Netflix

সিরিয়াস মেন (ওয়েব মুভি): স্বপ্ন দেখার অধিকার

সুধীর মিশ্রের ছবি নেটফ্লিক্স অরিজিন্যাল ফিল্ম হিসেবে মুক্তি পেল এমন এক সময়ে, যখন ‘উচ্চবর্ণে’র ধর্ষণে এক ‘দলিত’ কন্যার মৃত্যুর বিচার চেয়ে উত্তাল সারা দেশ।

Advertisement

সায়নী ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২০ ০০:১৮
Share:

সমাজের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে চায় আয়ান মণি (নওয়াজ়উদ্দিন)

দীর্ঘ দিন পরে সুধীর মিশ্রের ছবি নেটফ্লিক্স অরিজিন্যাল ফিল্ম হিসেবে মুক্তি পেল এমন এক সময়ে, যখন ‘উচ্চবর্ণে’র ধর্ষণে এক ‘দলিত’ কন্যার মৃত্যুর বিচার চেয়ে উত্তাল সারা দেশ। এমন এক দিনে, যে দিন সেই মানুষটির জন্মদিন, যিনি দলিতদের ‘হরিজন’ বলতে শিখিয়েছিলেন। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া এক ‘শূদ্র’ কী করতে পারে, কী করতে চায়— তা নিয়ে চাবুকের মতো এক স্যাটায়ার তৈরি করেছেন পরিচালক। শুধু জাতপাত নয়, পেরেন্টিং, শিক্ষাব্যবস্থা, বিজ্ঞানের আড়ালে চলা বুজরুকি ও ব্যবসা, পায়রার খোপের মতো ঘুপচি ঘর ভেঙে হাই-রাইজ়ের স্বপ্ন দেখানোর রাজনীতি— সমাজ ও জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ধরে যাওয়া ঘুণগুলোর সামনে ক্যামেরা ধরেছেন সুধীর। এমনিতে খুব কম পরিচালকই পারেন তাঁর মতো করে মুম্বই ও তার ‘কমন ম্যান’দের জীবন্ত করে তুলতে। ‘জানে ভি দো ইয়ারো’র গল্প থেকেই তার প্রমাণ পেয়ে এসেছেন দর্শক। এখানে তার সঙ্গে যোগ হয়েছে নওয়াজ়উদ্দিন সিদ্দিকির মাস্টারস্ট্রোক।

Advertisement

ছেলে আদিকে (অক্ষত দাস) ‘জিনিয়াস’ হিসেবে প্রজেক্ট করে সমাজের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে চায় আয়ান মণি (নওয়াজ়উদ্দিন)। অফিসে নিত্যদিন পদমর্যাদা ও জাতে ‘উঁচু’ বসের (নাসার) কাছে লাঞ্ছিত হতে হয় তাকে। যে বস আবার ভুয়ো রিসার্চ প্রজেক্ট করে প্রশাসনের কাছ থেকে ফান্ড আদায়ে ব্যস্ত। ‘জিনিয়াস’ আদিকে সামনে রেখে তার বসতির বাসিন্দাদের ঝকঝকে বহুতলের স্বপ্ন দেখায় স্থানীয় দলিত নেতা (সঞ্জয় নারভেকর) ও তার কর্পোরেট কন্যা (শ্বেতা বসু প্রসাদ)। বাবার হাত ধরে যে ইঁদুর দৌড়ে নেমেছে আদি, তার শেষ কোথায়?

সিরিয়াস মেন (ওয়েব মুভি) পরিচালনা: সুধীর মিশ্র অভিনয়: নওয়াজ়উদ্দিন, অক্ষত, ইন্দিরা, নাসার, শ্বেতা ৭/১০

Advertisement

দশ বছর আগে সাংবাদিক মনু জোসেফের লেখা বইকে আরও প্রাসঙ্গিক করে তুলেছেন ছবির কাহিনিকার ভাবেশ মণ্ডলিয়া। ফ্রেমে প্রত্যাশিত ভাবে বি আর অম্বেডকরকে দেখানোর পুনরাবৃত্তি ছাড়া এ ছবিতে মনে রাখার মতো দৃশ্য রয়েছে অনেক। এক জায়গায় আয়ান তার স্ত্রী ওজাকে (ইন্দিরা তিওয়ারি) ব্যাখ্যা করে, কী ভাবে একটা ‘সব পেয়েছি’ প্রজন্মের নেপথ্যে তার আগের তিন পুরুষের অবদান থাকে। নিজেকে ‘টু জি’ বলে আয়ান, সে স্বপ্ন দেখে ‘ফোর জি’ ভবিষ্যতের। ছবির একাধিক জায়গায় দেখানো হয়েছে, নিম্নবর্ণের ট্রাম্পকার্ডে নয়, ভিক্টিম এগিয়ে যেতে চেষ্টা করে বুদ্ধির জোরে, দূরদর্শিতায়। যদিও তা অসদুপায়ে। ক্লাইম্যাক্সে যখন আয়ান ভেঙে পড়ে নিজের কীর্তির নেপথ্যকাহিনি শোনায় তার বসকে, সেটি অকৃত্রিম নাকি শুধুই কার্যসিদ্ধির স্বার্থে, তা মুহূর্তের জন্য ধন্দে ফেলে দেয়।

শুধু কাহিনি নয়, এ ছবি পারফরম্যান্সেরও। নওয়াজ় যদি ক্যাপ্টেন হন, ইন্দিরা, অক্ষত-সহ প্রায় প্রত্যেকেই হাল ধরেছেন ছবিকে মসৃণ ভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে। শুরু ও শেষে ব্যবহৃত গান ছবির মেজাজ তৈরি করে দিয়ে যায়। ভাল ছবি দেখার আমেজও ধরে রাখে বহুক্ষণ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন