New Web Series Review

আমেরিকান সিরিজ়ের ব্যর্থ অনুকরণ ‘কর্মা কলিং’, কিন্তু মুখ্য চরিত্রে রবিনা কেমন?

‘কর্মা কলিং’ চাকচিক্যপূর্ণ রিভেঞ্জ ড্রামা হয়েছে বটে, কিন্তু অগভীর। সাত পর্বের সিরিজ়ের প্রথম কয়েকটি পর্ব পেরোতেই তা বোঝা যায়।

Advertisement

সায়নী ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৬:৫৭
Share:

রবিনা টন্ডন। —ফাইল চিত্র।

এবিসি-র জনপ্রিয় ড্রামা সিরিজ় ‘রিভেঞ্জ’-এর দেশি ভার্শন নির্মাণ করেছেন রুচি নারাইন। মাইক কেলির অরিজিন্যাল সিরিজ়টি দর্শকের মন জিতেছিল এক সময়ে। তার দেশজ বিনির্মাণে আরও দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন ছিল তাই। বিশেষ করে, কনটেন্ট আর মেকিংয়ে ভারতীয় ওটিটি এই মুহূর্তে যে জায়গায় দাঁড়িয়ে, সেখানে দায়িত্ব বেড়ে যায় অনেকটা। ‘কর্মা কলিং’ চাকচিক্যপূর্ণ রিভেঞ্জ ড্রামা হয়েছে বটে, কিন্তু অগভীর। সাত পর্বের সিরিজ়ের প্রথম কয়েকটি পর্ব পেরোতেই তা বোঝা যায়। বদলা নেওয়ার খেলায় সব অঙ্কই এত সুপরিকল্পিত ভাবে মিলে যায়, একটা পর্যায়ে গিয়ে তা অবাস্তব ঠেকে। চরিত্রগুলিও রক্তমাংসের হয়ে ওঠে না ঠিক, জাঁকজমকের ভার এতটাই। এ সিরিজ়ের প্রাণকেন্দ্র রবিনা টন্ডন। তবু তাঁর উপস্থিতি বাঁচাতে পারেনি সিরিজ়টিকে। নেটফ্লিক্সের ‘আরণ্যক’ দিয়ে ওটিটি-তে পা রেখেছিলেন রবিনা। ‘কর্মা কলিং’ তাঁর দ্বিতীয় সিরিজ়। তবে ওয়েব মাধ্যমে জায়গা পাকা করতে গেলে তাঁকে প্রজেক্ট নির্বাচনে আরও সতর্ক হতে হবে।

Advertisement

আলিবাগের বিলাসবহুল, ধনশালী বৃত্তে শুরু হয় কাহিনি, যে বৃত্তের মধ্যমণি নব্বইয়ের দশকের বিখ্যাত নায়িকা ইন্দ্রাণী কোঠারি (রবিনা)। নাম, যশ, প্রভাব-প্রতিপত্তির ছটায় চারপাশ আলো করে রাখা ইন্দ্রাণীর পিছু ছাড়ে না তার অতীত। প্রতিবেশী কর্মা তলওয়ারের (নম্রতা শেঠ) আগমন ইস্তক দুর্যোগ ঘনিয়ে ওঠে ইন্দ্রাণীর জীবনে। লাস্যে, বিত্তে, বুদ্ধিতে কর্মা আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে অচিরে। আলিবাগের সবচেয়ে প্রতিপত্তিশালী কোঠারি ম্যানসনের ঠিক পাশেই বাড়ি কেনে কর্মা। আসলে পরিচয় গোপন করে বাবার (রোহিত রায়) জীবনে ঘটে যাওয়া অবিচারের শোধ নিতে বদ্ধপরিকর এই রহস্যময়ী। কী ভাবে একে একে সে তার প্রতিপক্ষদের নিশানায় বিঁধবে, সেই সূত্র ধরেই এগোতে থাকে গল্প। ইন্দ্রাণীর দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে তার ছেলে অহনের (বরুণ সুদ) নজর কাড়ে কর্মা। এ দিকে কর্মার অতীত সম্পর্কে কেউ কিচ্ছু জানতে-বুঝতে পারে না। তার তৈরি করা জালে ধীরে ধীরে জড়িয়ে পড়ে আলিবাগের ধনকুবেররা। কর্মাকে মদত দিতে রয়েছে টেক মিলিয়নেয়ার জ়েন খানের চরিত্রটি (ভিরাফ পটেল)। এই সাইবার সিকিয়োরিটি টাইকুনের সাহায্য নিয়ে স্বচ্ছন্দে সিসিটিভি, স্পাইক্যাম, হ্যাকিংয়ের উপরে ভর করে নিজের ‘মিশন’ চালিয়ে যায় কর্মা। কিন্তু এই মিশন শেষ পর্যন্ত কোথায় নিয়ে যায় তাকে? দর্শককেও কি আদৌ কোথাও পৌঁছে দেয়?

কর্মা কলিং

Advertisement

পরিচালক: রুচি নারাইন

অভিনয়: রবিনা, নম্রতা, বরুণ, ওয়ালুষ্কা

৪.৫/১০

নম্রতা ও রবিনার চরিত্র দু’টি এ কাহিনির স্তম্ভ। কিন্তু আভিজাত্যের ভারে নুয়ে পড়েছে তাদের সহজাত অভিনয়। গ্ল্যামারের পারদ এতটাই চড়া গোটা সিরিজ়ে, মেকআপ-পোশাকের জমকে এতটা ন্যুব্জ চরিত্রগুলি যে, ক্লোজ়-আপে অভিব্যক্তি ধরার সময়ে মুখের রেখা পর্যন্ত ভাল করে কাঁপেনি শিল্পীদের। কোঠারিদের পার্টি, চ্যারিটি গালা, ডান্ডিয়া উৎসবের ঝলমলে দুনিয়ায় যে ভাবে ঢুকে পড়ে প্রভাব বিস্তার করে কর্মার চরিত্রটি, তা-ও যেন খানিক আরোপিত। অথর-ব্যাকড চরিত্রে নম্রতা চেষ্টা করেছেন, কিন্তু ছাপ ফেলার মতো নয় তা। রবিনার চরিত্রটিকে ঘিরেই সবটা, অথচ যেন প্রাণপ্রতিষ্ঠা হয়নি সে চরিত্রে। ইন্দ্রাণীর বিপন্নতা, হেরে যাওয়ার মুহূর্তগুলিতে রবিনা কাষ্ঠবৎ, প্রাণহীন। তুলনায় ভাল লাগে কয়েক জন পার্শ্ব চরিত্রাভিনেতার কাজ। জ়েনের চরিত্রে ভিরাফ পটেল, ইন্দ্রাণীর মেয়ে মীরার চরিত্রে দেবাংশী সেন তাজা বাতাসের মতো। ইন্দ্রাণীর সহকারীর চরিত্রে অ্যামি ইলাও ভাল কাজ করেছেন। তবে সিরিজ়ের আবহ, সম্পাদনা, ক্যামেরার কাজের মতো টেকনিক্যাল বিভাগগুলিতে তেমন নতুনত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না।

নারীবাদ, ক্ষমতায়নের যে সংজ্ঞা ও সমীকরণ ‘কর্মা কলিং’-এ দর্শানো হয়েছে, তা দেখনদারিতে ভরপুর। ভবিতব্য ও কর্মফলের উপরে ভর করে বোনা এই প্রতিহিংসার গল্প তাই আগ্রহ জাগায় না, চাকচিক্যেই আটকে থাকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন