Bobby Deol

Love Hostel: ‘লাভ’-এর আশায় লোকসানে যোগফল করে

ছবি শুরু হয় এক সদ্য-বিবাহিত দম্পতিকে গাছে ঝুলিয়ে খুনের দৃশ্য দিয়ে। সামনে আসে ঠান্ডা মাথার খুনি দাগর (ববি দেওল)।

Advertisement

নবনীতা দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২২ ০৬:৫০
Share:

ভিন্ন ধর্মে প্রেমের সম্পর্ক আর তার ফলে পরিবারের আক্রোশের শিকার, লাভ জিহাদের এই চেনা বৃত্তেই ঘুরে বেড়ায় জ়ি ফাইভের ‘লাভ হস্টেল’ ছবির গল্প। সামাজিক ও রাজনৈতিক দমননীতিকে ‘লাভ হস্টেল’ ছবিতে স্পষ্ট তুলে ধরেছেন পরিচালক শঙ্কর রমন। এক দিকে যেমন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে ব্যবহার ও আইনে বৈষম্য ফুটে উঠেছে, তেমনই পিতৃতন্ত্রের মুখোশহীন চেহারাও প্রকাশ পেয়েছে গল্পে।

Advertisement

ছবি শুরু হয় এক সদ্য-বিবাহিত দম্পতিকে গাছে ঝুলিয়ে খুনের দৃশ্য দিয়ে। সামনে আসে ঠান্ডা মাথার খুনি দাগর (ববি দেওল)। উচ্চবর্ণের হিন্দু পরিবারের মেয়ে জ্যোতি দিলাওয়ার (সানিয়া মলহোত্র) ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আশু শৌকিন (বিক্রান্ত মেসি) একে অপরকে ভালবেসে বিয়ে করে। কোর্টের অনুমতি নিয়ে তারা আশ্রয় পায় এক সরকারি সেফ হোমে। সেখানে তাদের মতো আরও নববিবাহিত দম্পতিও ঠাঁই পায়। কিন্তু অচিরেই তারা বুঝতে পারে যে এই সেফ হোম আদৌ তাদের জন্য নিরাপদ নয়। জ্যোতির ঠাকুমা এমএলএ কমলা দিলাওয়ারের (স্বরূপা ঘোষ) নির্দেশে দাগর পৌঁছয় সেখানে, আশু ও জ্যোতিকে নিকেশ করতে। সেই আঁচ পেয়ে তারা পালাতে শুরু করে। রুদ্ধশ্বাসে দৌড়তে থাকে গল্প, যেখানে দম নেওয়ার জন্য দাঁড়ানো মানেই মৃত্যু।

লাভ হস্টেল
পরিচালনা: শঙ্কর রমন
অভিনয়: বিক্রান্ত মেসি, সানিয়া মলহোত্র, ববি দেওল
৫.৫/১০

Advertisement

অভিনেতা ও লোকেশন নির্বাচনের জন্য বিশেষ প্রশংসার দাবি রাখে এ ছবি। সেখানেই ছবি তৈরির অর্ধেক কাজ হয়ে গিয়েছে। প্রেমিক-প্রেমিকার নামাঙ্কিত দেওয়ালে, দোতলা বিছানাসমেত সেফ হোম গোড়াতেই ছবির ধূলিধূসর বাস্তব চেহারা ফুটিয়ে তোলে। এর পরে রয়েছে ক্ষতবিক্ষত মুখে দাগরের উপস্থিতি। সে দৃশ্যে এলেই তিন-চারটে লাশ পড়ে। দাগরের চরিত্রায়ন ভয়ঙ্কর। তবে ববিকে ঠিকমতো ব্যবহার করা হয়নি। সংলাপও খুব কম তাঁর মুখে। মেকআপ আর পোশাকেই আশি শতাংশ কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। বাকিটা তিনি অভিনয়ে উতরে দিয়েছেন। বরং এ ছবিতে বেশ সপ্রতিভ সানিয়া। কখনও প্রেমিকার মতো আদুরে, কখনও আবার প্রাণ বাঁচানোর দৌড়ে সে মরিয়া। বিক্রান্তও যথাযথ। বরং অভিনয়ের দিক দিয়ে প্রশংসার দাবি রাখে ছবিতে সানিয়ার ভাইয়ের চরিত্রে যুধবীর আহলাওয়াত। কখনও বাড়ি থেকে পলায়মান দিদিকে ধরে বেদম মারছে সে, কখনও আবার তার সামনে বাইরের কেউ বন্দুক ধরে দিদিকে নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ায় দাঁত-নখ বেরোনো আক্রোশে জ্বলন্ত এই শিশুশিল্পীর অভিব্যক্তি।

তবে এত কিছু করেও যেন শেষরক্ষা হল না। বেশি জোরে দৌড়তে গেলে যেমন হোঁচট খেয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে, এ ছবির ক্ষেত্রেও হয়েছে সেটাই। দ্রুত গতিতে চিত্রনাট্য এমন ছুটিয়েছেন পরিচালক, হঠাৎই যেন ছবি শেষ হয়ে গিয়েছে। বিক্রান্ত-সানিয়ার মাঝের প্রেমও পরিস্ফুট হয়নি দ্রুত লয়ের চিত্রনাট্যে। ফলে একে অপরকে পাওয়ার আর্তি ততটা স্পর্শ করে না দর্শককে। শেষে এসে মনে হয়, শুধুমাত্র চিত্রনাট্যের খাতিরেই তাঁদের অত দৌড়াদৌড়ি।

ছবির স্বল্প পরিধিতে লিঙ্গবৈষম্য, সমলিঙ্গের প্রেমের মতো বিষয় নিয়ে এলেও সেই গল্প বলার জন্য সময় ব্যয় করেননি শঙ্কর। ক্লাইম্যাক্স তৈরি হতেও যেন সময় দেননি তিনি। তার আগেই হঠাৎ দর্শক শেষ দৃশ্যে পৌঁছে যান। গল্পের শেষটা বলে দেওয়ার তাড়াহুড়োয় মাঝের অনেক গল্প বাদ পড়ে যায়। বাস্তবচিত্র তুলে ধরতেই হয়তো পরিচালকের এই সিদ্ধান্ত। কিন্তু সিনেম্যাটিক অভিজ্ঞতার জন্য আর-এক ধাপ এগোনোর দরকার ছিল। শেষে দাগররূপী ববিকে এনে তা কিছুটা ভরাট করার চেষ্টা করলেও আসল শূন্যস্থান পূরণ হয় না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন