ফিরে দেখা: ‘সিরাজ: আ রোমান্স অব ইন্ডিয়া’র একটি দৃশ্য। নিজস্ব চিত্র
তাজমহল নিয়ে সাম্প্রতিক নানা কথার কচকচির মধ্যেই শহরের এক প্রেক্ষাগৃহে দেখা যাবে তাজকেন্দ্রিক এক কাহিনি। অনাথ সেলিমার প্রেম, আনুগত্যের গল্প। সেই সেলিমাই পরে হবেন ভারতসম্রা়জ্ঞী মুমতাজ মহল। তাঁর মৃত্যুর পর শাহজাহান সেলিমার অন্ধ ভাইকে দেবেন তাজমহল তৈরির দায়িত্ব।
আর প্রেক্ষাগৃহে তখন অনুষ্কা শঙ্কর ছড়িয়ে দেবেন সেতারের মূর্ছনা।
ব্রিটিশ কাউন্সিলের উদ্যোগে শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় কলামন্দিরে দেখা যাবে ‘সিরাজ: আ রোমান্স অব ইন্ডিয়া’। ছবিটি প্রথম দেখানো হয়েছিল ১৯২৮ সালে। তখন যুগ নির্বাক সিনেমার। সময়ের সঙ্গে হারিয়ে গিয়েছিল বেশির ভাগ প্রতিলিপিই। ছবির আসল নেগেটিভ ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের (বিএফআই) হাতে পৌঁছয় ১৯৪২-এ। তখনই সেটি খারাপ হতে শুরু করেছিল। তাই নেগেটিভের একটি প্রতিলিপি করে রাখা হয়। ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের প্রচেষ্টায় পুনরুদ্ধার করা হয়েছে ছবিটি। ইতিমধ্যেই লন্ডনের বার্বিকান থিয়েটারে দেখানো হয়েছে সেটি। এ বার পালা ভারতের।
বিএফআই আর্কাইভের প্রধান কিউরেটর রবিন বেকার জানালেন, এখন সারা বিশ্বে ছবিটির যে ক’টি প্রতিলিপি আছে, তার সবগুলি বিএফআই-এর সংগ্রহ থেকেই নেওয়া। আসল নেগেটিভটি তো বটেই, খারাপ হতে শুরু করেছিল প্রতিলিপিটিও। প্রথমে তাঁরা দু’টি নেগেটিভের মধ্যে থেকে প্রতিটি দৃশ্য ধরে তুলনামূলক ভালটি বাছাই করেন। সেগুলি স্ক্যান করা হয়। তার পরেই শুরু হয় ছবির ডিজিটাল পুনরুদ্ধারের কাজ। ধুলো ও ঘষা দাগ তোলা এবং আলো-অন্ধকারের সমতা ফেরানোর কাজ চলে প্রায় ১৮ মাস ধরে। এ বছরের সেপ্টেম্বরে তা শেষ হয়।
ভারতে ব্রিটিশ কাউন্সিলের ডিরেক্টর অ্যালান জেমেল জানাচ্ছেন, ২০১৭ সালটি ‘ইউ কে ইন্ডিয়া ইয়ার অব কালচার’ হিসেবে পালন করছেন তাঁরা। প্রায় ৯০ বছর আগে ভারতীয়, ও ব্রিটিশ সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের নিদর্শন ‘সিরাজ’। লন্ডনে ছবিটির পরিকল্পনা করেন অভিনেতা-প্রযোজক হিমাংশু রায় এবং লেখক নিরঞ্জন পাল। ভারতীয় অভিনেতাদের নিয়ে আগরায় শ্যুটিং হয়েছিল ছবিটির। অন্য কলাকুশলীরা ছিলেন ভারতীয় এবং ইউরোপীয়। প্রযোজনা করে একটি ব্রিটিশ সংস্থা। আর পরিচালক ফ্রান্জ ওস্টেন ছিলেন জার্মান। অ্যালান জানাচ্ছেন, এমন আন্তর্জাতিক একটি ছবি নতুন করে দর্শকদের সামনে হাজির করতে পেরে তাঁরা আনন্দিত।
ছবিটি প্রথম দেখানোর সময়ে কী সঙ্গীতের ব্যবহার হয়েছিল তা জানা যায়নি। ভারতীয় রাগ সঙ্গীতের সঙ্গে পাশ্চাত্য বাদ্যযন্ত্রের ফিউশনের জন্য অনুষ্কা পরিচিত। রবিন জানাচ্ছেন, তাই অনুষ্কাকে অনুরোধ করা হয় নতুন আবহসঙ্গীত তৈরির। প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের মিশেলে অনুষ্কার সৃষ্টি যেন ছবির আন্তর্জাতিক পরিচয়কেই কুর্নিশ জানায়।
ভারতীয় নির্বাক ছবিগুলির মধ্যে অল্প কয়েকটিই এখনও টিকে রয়েছে। তাই চলচ্চিত্রমোদীদের কাছে ‘সিরাজ’ দেখার অভিজ্ঞতা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে মনে করেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের চলচ্চিত্র বিদ্যার শিক্ষক মৈনাক বিশ্বাস।
হেমন্ত সন্ধ্যায় আধুনিক দর্শককে হাতছানি দিতে হাজির হচ্ছে হারিয়ে যাওয়া সময়ের এই রোম্যান্স।