয়ের চাউনি আর বরের চূড়ান্ত নির্লিপ্ততায় কখন যে রূপার (সোহিনী সরকার) মুখে রক্ত উঠে আসে, কারও খেয়াল হয় না! কারণ, এই ডিজিটাল যুগেও যে বরের শারীরিক অক্ষমতা নয়, প্রশ্ন ওঠে রূপার মাতৃত্ব নিয়েই!

‘ক্রিসক্রস’ ছবির একটি দৃশ্য

স্কুলে ফিজ দিতে না পারলে সন্তানের নাম কাটিয়ে দেওয়া হবে। হাতে মাত্র দু’দিন! এ যেন সুজির (প্রিয়ঙ্কা সরকার) ধর্মসঙ্কট। এ লড়াইয়ে তাকে তো জিততেই হবে। সে যে সিঙ্গল মাদার!

অভিনেত্রী মানেই কাজের জগতে আপস নয়! ধারণাগুলো পাল্টে দিতে চায় মেহের (নুসরত জাহান)। মেহেরের উপস্থিতি বোঝায়, নারীর শরীর অত সস্তা নয়!

আরও পড়ুন: মনের সুখে ‘হালকা’ হতে চায় এই ছেলে!

বাকি রইল মিস সেন (জয়া আহসান)। মানুষ যত উপরে ওঠে তত নাকি একা হয়ে যায়। মিস সেন চরিত্রটি বোধহয় তেমনই একা! পরিবার-পরিজন হারিয়ে কেরিয়ারের শীর্ষে পৌঁছনো মিস সেনের চারিত্রিক রূঢ়তা আসলে সেই ফাঁপা জীবনের পরিচয় বহন করে।

আরও পড়ুন: মুভি রিভিউ: ‘পিয়া রে’তে মন ভাল করা বিনোদন পাবেন

‘ক্রিসক্রস’ দেখতে দেখতে একাধিক প্রশ্ন জাগে। কিন্ত মুশকিল হল, অনেক ভেবেচিন্তেও তার কোনও সদুত্তর মেলে না! মেহের, সুজি’র মতো স্ট্রাগলিং উইমেন, যারা টাকার অভাবে জর্জরিত, তাদের মুখে সর্বক্ষণ এত চড়া মেকআপ? তা-ও না হয় বুঝলাম মেহের অভিনেত্রী হতে চায়। কিন্তু সুজি? না, স্পষ্ট নয়! যে রূপা জীবন থেকে মুখ ফিরিয়ে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সে-ই কি না ছবি শেষের পার্টিতে এত হাসিখুশি? বড্ড মেলোড্রামাটিক নয় কি? এমনিতেই হ্যাপি এন্ডিং-এর মোহে পড়ে শেষটা চূড়ান্ত অতিনাটকীয়! যাই হোক, জয়া কিন্তু এ বার হতাশ করলেন। অভিনয় মোটেই খুলল না। কেরিয়ারের শীর্ষে পৌঁছনো নারীর সামাজিক আড়ষ্টতা প্রকাশ করতে গিয়ে অভিনয়ে কৃত্রিমতা এল। ‘বিসর্জন’, ‘ভালোবাসার শহর’-এর জয়াকে খুব মিস করছিলাম। বরং ছটফটে ইরার চরিত্রে মিমিকে বেশ লাগে। বাকিদের নিয়ে বলার মতো কিছু নজরে পড়ল না। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের অতি ব্যবহার একঘেয়েমি আনে। পরিচালক বিরসা দাসগুপ্ত বোধহয় একটু তাড়াহুড়ো করে ফেললেন। আর একটু যত্নশীল হলে ‘ক্রিসক্রস’ সাদামাটা উপন্যাসের ততোধিক সাদামাটা চলচ্চিত্রায়ন না-ও হতে পারত!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন