নস্ট্যালজিয়া দর্শকের, আমাদের নয়

১৯ বছর পর পর্দায় একসঙ্গে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অপর্ণা সেন এবং ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ১৯ বছর পর পর্দায় একসঙ্গে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অপর্ণা সেন এবং ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত

Advertisement

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৯ ০০:১৮
Share:

সৌমিত্র-অপর্ণা।

অনেক দিন পরে সুমন ঘোষের ‘বসু পরিবার’ দিয়ে একফ্রেমে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়-অপর্ণা সেন। এই দুই অভিনেতা পর্দায় আসা মানে ‘সমাপ্তি’, ‘বসন্ত বিলাপ’, ‘ছুটির ফাঁদে’র নস্ট্যালজিয়া।

Advertisement

‘বসু পরিবার’-এর কাস্টিং বিরাট। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, যিশু সেনগুপ্ত... কিন্তু তার মাঝেও এ ছবির ইউএসপি, সৌমিত্র-অপর্ণার পর্দায় ফিরে আসা। পরিচালক সুমন বলছিলেন, ‘‘চিত্রনাট্য লেখার সময় থেকেই ওঁদের দু’জনের কথা আমার ভাবনায় ছিল। সৌমিত্রবাবু আমার বাবার মতো। ছবির উৎস থেকেই উনি ছিলেন। রিনাদির কাছে আমি চিত্রনাট্য পাঠিয়েছিলাম। উনি রাজি না হলে হয়তো ছবিটা করতাম না।’’

সেই পরিস্থিতি আসেনি। কারণ অপর্ণা জানালেন, জেমস জয়েসের ‘ডেড’ উপন্যাস তিনি পড়েছিলেন। তার উপরে সুমনের চিত্রনাট্যও তাঁর ভাল লেগেছিল। আর এত দিন পরে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করে কেমন লাগল? ‘‘আমাদের দু’জনের নস্ট্যালজিয়া নিয়ে সকলে অনেক কথা বলছে ঠিকই, কিন্তু আমার কাছে সেটা তেমন কোনও বিষয় নয়। নস্ট্যালজিয়া দর্শকের, আমাদের নয়। সৌমিত্র ভাল অভিনেতা, ওর সঙ্গে কাজ করতে আমার সব সময়েই ভাল লাগে। বাকি অভিনেতারাও খুব ভাল।’’

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

নিজেদের নিয়ে সৌমিত্রকেও তেমন আবেগতাড়িত দেখাল না। তাঁর কথায়, ‘‘অপর্ণা দক্ষ অভিনেত্রী। ওর সঙ্গে কাজ করতে ভালই লাগে। তার মানে যে আমরা সব সময়ে পুরনো দিনের কথা বলি, তা নয়।’’

সৌমিত্র-অপর্ণার রসায়ন প্রসঙ্গে পরিচালকের মত অবশ্য খানিক আলাদা। তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে তিনি দু’জনকে নিরীক্ষণ করেছেন। সুমন বলছিলেন, ‘‘ওঁদের দু’জনের অভিনয় নিয়ে তো কিছু বলার নেই। সেটের কেমিস্ট্রিও খুব সুন্দর। দু’জনে একই ধরনের মানুষ। বই শেয়ার করেন। একটা ইন্টেলেকচুয়াল কানেকশন আছে। পড়াশোনা জানা, শিক্ষিত বাঙালির সংখ্যা ক্রমশ কমে যাচ্ছে। যে কারণে ওঁদের দু’জনকে দেখে ভাল লাগে।’’

একই কথা বলছিলেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। ‘‘এঁদের কেমিস্ট্রিটা দেখার মতো! সেটে রিনাদি জীবনানন্দ দাশ বলছেন, তো সৌমিত্রজেঠু রবীন্দ্রনাথ। এঁদের আড্ডা শুনেও অনেক কিছু শেখা যায়।’’ এই ছবিতে সৌমিত্র-অপর্ণার মেয়ের চরিত্র করছেন ঋতুপর্ণা। নায়িকা ডেবিউ ছবিতে অপর্ণার সঙ্গে কাজ করেছিলেন। সেখানে তাঁরা শাশুড়ি-বৌমা ছিলেন। ‘পারমিতার একদিন’-এও তাই। ‘‘আমার প্রথম ছবি ‘শ্বেত পাথরের থালা’ রিনাদিরই ছবি ছিল। কিন্তু ‘পারমিতার একদিন’ আবার আমার। যেখানে রিনাদি নিজেই পরিচালক। ওই ছবিতেও রিনাদি আর সৌমিত্রজেঠুর সঙ্গে কাজ করার একটা অসাধারণ অভিজ্ঞতা রয়েছে। ‘বসু পরিবার’-এর অভিজ্ঞতা আবার সম্পূর্ণ আলাদা। মা-মেয়ের একটা অন্য ধরনের সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। মা এমন অনেক কথা মেয়েকে বলে, যেটা হয়তো সে তার স্বামীকেও বলতে পারে না।’’

সৌমিত্রর সঙ্গে আগে বেশ কয়েক বার কাজ করেছেন সুমন। তাঁদের ‘পদক্ষেপ’ জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছে। অভিনেতাও উৎসাহী পরিচালকের সঙ্গে কাজ করে। তাঁর কথায়, ‘‘যে কয়েক জন পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে ভাল লাগে তার মধ্যে সুমন এক জন। ওর বুদ্ধির উপরে আমার শ্রদ্ধা রয়েছে। নয়তো ছবি করা আমার পেশা, তাই করি। ভাল, মন্দ, খারাপ সব রকমের ছবিই করি।’’ খারাপ ছবিতে কাজ করেন, এটা বলছেন? ‘‘হ্যাঁ বলছি। অনেক সময়ে কাজ করতে গিয়ে বুঝি, কখনও পরে বুঝি। অভিনয় আমার পেশা। না করলে খাব কী?’’ নিজের কাজ নিয়ে এতটাই স্পষ্টবাদী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন