বাস্তব ও স্বপ্নের ‘বাগী’রা

সিনেমার কাহিনি সত্তরের দশকের। মানের ডাকাতদলের ভিতরের মনোমালিন্য, অন্য ডাকাতদলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, ডাকাতদের সঙ্গে পুলিশ অফিসার বীরেন্দ্র সিংহ গুজ্জরের (আশুতোষ রানা) বিস্তর গুলি-যুদ্ধ, এক বারো বছরের কিশোরীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে লখনা ও ইন্দুমতী তোমরের (ভূমি পেডনেকর) লড়াই, কাহিনি এ সবই। উপ-কাহিনি, ‘বধূ’ ইন্দুমতী ও তার পারিবারিক টানাপড়েন।

Advertisement

অর্ঘ্য বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৯ ০০:১১
Share:

মাছি ভনভন করছে। ক্যামেরার ক্লোজ় শটে দেখা যায়, মরা সাপ পথ আগলে। দমবন্ধ আবহে এগিয়ে আসছে মান সিংহ (মনোজ বাজপেয়ী), লখনা (সুশান্ত সিংহ রাজপুত), ভাকিল সিংহ (রণবীর শোরে)-সহ ঠাকুরদের গ্যাং। বন্দুকের নল দিয়ে মরা সাপ সরিয়ে পথ সাফ করে মান। চম্বলের গিরিখাতের রুখা মাটিকে সাক্ষী রেখে এ ভাবেই ‘সোনচিড়িয়া’র সুর বাঁধা শুরু করেন পরিচালক অভিষেক চৌবে।

Advertisement

সিনেমার কাহিনি সত্তরের দশকের। মানের ডাকাতদলের ভিতরের মনোমালিন্য, অন্য ডাকাতদলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, ডাকাতদের সঙ্গে পুলিশ অফিসার বীরেন্দ্র সিংহ গুজ্জরের (আশুতোষ রানা) বিস্তর গুলি-যুদ্ধ, এক বারো বছরের কিশোরীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে লখনা ও ইন্দুমতী তোমরের (ভূমি পেডনেকর) লড়াই, কাহিনি এ সবই। উপ-কাহিনি, ‘বধূ’ ইন্দুমতী ও তার পারিবারিক টানাপড়েন।

কাহিনির দক্ষ বুনোট ও বর্ণনায় বেশ কিছু খোঁচা ও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। প্রথমত, লখনার এক সঙ্গী স্বপ্ন দেখে আত্মসমর্পণের পরে জেল-পর্ব শেষে উটের পিঠে চড়ে চাষ করবে, ঘর বাঁধবে। তখনই ফের প্রশ্ন ওঠে ডাকাতের ধর্ম কী, কেন ডাকাত হওয়া? দ্বিতীয়ত, আত্মসমর্পণের স্বপ্ন দেখানো হলেও বাস্তবে তা হতে না দেওয়ার পরিস্থিতি কী ভাবে তৈরি হয়, সংলাপ ও একটি মৃত্যুর দৃশ্যে রয়েছে সে চিত্র। তৃতীয়ত, ‘ডাকাতরা ঘোড়ায় চড়ে আসে’, বলিউডি ডাকাত-ফিল্মের এমন অবাস্তব-নির্মাণকে ব্যঙ্গও করা হয়েছে। চতুর্থত, শ্বশুর, মর্দ ঠাকুরদা, বাবা— একই পুরুষের এতগুলি ‘পরিচয়’ উস্কে দেয় গার্হস্থ্য হিংসার প্রসঙ্গ। পঞ্চমত, কিশোরীটি ‘দলিত’, তাই ‘ঠাকুর’ ডাক্তারের বাড়িতে তার প্রবেশ নিয়ে প্রশ্ন ওঠা ভারতবর্ষের জাতপাতকেন্দ্রিক সমাজের কথা বলে। আবার সংলাপে ‘সরকারি গুলিতে নয়, প্রতিশ্রুতিতে মানুষ মরে’ পুরোপুরি রাজনৈতিক।

Advertisement

সোনচিড়িয়া
পরিচালনা: অভিষেক চৌবে
অভিনয়: সুশান্ত, ভূমি, মনোজ, আশুতোষ, রণবীর
৬.৫/১০

বুন্দেলি হিন্দি এবং ‘বাগী’র মতো শব্দ ও ‘অপভাষা’ প্রয়োগ, চম্বলের ভূপ্রকৃতিতে দৃশ্যগ্রহণে আঞ্চলিক রং সাবলীল হয়। সে রঙে সঙ্গত দেয় ‘বাগী রে’, ‘সাঁপ খাভেগা’-র মতো গানগুলি। হাজারেরও বেশি ডাকাতি, ১৮৫টি খুনে অভিযুক্ত চম্বলের ডাকাত, বাস্তবের মান সিংহের সঙ্গে মনোজের চরিত্রটির নাম-মিল দর্শকের কাছে পরিচিত ঠেকে।

অভিনয়ে, স্বল্প-ভাষণে সুশান্ত, ভূমিরা চেষ্টা করছেন। তবে অভিনয়ের ভরকেন্দ্রে মনোজ (মাত্র কয়েকটি দৃশ্যে থেকেও), রণবীর ও আশুৈতোষের অবস্থান তুল্যমূল্য। সিনেম্যাটোগ্রাফি, আবহ, সম্পাদনা সবই সাযুজ্যপূর্ণ। নৃত্য, প্রেম-ঘন দৃশ্য, অতিরিক্ত দার্শনিক সংলাপ বাদ দিয়ে সিনেমাটিকে রুখাই রেখেছেন পরিচালক।

তবে কাহিনির ক্ষেত্রে আরও কিছু জট-ছাড়ানোর জায়গা, সুশান্তের মুখে আরও একটু সংলাপ, অভিনয়ে কোনও দ্বৈরথ-দৃশ্যের সংযোজন রাখা যেতেই পারত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন