Swastik Sanket: ইতিহাসে ভর করে রহস্যভেদ

ধাঁধার সমাধান করতে করতে ইতিহাসকে আরও একবার ফিরে দেখে এ ছবি। আর সে যাত্রায় শামিল করায় দর্শককেও।

Advertisement

সায়নী ঘটক

শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২২ ০৮:৩১
Share:

স্বস্তিক সঙ্কেত
পরিচালক: সায়ন্তন ঘোষাল
অভিনয়:নুসরত, গৌরব, রুদ্রনীল, শাশ্বত, শতাফ
৬.৫‌/১০

Advertisement

বাঙালি আত্মবিস্মৃত জাতি, এ অভিযোগ অনেক দিনের। তবে সে অভিযোগের মুখে ছাই দিয়ে সাম্প্রতিক বাংলা ছবিতে যে ভাবে বাঙালির স্মরণীয় সব কীর্তি তুলে ধরার চেষ্টা হচ্ছে থ্রিলারের মোড়কে, তা সাধুবাদযোগ্য। সায়ন্তন ঘোষালের ‘স্বস্তিক সঙ্কেত’ ছবিটির ভিত্তিও তাই। হিটলার ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, সুভাষচন্দ্র বসুর জার্মানি-সফরের অনালোচিত অধ্যায়, মারণভাইরাসের আতঙ্ক, বিশ্ব জুড়ে অভিবাসী সমস্যা, নারী ক্ষমতায়নের মতো বিভিন্ন বিষয়কে এক সূত্রে বেঁধে ফেলেছে এ ছবির চিত্রনাট্য। আর এই বিভিন্ন সুতো দিয়ে বোনা জালে ঘনিয়ে উঠেছে রহস্য। লন্ডনের প্রেক্ষাপটে হারিয়ে যাওয়া অতীতকে সম্বল করে সে রহস্যভেদে নামে রুদ্রাণী-প্রিয়ম।

ক্রিপ্টোগ্রাফার রুদ্রাণী (নুসরত জাহান) তার বই প্রকাশের সূত্রে লন্ডনে যায়। স্বামী প্রিয়ম (গৌরব চট্টোপাধ্যায়) সেখানেই কর্মরত। ড. শুমেখার (শতাফ ফিগার) কিছু সঙ্কেতের পাঠোদ্ধারে রুদ্রাণীর সাহায্য চায়। এর পরেই লন্ডনে এক ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেয়। রুদ্রাণী-প্রিয়ম বুঝতে পারে, এই মারণভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সেই সঙ্কেতের সমাধান করেই। তবে এর অ্যান্টিডোটের ফর্মুলাটি তখনও পৌঁছয়নি ভুল হাতে। এই ফর্মুলার খোঁজ করতে গিয়ে রুদ্রাণী-প্রিয়ম সন্ধান পায় বৈজ্ঞানিক সত্যেন্দ্রনাথ চ্যাটার্জির পুত্র সুভাষের (দ্বৈত চরিত্রে রুদ্রনীল ঘোষ)। তারা ফিরে দেখে নেতাজি-হিটলার সাক্ষাৎপর্ব, অতীতের যোগসূত্রে চলে ফর্মুলার খোঁজ। সঙ্কেত-সমাধান ও তার শেষরক্ষা হওয়া নিয়েই বাকি ছবি।

Advertisement

কল্পকাহিনির মধ্যে নিক্তি মেপে ইতিহাস ও বিজ্ঞানের অনুপ্রবেশ ঘটেছে এই গল্পে। কিছু জায়গায় তা অবিশ্বাস্য ঠেকলেও রোমাঞ্চে ঘাটতি পড়ে না বিশেষ। সুভাষচন্দ্রকে নিয়ে বিশ্বাস পাটিলের লেখা ‘মহানায়ক’ বইয়ের রেফারেন্স এসেছে কখনও, আবার নোলানের ব্যাটম্যান-মুভির প্রচারকৌশলও কাজে লেগেছে ধাঁধার সমাধানে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দাঁড়িয়ে লন্ডন শহরের বুকে একের পর এক তদন্তহীন খুনের যে ব্যাখ্যা গল্পে রয়েছে, তা কষ্টকল্পিত। আর ঐতিহাসিক তথ্য-সংবলিত সংলাপ যে ভাবে চরিত্রদের মুখে বসানো হয়েছে, তা-ও একটু বিসদৃশ ঠেকেছে।

এ ছবি কোভিড-পরবর্তী সময়ের লন্ডনে শুট করা। গল্পে ভাইরাসের অনুপ্রবেশের কারণও তাই প্রত্যাশিত। এই কাহিনির ‘হিরো’ রুদ্রাণী, সে চরিত্রে আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে অভিনয় করেছেন নুসরত। গৌরবের সাবলীল অভিনয় থ্রিলারের টেনশন হালকা করেছে মাঝে মাঝেই। দু’জনকে জুটি হিসেবেও মন্দ লাগেনি। ‘গুমনামী’র পরে মেকআপ শিল্পী সোমনাথ কুণ্ডু প্রস্থেটিক্সের ব্যবহারে আরও একবার পর্দায় জ্যান্ত করে তুললেন নেতাজিকে। তাতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেছেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। রুদ্রনীল ঘোষের মেকআপ বরং একটু ভারাক্রান্ত। তাঁর অভিনয় ভাল লাগলেও ইংরেজি সংলাপগুলি কানে লেগেছে। স্বল্প পরিসরে সুন্দর কাজ করেছেন শতাফ ফিগার।

পরিচালক সায়ন্তনের বড় পর্দার যাত্রা শুরু হয়েছিল ‘যকের ধন’, ‘আলিনগরের গোলকধাঁধা’ ইত্যাদি ছবি দিয়ে। সে সব ছবির চিত্রনাট্যকার সৌগত বসু ‘স্বস্তিক সঙ্কেত’-এরও স্ক্রিনপ্লে লিখেছেন। সঙ্কেতের সমাধান করতে করতে রহস্যের কেন্দ্রে পৌঁছে যাওয়াই এই লেখক-পরিচালক জুটির জোরের জায়গা। তাঁদের সঙ্গে এ ছবিতে যোগ দিয়েছেন দেবারতি মুখোপাধ্যায়, যাঁর লেখা উপন্যাস ‘নরক সঙ্কেত’ অবলম্বনেই তৈরি ছবির কাহিনি। রুদ্রাণীর চরিত্র-নির্মাণেও স্রষ্টার ছায়া দেখতে পাওয়া যায়।

ধাঁধার সমাধান করতে করতে ইতিহাসকে আরও একবার ফিরে দেখে এ ছবি। আর সে যাত্রায় শামিল করায় দর্শককেও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement