Web Series

ছন্নছাড়া উড়ান

আশি-নব্বইয়ের দশক তৈরি করাও এই ছবির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। কিন্তু প্রোডাকশন ডিজ়াইন, ডিটেলিং হতাশ করে।

Advertisement

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২১ ০৪:৫২
Share:

দ্য বিগ বুল
পরিচালক: কুকি গুলাটি
অভিনয়: অভিষেক, নিকিতা, ইলিয়ানা, সোহম, সুপ্রিয়া
৪.৫/১০

Advertisement

একটি মাইলফলক সিরিজ়, যার সুবাদে জেনারেশন জ়েড কথা বলছে নব্বই দশকের স্ক্যাম নিয়ে। আঞ্চলিক ভাষার এক অভিনেতা, যিনি সেই সিরিজ়ের জোরে বলিউডে পরপর কাজ পাচ্ছেন। ‘স্ক্যাম ১৯৯২: দ্য হর্ষদ মেহতা স্টোরি’ সিরিজ়ের অভাবনীয় সাফল্যের পরে, কুকি গুলাটি পরিচালিত এবং অভিষেক বচ্চন অভিনীত ‘দ্য বিগ বুল’-এর ওটিটি রিলিজ় পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ভয় পাওয়ার কারণ সঙ্গত বটে! সিরিজ়ের ধারেকাছেও ছবিটি পৌঁছয়নি এবং স্বতন্ত্র ছবি হিসেবে ভীষণ ছন্নছাড়া। তার অন্যতম প্রধান কারণ, বাস্তবনির্ভর না ফিকশন— গতিপথ স্থির করে উঠতে পারেনি ছবিটি। শুরুতে ‘ডিসক্লেমার’-এ লেখা, ‘‘ছবিটি কিছুটা সত্যি ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত।’’ সত্যি ঘটনা অবলম্বনে ছবি হলেও, সেখানে সিনেম্যাটিক লাইসেন্স থাকবে, তা প্রত্যাশিত। কিন্তু বাস্তবনির্ভর হয়েও পুরোপুরি ‘বাস্তব’ হয়ে ওঠায় ছবির যে অনীহা, তার কারণ বোঝা কষ্টকর। দায় কি রাজনৈতিক চাপ না ‘স্ক্যাম...’ সিরিজ়ের সঙ্গে তুলনা এড়ানো?

কিছু বিষয় সিরিজ় বানানোর জন্য আদর্শ। ভারতীয় স্টক মার্কেটের বিগ বুল হর্ষদ মেহতার জীবনে তেমন উপাদান ভূরি ভূরি। কিন্তু দশটি এপিসোডের সিরিজ়ে যা দেখানো সম্ভব, ছবিতে তা হয় না। আড়াই ঘণ্টার ‘দ্য বিগ বুল’-এ ঘটনা তাই সাযুজ্যহীন। কম সময়ে বড় গল্প বলার জন্য যে বাঁধুনি দরকার, কুকি এবং অর্জুন ধওয়নের চিত্রনাট্যে তার কোনও লক্ষণ ছিল না। জাম্প-কাট শটের মধ্য দিয়ে কয়েকটি ঘটনা জুড়ে দেওয়া হয়েছে মাত্র!

Advertisement

হর্ষদ ছবিতে হেমন্ত শাহ (অভিষেক বচ্চন)। দাপুটে সাংবাদিক সুচিত্রা দালাল (যিনি সেই স্ক্যাম সংবাদপত্রে ফাঁস করেছিলেন এবং পরে হর্ষদ মেহতাকে নিয়ে বই লিখেছিলেন) ছবিতে মীরা রাও (ইলিয়ানা ডি’ক্রুজ়) নামে। রাম জেঠমলানী (যিনি হর্ষদের আইনজীবী এবং হর্ষদের হয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলেন) ছবিতে অশোক মিরচন্দানী (রাম কপূর)। কোনও চরিত্রেরই বাস্তব নাম ব্যবহার করা হয়নি। স্টক মার্কেট, বুল-বেয়ার থিয়োরি, বিআর (ব্যাঙ্ক রিসিট),
সেই সময়ের ব্যাঙ্কিং সিস্টেম... কোনওটাই ভাত-ডাল খাওয়ার মতো বিষয় নয়। এগুলি প্রতিষ্ঠা করার জন্য ব্যাখ্যা প্রয়োজন। বিশেষত, হর্ষদ মেহতার ধূমকেতুর মতো উত্থান ভারতের তৎকালীন অর্থনীতি এবং রাজনীতির সঙ্গে গভীর ভাবে সম্পর্কিত। কিন্তু ছবিতে হেমন্ত কী ভাবেই বা স্টক মার্কেটে এল, কী ভাবেই বা সেই মার্কেটের বাজিগর হয়ে উঠল, তা বোঝা যায় না। ঝটিকা সফরে সব হয়ে যায়। ব্যাকগ্রাউন্ডে শুধু বাজতে থাকে ‘আই অ্যাম দ্য বিগ বুল’ র‌্যাপ!

আশি-নব্বইয়ের দশক তৈরি করাও এই ছবির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। কিন্তু প্রোডাকশন ডিজ়াইন, ডিটেলিং হতাশ করে। ওই সময়ের সংবাদপত্রের অফিস কি ওরকম ঝাঁ চকচকে হত? একটি ম্যাগাজ়িনের প্রচ্ছদে ইংরেজি শব্দের বানান ভুল। পরে ওই ম্যাগাজ়িনেই ঠিক বানান দেখা যায়। এই ধরনের ছবিতে একটি রোম্যান্টিক গান, হেমন্তের প্রেমপর্ব না দেখালে প্রযোজকদের মন ভরছিল না। আসলে হেমন্তের চরিত্রে যে অভিষেক বচ্চন!

কোনও স্বল্প চেনা অভিনেতার এ ধরনের বাস্তব চরিত্র করার সুবিধে রয়েছে। তাঁকে সহজেই ওই চরিত্র বলে ভেবে নেওয়া যায়। প্রতীক গাঁধীর অভিনয় দক্ষতার সঙ্গে সেই সুবিধেও ছিল। কিন্তু অভিষেকের তা নেই। তাই হেমন্ত শাহ হয়ে উঠতে তিনি বদলেছেন হাঁটাচলা, কিছুটা কথা বলার ভঙ্গি। তবে তিনি চেষ্টা করেছেন। চিত্রনাট্য তাঁকে সাহায্য করেনি। হেমন্তের স্ত্রীর চরিত্রে নবাগতা নিকিতা দত্তের জড়তা বোঝা যায়। মীরার চরিত্রে ইলিয়ানা মোটামুটি। অভিষেক ছাড়া নজর কাড়েন সোহম শাহ (হেমন্তের ভাইয়ের চরিত্রে)। সুপ্রিয়া পাঠক, মহেশ মঞ্জরেকর, সৌরভ শুক্লর মতো অভিনেতাদের নেওয়া হলেও, চরিত্রগুলিই ঠিকমতো প্রতিষ্ঠা করা হয়নি।

বিতর্কিত হর্ষদ মেহতা ‘স্ক্যামস্টার’ না মধ্যবিত্তের ‘রবিনহুড’ ছিলেন, তা নিয়ে গত কয়েক দশকের মতো আগামী দিনেও লেখালিখি হবে। কিন্তু ‘দ্য বিগ বুল’ মানুষের মনে কতটা থাকবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তার দায় অবশ্য ‘স্ক্যাম...’ সিরিজ়ের নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন