সৈকত মিত্র কেন কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে কৃতজ্ঞ? ছবি: ফেসবুক।
মনোবীণা মিত্র, গায়ক শ্যামল মিত্রের মেয়ে। মানসিক অসুস্থতার কারণে দীর্ঘ দিন ধরে লোকচক্ষুর অন্তরালে। ভালবেসে বিয়ে হয়েছিল অভিনেতা কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। সম্প্রতি কৌশিক এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তিনি না থাকলেও তাঁর প্রথম স্ত্রীর চিকিৎসার অভাব হবে না। তিনি তেমনই ব্যবস্থা করে যাবেন। এ-ও জানান, মানসিক রোগের ইতিহাস প্রয়াত গায়কের পরিবারে রয়েছে।
এ ব্যাপারে কী মত শ্যামল মিত্রের গায়কপুত্র সৈকত মিত্রের? প্রশ্ন করেছিল আনন্দবাজার ডট কম।
দিদির মানসিক সমস্যার কথা অস্বীকার করেননি সৈকত। এ-ও বলেছেন, “আমাদের পরিবারে মানসিক সমস্যার তেমন কোনও ইতিহাস নেই। হ্যাঁ, দাদার মধ্যে হঠাৎ এই সমস্যা দেখা দিয়েছিল। সে সব জেনেই কৌশিকদা দিদিকে বিয়ে করেছিলেন। ওঁদের মধ্যে দীর্ঘ দিনের ভালবাসা ছিল।”
বিয়ের পরেও মনোবীণার মধ্যে কোনও অসুস্থতা ছিল না। দিব্য সংসার করছিলেন। সৈকত তাঁর গানজীবন নিয়ে ব্যস্ত। আচমকা অসুস্থতা বাসা বাঁধে তাঁর দিদির মনে। তিনি কিছুতেই একা থাকতে চান না! একা থাকতে হলে দরজা-জানলা বন্ধ করে দেন। যেন ভয়ঙ্কর কিছু ঘটবে তাঁর সঙ্গে! সারা ক্ষণ আতঙ্কিত তিনি। গায়কের কথায়, “নিশ্চয়ই এমন কিছু ঘটেছিল, যার ছাপ পড়েছিল দিদির সংবেদনশীল মনে। তা-ই নিয়ে কাটাছেঁড়া করতে আর মন চায় না।”
একটা সময়ের পর রোগের প্রকোপ বাড়লে স্বাভাবিক ভাবেই মনোবীণা ফিরে আসেন সৈকতদের বাড়িতে। “দাদা আর দিদির জন্য আলাদা একটা ফ্ল্যাট কিনেছিলাম। আমাদের ফ্ল্যাটের পাশেই। ওরা খুব ভাল ছিলেন। দাদা-দিদি মিলে রোজ এ দিক-সে দিক হাঁটতে বেরোতেন। আমাদের সঙ্গে রোজ খাওয়া-দাওয়া করতেন।” সৈকতের দাদার মৃত্যুর পর আবার একাকিত্ব ঘিরে ধরে মনোবীণাকে। ফের সমস্যা দেখা দেয় নতুন করে।
গায়ক তখন দেশের বাইরে, গানের অনুষ্ঠানে। মনোবীণা একা থাকতে না পেরে পৌঁছে গিয়েছিলেন শ্যামল মিত্রের পুরনো পাড়ায়। পাড়ার লোকেরা তাঁকে বুঝিয়ে বাড়ি ফিরিয়ে দিয়ে যান। দ্বিতীয় বার একই কাণ্ড। প্রায় দু’সপ্তাহ নিখোঁজ থাকার পর একটি মানসিক হাসপাতালে খোঁজ মেলে মনোবীণার। “তার পরেই কৌশিকদা ঠিক করেন, দিদিকে মানসিক রোগীদের আবাসনে রাখা দরকার। একা ওকে কোনওমতেই ছাড়া যাবে না। সে দিন থেকেই কৌশিকদার তত্ত্বাবধানে দিদি মানসিক রোগীদের আবাসনে আছেন। ভাল আছেন তিনি। নিয়মিত চিকিৎসা চলছে। আগের তুলনায় অনেক হাসিখুশি।”
শুরুতে দিদির প্রাক্তন অভিনেতা-স্বামীর সঙ্গে চিকিৎসার খরচ বহন করতেন সৈকত। “যতই হোক, দিদি তো মিত্রবাড়ির মেয়ে।” পরে কৌশিক তাঁকে বলেন, তিনিই সব দায়িত্ব বহন করতে চান। এই নিয়ে তাঁর কোনও সমস্যা নেই। সেই থেকে মনোবীণার সব দায় একাই পালন করছেন কৌশিক।