অকালবোধন

অর্পিতার ভাল অভিনয়। লিখছেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়।বিষয়ে নতুনত্ব আছে। তবুও ভরা শীতে অয়নাংশু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বোধন’ জমল না। বুদ্ধিমান পরিচালকেরাও তো মাঝে মাঝে লুজ বল দিয়ে ফেলেন। চিত্রনাট্যে অনেক বিষয় ঢুকিয়ে ছবিকে ইলাস্টিকের মতো টানতেও থাকেন। দুর্বলতার কথায় পরে আসছি। এই ছবির প্রধান অস্ত্র অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:০১
Share:

বিষয়ে নতুনত্ব আছে। তবুও ভরা শীতে অয়নাংশু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বোধন’ জমল না। বুদ্ধিমান পরিচালকেরাও তো মাঝে মাঝে লুজ বল দিয়ে ফেলেন। চিত্রনাট্যে অনেক বিষয় ঢুকিয়ে ছবিকে ইলাস্টিকের মতো টানতেও থাকেন।

Advertisement

দুর্বলতার কথায় পরে আসছি। এই ছবির প্রধান অস্ত্র অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয়। নিজের সন্তান থাকা সত্ত্বেও স্বামী অর্চির (জয় সেনগুপ্ত) ইচ্ছায় কন্যাসন্তান দত্তক নেওয়া এক মা। সেই সন্তান অটিস্টিক। সেটা মেনে নিতে পারে না ঈশানী (অর্পিতা)। অথচ ‘ভাল মা’ হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যায় সে। মাতৃত্বই কি নারীর শেষ কথা? অয়নাংশু প্রশ্ন তুলেছেন।

কে বলেছে? তা তো নয়!

Advertisement

এই বিষয় নিয়েই তো ছবিটা এগোতে পারত। কিন্তু তার মধ্যে একে একে চলে এল অটিজিম, স্প্যাস্টিক চাইল্ড, পল কোয়েলো, রবীন্দ্রসঙ্গীত, ‘অমল ও দইওয়ালা’। দেখতে দেখতে বোঝা যায় না অয়নাংশু ঠিক কী বলতে চাইছেন?

দত্তকের মতো একটা স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে ছবি এগোয়। কিন্তু পরিচালক কি খেয়াল করেননি কেবলমাত্র গর্ব বোধ করার জন্যই আজকাল বাবা-মায়েরা অনাথ শিশুদের অ্যাডপ্ট করেন না! যে ছবি দত্তক নেওয়ার পক্ষেই কথা বলে সেই ছবির সংলাপে থেকে থেকেই ‘নিজের রক্ত’ বা ‘নিজের পেটের সন্তান’ গোছের সংলাপের পুনরাবৃত্তি বড্ড বেশি কানে লাগে! পরিচালকের দ্বন্দ্বই ছবিতে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে।
মাতৃত্বই নারীর শেষ কথা নয়, কোনও নতুন কথা বলছেন না পরিচালক। কিন্তু ছবি জুড়েই তো মাতৃত্বকে খোঁজা! তা হলে? আরও অবাক হতে হয় যখন দেখি একজন মা নিজের সন্তানের অটিজিমের সমস্যাকে মেনে নিতে পারছেন না, (অ্যাডপ্টেড চাইল্ড বলতে চাইছি না। ছবিতে বড্ড বেশি অ্যডপ্টেড চাইল্ড কথাটা বলা হয়েছে) বাচ্চাটি অন্য কারও সন্তান বলে। এমনটা যে অস্বাভাবিক তা বলছি না।
কিন্তু ছবিতে প্রথম দিকে তা হলে অর্পিতার এমন মাতৃত্বের ইমেজ ধরা থাকল কেন? আর সেই মা নিজের সন্তানের বংশগত রোগ ধরার পরেই ‘অন্যের সন্তান’— যাকে তাঁরা দত্তক নিয়েছেন তার অটিজিমের সমস্যাকে অবশেষে মেনে নিলেন! তা হলে মাতৃত্বই কি নারীর শেষ কথা? ‘বোধন’-ই বা কার? বাংলা ছবিতে কথায় কথায় দুর্গাপুজোর মন্তাজ আর ভাল লাগে না।

সামাজিক বার্তা দেওয়ার দায় পরিচালক না নিলে ছবিটা কিন্তু গতি নিতে পারত। যেখানে পরিচালক সেটা করেননি, সেখানে ছবিটিকে সহজ মনে হয়েছে। এ বারের ইন্ডিয়ান প্যানোরমায় ‘বোধন’ নির্বাচিত হয়েছে।
ভাল লেগেছে জয় সেনগুপ্ত, মমতাশঙ্কর, পার্থ ঘোষ, গৌরী ঘোষ, দেবশংকর হালদার আর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয়। বুদ্ধিদীপ্ত সংলাপও ছবিটির বিষয় আর পরিচালকের সংবেদনশীল ভাবনাকে তুলে ধরেছে।

হয়তো প্রথম পরিচালনার অনভিজ্ঞতার জন্যই অনেক সামাজিক বিষয় নিয়ে একসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলেছে ছবিটি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন