Satyajit Ray

সত্যজিতের আয়নায় ঝাপসা প্রতিবিম্ব

‘বারীন ভৌমিকের ব্যারাম’ অবলম্বনে তৈরি ‘হাঙ্গামা হ্যায় কিউঁ বরপা’তে দুই জাত অভিনেতাকে নিয়েই অর্ধেক বাজিমাত করেছেন অভিষেক চৌবে।

Advertisement

সায়নী ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২১ ০৬:৫৫
Share:

মাস্টার স্টোরিটেলারের ভাবনা সেলুলয়েডে তুলে ধরা সহজ কাজ নয়। এ প্রজন্মের তিন পরিচালক ও ক্রিয়েটর সায়ন্তন মুখোপাধ্যায় সেই গুরুদায়িত্ব কাঁধে নিয়েছিলেন। সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষে তাঁদের নিবেদন অ্যান্থলজি সিরিজ় ‘রে’ তাঁরই চারটি ছোটগল্পের স্ক্রিন অ্যাডাপ্টেশন। সত্যজিতের সৃষ্টিকে নিজেদের মতো করে পরিবেশনার মুনশিয়ানা কিছু গল্পে প্রতিভাত, কোনওটায় নয়। কোথাও স্ক্রিনপ্লে ছাপিয়ে গিয়েছে পারফরম্যান্সকে, কোথাও আবার অভিনয়ের জোরেই উতরেছে কাহিনি। তবে দীর্ঘ পর্বগুলির বাঁধুনি আরও মজবুত হতে পারত। ওটিটি-র প্রধান চ্যালেঞ্জ, দর্শকের মনোযোগ ধরে রাখা। বিশেষ করে গল্প যখন সত্যজিতের, তখন ধৈর্যচ্যুতির অবকাশ একেবারেই বাঞ্ছনীয় নয়।

Advertisement

‘বিপিন চৌধুরীর স্মৃতিভ্রম’ গল্পনির্ভর কাহিনি ‘ফরগেট মি নট’ দিয়ে অ্যান্থলজি শুরু। সত্যজিৎ-ভক্ত সৃজিত মুখোপাধ্যায় মূল গল্প অনুসরণে এগিয়েছেন। চারটি কাহিনির মধ্যে তাঁর নির্দেশিত দু’টি এপিসোডই সবচেয়ে বেশি সাহিত্যনির্ভর। প্রথম গল্পে রাঁচীর জায়গায় প্রেক্ষাপট অজন্তার গুহা। নির্দোষ মজার পরিবর্তে এখানে প্রতিহিংসা গভীর, আরও ডার্ক। আলি ফজ়ল, শ্বেতা বসু প্রসাদ, অনিন্দিতা বসুরা নিজেদের সেরাটা দিয়েছেন। কিন্তু কিছু সংলাপে স্মৃতিভ্রংশের ক্রমাগত পুনরাবৃত্তি, সেক্রেটারির সঙ্গে ক্লিশে পরকীয়ায় প্লট সাজিয়ে মূল গল্পের প্রতি কতটা সুবিচার করতে পারলেন সৃজিত? এক ঘণ্টা পাঁচ মিনিটের পর্বের শেষে সুতো গোটানোয় তাড়াহুড়োও করা হয়েছে।

দ্বিতীয় গল্প ‘বহুরূপিয়া’তেও মূল গল্পের জোরালো প্রভাব। সত্যজিতের ‘বহুরূপী’ নিকুঞ্জ সাহা মানুষকে বোকা বানানোর উদ্দেশ্যে নানা মেকআপ করে বেরোত। শেষে একদিন রাখালের পালে বাঘ পড়ে। কিশোরদের জন্য লেখা সে গল্পের শেষে নিকুঞ্জ সাহাকে সামান্য কড়কে দিয়েই সে যাত্রা ছেড়ে দিয়েছিল পুলিশ। সৃজিতের মেকআপ শিল্পী ইন্দ্রাশিস (কে কে মেনন) কিন্তু সহজে পার পায় না। এখানেও নিয়তি আর প্রতিশোধস্পৃহার অন্ধকার ছায়া। কিন্তু অন্যকে ফাঁকি দেওয়ার ফন্দিতেই ফাঁক রয়ে গেলে তা বাস্তববিমুখ হয়ে পড়ে। এখানে ইন্দ্রাশিসের কাহিনিও খানিকটা সে রকমই। ‘ভিঞ্চি দা’, ‘গুমনামী’র পরে প্রস্থেটিক্সের প্রতি পরিচালকের ভালবাসা আরও একবার প্রকাশ পেয়েছে এই ছবিতে। তবে সবক’টি লুকেই যে প্রস্থেটিক্স জুতসই হয়েছে, তা নয়। দর্শকের সাদা চোখে মেকআপ চড়া লাগলে,সাধুবাবা-ই বা ধরতে পারবে না কেন! ছোট্ট উপস্থিতিতেই দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য দুর্দান্ত। কে কে মেননও তুখোড়। ভাল লাগে রাজেশ শর্মা, বিদিতা বাগকে।

Advertisement

রে (সিজ়ন ওয়ান)
পরিচালনা: সৃজিত মুখোপাধ্যায়, অভিষেক চৌবে, ভাসান বালা
অভিনয়: আলি, শ্বেতা, কে কে মেনন, মনোজ, গজরাজ, হর্ষবর্ধন
৫/১০

মনোজ বাজপেয়ী, গজরাজ রাও পর্দায় আসতে গতি পায় অ্যান্থলজি। ‘বারীন ভৌমিকের ব্যারাম’ অবলম্বনে তৈরি ‘হাঙ্গামা হ্যায় কিউঁ বরপা’তে দুই জাত অভিনেতাকে নিয়েই অর্ধেক বাজিমাত করেছেন অভিষেক চৌবে। গুলাম আলির গজ়লের সঙ্গে ক্লেপটোম্যানিয়াকে যে ভাবে মিলিয়ে দিয়েছেন পরিচালক, তা সাধুবাদযোগ্য। তবে ট্রেনের কামরায় আবদ্ধ কাহিনিটি বড্ড একমুখী। তাতে আরও পরত যোগ করলে যাত্রা আরও উপভোগ্য হতে পারত।

ভাসান বালা ‘স্পটলাইট’-এর আইডিয়াটুকু ছাড়া পুরোটাতেই স্বকীয়তার ছাপ রেখেছেন। কাহিনির ভাঁজে ভাঁজে ‘গুগাবাবা’-সহ সত্যজিতের প্রতি ট্রিবিউট, বলিউড ও আধ্যাত্মিকতা গ্রিনরুমে মিলেমিশে এক হয়ে যাওয়া— ভাবনায় ও ট্রিটমেন্টে ছক ভেঙেছেন পরিচালক। হর্ষবর্ধন কপূরের কাস্টিং জুতসই না হলেও, রাধিকা মদন দারুণ। চন্দন রায় সান্যাল আলাদা করে নজর কাড়েন।

সব ক’টি গল্পেই আয়নায় নিজেদের সত্তাকে দেখতে চায় চরিত্রেরা। সে আয়নার কাচ আর একটু পরিষ্কার হলে ভাল হত। সত্যজিৎ রায় নামটিই চুম্বকের মতো, ম্যাজিকাল। এখানে উধাও সেই আকর্ষণটুকুই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন